সার্কের কার্যকারিতা শেষ হয়ে যায়নি

Slider সারাদেশ

49728_hasina

 

ঢাকা; প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সাউথ এশিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর রিজিওনাল কো-অপারেশন (সার্ক)-এর কার্যকারিতা হারিয়ে যায়নি। এই আঞ্চলিক জোট ‘খুব ভালোভাবেই সক্রিয় আছে’। তিনি বলেন, আমি মনে করি দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য এর মাধ্যমে আরো অনেক কাজ করার সুযোগ রয়েছে। এই অঞ্চলের জনগণের আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য আঞ্চলিক সহযোগিতার প্রয়োজন রয়েছে। সার্কের কার্যকারিতা এখনো শেষ হয়ে যায়নি। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কংগ্রেস সেন্টারে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরামের ৪৭তম বার্ষিক সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়ায় হারনিসিং রিজিওনাল কো-অপারেশনবিষয়ক একটি ইন্টারেক্টিভ সেশনে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন। এই ইন্টারেক্টিভ সেশনে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী রেনিল উইক্রিমিসিঙ্গী, ভারতের বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী নির্মলা সীতারামান ও সার্কভুক্ত বিভিন্ন দেশের জনপ্রতিনিধি এবং সুশীল সমাজের সদস্য যোগ দেন। প্রধানমন্ত্রী এই অঞ্চলের প্রধান শত্রু হিসেবে দারিদ্র্যকে চিহ্নিত করে বলেন, আমরা কিভাবে দারিদ্র্য নির্মূল করতে পারি সেদিকেই আমাদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া উচিত। তিনি বলেন, দারিদ্র্যবিমোচনে সার্কভুক্ত দেশগুলোকে ব্যবসা-বাণিজ্য জোরদার করতে হবে এবং মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ বাড়াতে হবে।
তিনি বলেন, এ জন্য বিবিআইএন, বিসিআইএম-ইসি ও বিমসটেক ফোরাম প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যকে গতিশীল করতে সাফটা শক্তিশালী হচ্ছে। বৃহত্তর পরিসরে দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্গে চীনকে একীভূত করার জন্য বিসিআইএম-ইসি ফোরাম গঠন করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ অঞ্চলে টেলিযোগাযোগ উন্নয়নের জন্য কক্ষপথে একটি সার্ক স্যাটেলাইট চালু করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে বাংলাদেশে বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিকদের ফাঁসি দেয়া হয়েছে- এ সংক্রান্ত পাকিস্তানের সুশীল সমাজের এক প্রতিনিধির প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যাদের আপনি বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিক বলে সম্বোধন করছেন, তারা সকলেই ১৯৭১ সালে অপরাধ সংগঠনের সময়ে নবীন ছিলেন এবং তারাই এই গণহত্যা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা সে সময় জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড, ধর্ষণ, ঘরবাড়ি ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগে সম্পৃক্ত ছিলেন। এসব অপরাধেই তাদের দেশের প্রচলিত আইনে বিচার এবং দণ্ড প্রদান করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রে নতুন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর তাদের বিনিয়োগ ফিরিয়ে নেয়ার সম্ভাবনা সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এক দেশ থেকে বিনিয়োগ অন্যত্র সরিয়ে নেয়াটা কোনো অংশেই সহজ কাজ নয়। এ সময় দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে জনসম্পদে পরিণত করতে সরকারের উদ্যোগে গৃহীত বিভিন্ন প্রকার প্রশিক্ষণ কর্মসূচির কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাত মোকাবিলা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার ৪শ’ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেছে। এছাড়াও জলবায়ু সম্পর্কিত অভিযোজন মোকাবিলায় ১৩৪টি অ্যাকশন প্ল্যান গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাতের জন্য দায়ী উন্নত বিশ্বের দেশগুলোকে জলবায়ু ঝুঁকির মুখে থাকা দেশগুলোর সাহায্যে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। বাংলাদেশে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে পরিবেশের ওপর বিরূপ কোনো প্রভাব পড়বে কিনা-এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দূষণকে সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখার জন্যই এই কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে উন্নততর এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। ২০২১ সাল নাগাদ আমাদের সরকারের লক্ষ্য অনুযায়ী বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার জন্য আমাদের ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার প্রয়োজন। আর এই পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লাকে ব্যবহার করতেই হবে। তিনি বলেন, সরকার নবায়নযোগ্য জ্বালানির সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনে পরামাণুভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণেরও উদ্যোগ নিয়েছে। পাশাপাশি আমাদের উৎপাদন বৃদ্ধিতে কয়লার ব্যবহারও বাড়াতে হবে।
তৈরি পোশাক শিল্পের কর্মপরিবেশ নিশ্চিতে প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত: এদিকে ডাভোসের কংগ্রেস সেন্টারে ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরামের ৪৭তম বার্ষিক সভার ‘শেপিং এ নিউ ওয়াটার ইকনোমি’ শীর্ষক এক কর্মশালায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তৈরি  পোশাক শিল্পে কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে তার সরকার দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি বলেন, আমাদের অর্থনীতিতে তৈরি  পোশাক ও বস্ত্রশিল্পের অবদান বিশাল। এই শিল্পে শ্রমিক অধিকার, কর্মস্থলের নিরাপত্তা ও পরিবেশগত মানসহ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার ব্যাপারে আমরা দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বেতন কাঠামো, কর্মস্থলের নিরাপত্তা, রীতিনীতি এবং শিল্পখাতে সহনশীল সম্পর্কের  ক্ষেত্রে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প উচ্চতর মান অর্জন করেছে। তিনি বলেন, মূল বেতন ৭৭ শতাংশ বৃদ্ধি  পেয়েছে। গ্লোবাল ব্র্যান্ড এবং রিটেইলারদের সুপারিশের ভিত্তিতে ৩ হাজার ৭৮০টি কারখানার সবগুলোর সমীক্ষা শেষ হয়েছে। ‘ওয়ার্ল্ড রিসার্স ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট এবং প্রধান নির্বাহী এন্ড্রু স্টিয়ার-এর সঞ্চালনায় এই কর্মশালায় ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরামে  যোগদানকারী বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা অংশ নেন। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের বৃহত্তম  তৈরি পোশাক ও বস্ত্র রপ্তানিকারক দেশ। এই খাতে ৪৫ লাখ শ্রমিক কর্মরত আছেন এবং তাদের ৮০ শতাংশই নারী। আমাদের মোট রপ্তানির ৮৩ শতাংশই এই শিল্পখাতের। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কারখানাগুলো বর্তমানে গ্লোবাল ব্র্যান্ড ও রিটেইলারদের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। প্রত্যেকটি কারখানায় পেশাগত নিরাপত্তা কমিটি রয়েছে, যেখানে শ্রমিক ও কর্মচারীরা একসঙ্গে কাজ করছে। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এই শিল্পকে পরিবেশবান্ধব করার জন্য চেষ্টা করছি। বর্তমানে বাংলাদেশের ৩৮টি কারখানার এলইইডি সনদপত্র রয়েছে। বিশ্বের ১০টি শীর্ষ স্থানীয় পরিবেশবান্ধব কারখানার মধ্যে ৭টি বাংলাদেশে। তৈরি  পোশাক খাতে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী দূষিত পানি শতভাগ শোধন এবং পানি ব্যবহারে দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০১৫ সাল থেকে বাংলাদেশ সরকার ‘২০৩০ ওয়াটার রিসোর্স গ্রুপ’ (ডব্লিউআরজি)- এর সঙ্গে কাজ করছে।
প্রধানমন্ত্রীকে প্রবাসীদের অভিনন্দন: ওদিকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী বাংলাদেশি প্রবাসীরা সুইজারল্যান্ড সফর উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানাতে মঙ্গলবার সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন শহর এবং এর পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর প্রবাসী বাংলাদেশিরা সিল ভেরেত্তা পার্ক হোটেলের সামনে সমবেত হন। সফরকালে প্রধানমন্ত্রী এ হোটেলে থাকছেন। প্রবাসীরা প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়ে এবং ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) বার্ষিক সম্মেলনে তার অংশগ্রহণের সাফল্য কামনা করে বিভিন্ন স্লোগান দেন। আওয়ামী লীগের যুক্তরাজ্য শাখার সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরীফ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এ ধরনের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে যোগদানের ফলে বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরো উজ্জ্বল হবে। প্রবাসীরা ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরামের সম্মেলনে যোগদানে প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য ফোরামের নির্বাহী চেয়ারম্যান প্রফেসর ক্লাউস সোয়াবকে ধন্যবাদ জানান। বাংলাদেশের নির্বাচিত নেতা হিসেবে শেখ হাসিনা প্রথম এ ধরনের উচ্চ পর্যায়ের বৈশ্বিক সম্মেলনে যোগ দেন। এই সম্মেলনে রাষ্ট্রনায়ক, শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ ও বুদ্ধিজীবীরা বৈশ্বিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন। সুইজারল্যান্ডের আল্পস অঞ্চলের গ্রাউবান্ডেনে পার্বত্য রিসোর্ট ডাভোসে গত মঙ্গলবার থেকে ৪ দিনব্যাপী এই সম্মেলন চলছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *