বীর বাহাদুর-নববিক্রম সরকারের দালালি করছেন: সন্তু লারমা

Slider জাতীয়

775e13d016794a6f4e6c7ef6f0f80c47-santu

ঢাকা ;পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উ শৈ সিং এবং ওই মন্ত্রণালয়ের সচিব নববিক্রম কিশোর ত্রিপুরা সরকারের ‘দালালি’ করছেন বলে অভিযোগ করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় (সন্তু) লারমা। তিনি বলেছেন, পার্বত্য এলাকায় শোষণ-বঞ্চনা চরম আকার ধারণ করেছে। এ জন্য অবিলম্বে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন করতে হবে। তা না হলে পূর্বের ঘোষণা অনুযায়ী হরতাল, অবরোধ ও ঘেরাও কর্মসূচি পালন করবেন তাঁরা। 

আজ শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ১৯তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে সন্তু লারমা এসব কথা বলেন। দীর্ঘ বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ধারাগুলো বাস্তবায়ন না হওয়ায় তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করে বক্তব্য দেন তিনি।
১৯ বছরেও চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে সন্তু লারমা বলেন, ‘আমাদের দেশে যাঁরা আমলা আছেন, তাঁরা সত্যকে আড়াল করে সরকারের দালালি করছেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়ের সচিব নববিক্রম ত্রিপুরা দালালের দালাল হয়ে পড়ে আছেন। আর পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর; সরকারের দালালির একটা সীমা আছে। তিনি ওই সীমাও অতিক্রম করে গেছেন। আজকে ওনারা লজ্জিতও হন না।’
সরকারের আমলাদের প্রতিও ক্ষোভ প্রকাশ করেন সন্তু লারমা। তিনি বলেন, ‘মুখে অনেকে ঠিক কথা বলেন। কার্যত চুক্তি হওয়ার ১৯ বছরের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, একজন আমলাও এই চুক্তির প্রতি সংবেদনশীল নন। কেউই অন্তর দিয়ে চান না, এই চুক্তি বাস্তবায়ন হোক।’
শান্তি নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়ের ঘোষিত ক্রোড়পত্র নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে সন্তু লারমা বলেন, ‘এখানে অধিকাংশ অসত্য তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।’
সন্তু লারমা বলেন, ‘গোটা পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসকগোষ্ঠী এমনভাবে ধরে রেখেছে, যেন এটা পূর্ণমাত্রায় উপনিবেশে পরিণত হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে যেন আমরা বন্দী খাঁচার মতো আছি। পার্বত্য চট্টগ্রাম এখন পুরোটাই সেনানিবাস। সেখানে দেখি, শোষণ-নিপীড়ন-বঞ্চনা ও অবিশ্বাস। এই বাস্তবতায় পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ আগামী দিনে কী করবে আমি জানি না।’
চুক্তি বাস্তবায়নে জনসংহতি সমিতির ঘোষিত ১০ দফা দাবির বিষয়ে সন্তু লারমা বলেন, ‘এই কর্মসূচি বাস্তবায়নে সরকার কী ভাষা প্রয়োগ করবে, আমরা তা জানি না। তাদের আচার-আচরণ, দৃষ্টিভঙ্গি কী হবে, সেটা আগামী দিনই বলবে। তবে আমাদের ১০ দফা কর্মসূচি বাস্তবায়নে সরকার যদি অস্ত্রের ভাষা প্রয়োগ করে, আমাদের দমনে তৎপর থাকে। তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি বর্তমানে যেভাবে বিরাজমান, সেভাবে থাকবে না বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।’
জনসংহতি সমিতি ঘোষিত ১০ দফার মধ্যে রয়েছে হরতাল; জলপথ, স্থলপথ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সরকারি কার্যালয় ঘেরাও; অর্থনৈতিক অবরোধ; সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত অফিস বর্জন এবং আদালত বর্জনের মতো কর্মসূচি। তবে এই কর্মসূচি কখন শুরু হবে, এখনো তার সময়সীমা ঘোষণা করা হয়নি।
পার্বত্য চট্টগ্রামের চুক্তিকে রাজনৈতিক ইস্যু হিসেবে সমাধানে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আলোচনা সভায় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের চুক্তির ধারাগুলো যদি বাস্তবায়ন না হয়, তাহলে এই সরকারকে বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষ মুনাফিক উপাধিতে ভূষিত করবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মেসবাহ কামাল বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের চুক্তি নিয়ে সরকার যা করেছে, তা বিশ্বাসঘাতকতার শামিল। এই চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা দরকার। কিন্তু মনে হয়, এই সরকারের সেই রাজনৈতিক সদিচ্ছা নেই। সুতরাং তাদের রাজনৈতিক সদিচ্ছা তৈরির ব্যবস্থা করতে হবে।
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক আন্তর্জাতিক কমিশনের সদস্য সারা হোসেন, ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য নূর আহমেদ, আদিবাসী ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সিমন সিসিম প্রমুখ। আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন দীপায়ন খীসা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *