নির্বাচনকালীন সরকার ৪ বিকল্পের কথা বললেন ড. আকবর আলি খান

Slider জাতীয়

 

41052_f1
ঢাকা;  তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান বলেন, গণতন্ত্রকে রক্ষা এবং এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য নির্বাচন খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এখানে প্রশ্ন আছে যে, নির্বাচনকালীন কোন সরকার প্রতিষ্ঠিত থাকবে? এটা নিয়ে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিতর্ক রয়েছে। এই সময় চার ধরনের সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। যেমন, জনগণের দ্বারা নির্বাচিত, তত্ত্বাবধায়ক সরকার যাকে আদালত ইতিমধ্যে তুলে দিয়েছে, সর্বদলীয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অথবা রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে আবার সংবিধান সংশোধন করে নতুন তত্ত্বের সরকার। তবে এটা ঠিক যে, নির্বাচনের সময় আমলাতন্ত্রের একটা প্রভাব থাকে।
গতকাল সকালে তেজগাঁওয়ের বিএফডিসিতে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি কর্তৃক আয়োজিত ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচনকালীন সরকারের প্রয়োজন আছে কি না?’ শীর্ষক এক ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ড. আকবর আলি খান বলেন, বাংলাদেশে গত দুই দশক ধরে সব রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণে নির্বাচন হচ্ছে। ফলাফল মেনে নেয়ারও একটা সংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল। কিন্তু, গেল কয়েকবছর ধরে নির্বাচন কোন সরকারের অধীনে হবে এটা নিয়ে বিভিন্ন মহলে জোর বিতর্ক চলছে। তিনি বলেন, বিভিন্ন দেশে জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়ে থাকে। তবে ওই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার ব্যাপারে ওই দেশগুলোর সব রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য রয়েছে। যেটা বাংলাদেশে নেই। দেশের ক্ষমতাশালী দল বলছে যে, নির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে আবার বিরোধী দল বেঁকে গিয়ে বলছে যে, না- নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। কিন্তু, আদালত ইতিমধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন ব্যবস্থা তুলে দিয়েছে। তবে আদালতের রায়ে বলা আছে যে, পরপর আরও দুইবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে পারে। নির্বাচনকালীন যেই সরকারই প্রতিষ্ঠিত থাকুক না কেন ওই সরকারের ব্যাপারে দেশের সকল রাজনৈতিক দলের সমঝোতায় আসা আশু প্রয়োজন। এজন্য কাউকে না কাউকে কিছুটা হলেও ছাড় দিতেই হবে। এটা দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে এবং গণতন্ত্রের স্বার্থে।
সাবেক এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আরো বলেন, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। বড় দেশ হওয়ার কারণে প্রায় ২ মাসব্যাপী নির্বাচন ও ভোট গননা হয়ে থাকে। সেখানকার প্রিজাইডিং অফিসার যারা হন তাদের কাছে যদি ২ মাসেরও বেশি সময় ধরে জনগণের সিলমারা ব্যালট বাক্স থাকে তাহলেও ওই দেশের জনগণ এ ব্যাপারে কোন প্রশ্ন তুলবে না। এটা ওই দেশের আমলাতন্ত্রের ওপর জনগণের অগাধ বিশ্বাস রয়েছে। কিন্তু, এটা কি আমাদের বাংলাদেশে সম্ভব? একেবারেই না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো ২ মাসতো দূরের কথা ২ দিনের জন্য হলেও প্রিজাইডিং অফিসারের কাছে তারা জনগণের সিলমারা ব্যালট বাক্স রাখতে চান না। তারা মনে করেন যে, তাদের কাছে বেশিক্ষণ ব্যালট বাক্স থাকা মানেই হচ্ছে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং হবে। বলতে লজ্জা লাগে যে, আমাদের দেশের আমলাদের প্রতি দেশের জনগণের বিশ্বাস নেই। এই বিশ্বাস অনেক আগেই হারিয়ে গেছে। কারণ আমলারা তাদের চাকরি রক্ষার জন্য সরকারের অন্ধ আনুগত্য করে থাকে। নীতি ঠিক রাখতে পারে না। আমাদের সবার আশা থাকবে যে, দেশের গণতন্ত্রকে রক্ষার স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলো পর্দার অন্তরালে সংলাপ করে সমস্যার সমাধান করবেন।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, শুক্রবার বিএনপি’র চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকারের মাধ্যমে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু, এরপরই আওয়াম লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তার ওই বক্তব্যকে জাতির সঙ্গে তামাশা বলে মন্তব্য করেছেন। তাহলে দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ কি? গত ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন একতরফা অনুষ্ঠিত হওয়ার কারণে ওই নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ ছিল।  দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় যাওয়া এবং ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য কার্যক্রম করছে। এতে দেশের গণতন্ত্র এবং সুশাসনে অভাব দেখা দিচ্ছে।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির ছায়া সংসদে বিরোধী দল হিসাবে প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি বিজয়ী হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *