৭ মুসলিম দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা

Slider সারাবিশ্ব

51234_f2

 

ঢাকা; সাতটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে শরণার্থী প্রবেশ নিষিদ্ধ করার নির্বাহী আদেশে সই করেছেন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। এ ৭টি দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে শরণার্থী প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সিরিয়াও। তবে দেশটির খ্রিষ্টানরা হয়তো এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বেন না। নির্বাহী আদেশের আওতায় কোনো উগ্রপন্থি সন্ত্রাসী যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারবে না। কিন্তু কার্যত এটি যুক্তরাষ্ট্রে যেকোনো শরণার্থীর প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা।
নিষেধাজ্ঞার আওতায় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এই সাতটি দেশ হলো সিরিয়া, ইরাক, ইরান, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান ও ইয়েমেন। ৩০ দিন এ দেশগুলোর কাউকেই কোনো ভিসা দেয়া হবে না। এ দেশগুলো কমবেশি সংঘাত ও সন্ত্রাসবাদ আক্রান্ত। সবচেয়ে বেশি সংঘাত কবলিত দেশ সিরিয়া থেকে শরণার্থীদের প্রবেশের ওপর অনির্দিষ্টকালের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। বাকি ছয়টি দেশের শরণার্থীদের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ ১২০ দিন।
ট্রাম্প বলেন, উগ্রপন্থি ইসলামি সন্ত্রাসবাদীদের আমেরিকা থেকে দূরে রাখতে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। আমরা তাদের এখানে চাই না। নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষে ‘এক্সট্রিম ভেটিং’ ও ‘রিলিজিয়াস টেস্ট’ আরোপ করা হবে এই দেশগুলোর অভিবাসীদের ওপর। তবে এ ব্যাপারে বিস্তারিত বলেননি তিনি। প্রেসিডেন্ট সবাইকে সতর্ক করে দেন। বলেন, ৯/১১ এর মতো সন্ত্রাসী হামলার কথা আমাদের কারো ভুলে যাওয়া উচিত নয়। পেন্টাগনে যারা জীবন দিয়েছেন তাদের কথা ভুলে যাওয়া উচিত নয়। বিদেশে আমাদের সেনারা যে কঠিন হুমকির মধ্যে রয়েছেন আমরা তাও চাই না। আমরা শুধু তাদের কথা স্মরণ করতে চাই যারা আমাদের দেশকে ও দেশের জনগণকে সমর্থন করছেন এবং ভালোবাসছেন।
তবে সিরিয়ার খ্রিষ্টানদের বেলায় এক্ষেত্রে ছাড় দেয়া হবে। হোমল্যান্ড সিকিউরিটির চেয়ারম্যান কংগ্রেসম্যান মাইকেল ম্যাকল বলেন, সিরিয়ার মুসলিমদের তুলনায় খ্রিষ্টানরা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য হুমকি নয়। তার ভাষ্য, ‘দেখে মনে হচ্ছে তারা তালিকার শীর্ষে থাকবে।’ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প খ্রিশ্চিয়ান ব্রডকাস্টিং নেটওয়ার্ক (সিবিএন)কে সাক্ষাৎকারে পরিষ্কার করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে শরণার্থী মর্যাদা পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন সিরিয়ার খ্রিষ্টানরা। তার এ সাক্ষাৎকার রোববার সম্প্রচারের কথা রয়েছে। এতে তিনি বলেছেন, (সিরিয়ায়) আপনি যদি একজন মুসলিম হন তাহলে আপনার যুক্তরাষ্ট্রে আসা খুব সহজ ছিল। কিন্তু যদি আপনি একজন খ্রিষ্টান হন তাহলে আপনার জন্য এত দিন তা ছিল কঠিন। খ্রিষ্টানদের জন্য এটা ছিল একেবারেই অসম্ভব। এর কারণ হিসেবে যা দেখানো হয়েছে তা পুরো অন্যায্য। সেখানে শিরশ্ছেদ করা হচ্ছে। বেশি করা হচ্ছে খ্রিষ্টানদের। এখন তিনি যে নির্বাহী আদেশে সই করেছেন তাতে মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার ৭টি দেশ থেকে মুসলিমদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে কোনো ভ্রমণ ভিসাও দেয়া হবে না। পিউ রিসার্স সেন্টারের মতে, গত বছর বিভিন্ন দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যে পরিমাণ মুসলিম ও খ্রিষ্টান প্রবেশ করেছেন তাদের সংখ্যা প্রায় সমান। ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছেন ৩৭ হাজার ৫২১ জন খ্রিষ্টান শরণার্থী। এ সময়ে মুসলিম শরণার্থীর সংখ্যা ৩৮ হাজার ৯০১।
অনেকেই এই নিষেধাজ্ঞাকে বৈষম্যমূলক মনে করছেন। এই নির্বাহী আদেশটি স্বাক্ষর করা হয়েছে আন্তর্জাতিক হলোকাস্ট স্মরণ দিবসে। নাৎসি জার্মানি যখন ষাট লাখেরও বেশি ইহুদিকে হত্যা করে হলোকাস্টে তখন যুক্তরাষ্ট্র হাজার হাজার ইহুদিকে আশ্রয় দিতে চায়নি। অনেকের মতে, যুক্তরাষ্ট্র মুসলিম শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার সুযোগ না দিয়ে যেন ইতিহাসেরই পুনরাবৃত্তি করলো।
উল্লেখ্য, ডনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারণাকালে গত ডিসেম্বরে খুব কড়া বার্তা দেন মুসলিমদের। তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিমদের প্রবেশ পুরোপুরি ও সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেবেন। ওদিকে তিনি মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের যে নির্বাহী আদেশে সই করেছেন তাতে সরকারি সংস্থাগুলোকে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *