শীর্ষ কর্তা নিয়োগে উদাসীন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়

Slider শিক্ষা
শীর্ষ কর্তা নিয়োগে উদাসীন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়

শীর্ষ কর্তা নিয়োগে চরম উদাসীন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, শিক্ষা কার্যক্রম চালু থাকা ৮৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ২৯টিতেই উপাচার্যের পদ শূন্য উপ-উপাচার্য নেই ৬২টি এবং কোষাধ্যক্ষ নেই ৪৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। আর এই তিন পদের সবই ফাঁকা ২০টি প্রতিষ্ঠানে। রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে কর্তাব্যক্তি নিয়োগ না দিয়ে বছরের পর বছর ভারপ্রাপ্তদের দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে এসব বিশ্ববিদ্যালয়। এতে একদিকে যেমন প্রশাসনিক চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়ছে তেমনি পড়াশোনার মান নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। ইউজিসি বলছে, অনিয়ম করতেই ইচ্ছা করে পদগুলো শূন্য রাখা হয়েছে। শীর্ষ কর্তা না থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক কার্যক্রমই নিয়ম-মাফিক হচ্ছে না। ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নিয়োগ দেবেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি, যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর। এসব নিয়োগ একটি চলমান প্রক্রিয়া। কিন্তু কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই ভারপ্রাপ্তদের রাখে। কারণ এতে অর্থের সাশ্রয় হয়। অনিয়ম করতেও সহজ হয়। আর আইন ভঙ্গ করা, শিক্ষা নিয়ে ব্যবসা করা অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। ’ তবে উল্লেখযোগ্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন মেনে চলে বলেও মন্তব্য করেন আবদুল মান্নান।

সূত্রমতে, দেশে ৯৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদিত। শিক্ষা কার্যক্রম চালু রয়েছে ৮৯টিতে। কিন্তু অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মের বালাই নেই। নানা সমস্যায় জর্জরিত বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা এসব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় একের পর এক অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। ট্রাস্টি বোর্ড নিয়ে দ্বন্দ্ব, অননুমোদিত ক্যাম্পাস পরিচালনা, শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্নসহ রয়েছে নানা অভিযোগ।

রাষ্ট্রপতি নিযুক্ত উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ না থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় রয়েছে আশা ইউনিভার্সিটি, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি, গণবিশ্ববিদ্যালয়, কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি, দি পিপলস ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, রয়েল ইউনিভার্সিটি, জেড এইচ শিকদার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, এক্সিম ব্যাংক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রামের পোর্ট সিটি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সেস, রণদা প্রসাদ সাহা বিশ্ববিদ্যালয়, জার্মান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, এনপিআই ইউনিভার্সিটিসহ আরও কয়েকটি।

ইউজিসির প্রতিবেদনে দেখা গেছে, উপাচার্যের পদ শূন্য রয়েছে সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটি, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, রয়েল ইউনিভার্সিটি, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি, ফার্স্ট ক্যাপিটাল ইউনিভার্সিটি, ফেনী ইউনিভার্সিটি, কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিসহ আরও কয়েকটিতে।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বলছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেটে স্বাক্ষর করবেন রাষ্ট্রপতি নিযুক্ত উপাচার্য। অন্য কারও স্বাক্ষর করা সনদ অবৈধ বলে গণ্য হবে। কিন্তু অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই এসব নিয়মের তোয়াক্কা না করে দিনের পর দিন উপাচার্য নিয়োগ দিচ্ছে না।

উপ-উপাচার্যের পদ শূন্য থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রয়েছে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রামের আন্তর্জাতিক ইসলামী ইউনিভার্সিটি, আহছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়, স্টেট ইউনিভার্সিটি, সাউদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়, গ্রিন ইউনিভার্সিটি, পুন্ড্র ইউনিভার্সিটি, ওয়ার্ল্ড বিশ্ববিদ্যালয়, শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি, দি মিলেনিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাইম ইউনিভার্সিটি, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি, ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেস, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস, ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি, হামদর্দ বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয়সহ ৬২টি প্রতিষ্ঠানে। ইউজিসি সূত্রমতে, অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে অনুমোদন নেওয়ার পর নামসর্বস্ব শিক্ষার মাধ্যমে সার্টিফিকেট বিলিয়ে বাণিজ্যে নেমেছে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *