রংপুরে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন হচ্ছে

Slider বাংলার আদালত

cort-curt

এস. এম. মনিরুজ্জামান মিলন, রংপুর বিভাগীয় প্রতিনিধিঃ রংপুর বিভাগে ট্রাইব্যুনাল গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে আইন মন্ত্রণালয়ে। তাতে দ্রুত বিচার আদালত তৈরির জন্য আইন মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

আইনজীবীরা বলছেন, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের সুবাদে স্বল্প সময়ের মধ্যে বিচার নিষ্পত্তি করা সম্ভব হচ্ছে। তবে মামলার তুলনায় ট্রাইব্যুনাল কম থাকায় মামলাজটে পড়তে হচ্ছে। এ অবস্থায় দেশের প্রতিটি বিভাগে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠিত হলে বাদী-বিবাদী উভয় পক্ষই উপকৃত হবে। কমে আসবে মামলাজট।

বর্তমানে ঢাকায় চারটি ছাড়াও চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট বিভাগে একটি করে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল রয়েছে। এত দিন রংপুর অঞ্চলের মামলাগুলো রাজশাহী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হতো।

রংপুরে ট্রাইব্যুনাল গঠিত হলে এই বিভাগের আটটি জেলার চাঞ্চল্যকর মামলাগুলো সেখানে পাঠানো হবে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলায় বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে। ওই সব ঘটনায় বিভাগের বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন থানায় মামলা হয়েছে। এসব মামলার আসামিদের এক জেলা থেকে অন্য জেলায় আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অত্যন্ত ঝুঁকি নিতে হয়। এ কারণে নবগঠিত রংপুর বিভাগের আওতাধীন আটটি জেলার চাঞ্চল্যকর মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে দ্রুত বিচার আদালতের কার্যক্রম চালু করতে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিটি বিভাগে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা একাধিক হওয়া উচিত। একটি মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে ১৩৫ কার্যদিবসে নিষ্পত্তি হওয়ার বিধান রয়েছে। মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে। এতে বাদী-বিবাদী উভয় পক্ষই উপকৃত হয়। সঠিক সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়। আলামত নষ্ট হয় না। কেউ নির্দোষ প্রমাণিত হলে দ্রুত মুক্তি পেতে পারে। অন্যদিকে বাদীপক্ষও দ্রুত বিচার পেয়ে যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘জেলাগুলোতে মামলাজট রয়েছে। একাধিক ট্রাইব্যুনাল হলে চাঞ্চল্যকর মামলাগুলো সেখানে চলে আসবে। বিচার সম্পন্ন হলে অপরাধীরাও একটা মেসেজ পেয়ে যায় যে অপরাধ করে পার পাওয়া যাবে না। আর বিচার দীর্ঘায়িত হলে অপরাধীরা প্রশ্রয় পায়। তারা মনে করে, কিছু সাক্ষী ম্যানেজ করে ফেলব। দেরি হলে বাদীও দুর্বল হয়ে পড়ে।’

প্রসঙ্গত, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আইন, ২০০২ প্রণয়ন হয়েছিল নির্ধারিত কয়েকটি অপরাধের মামলার বিচার দ্রুত সম্পন্ন করার লক্ষ্যে। ২০০২ সালের অক্টোবর মাস থেকে এটি কার্যকর হয়। হত্যা, ধর্ষণ, আগ্নেয়াস্ত্র, বিস্ফোরক দ্রব্য ও মাদকদ্রব্য-সংক্রান্ত অপরাধের বিচারাধীন কোনো মামলা এর যেকোনো পর্যায়ে ক্ষেত্রমতো দায়রা আদালত বা বিশেষ আদালত বা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে বিচারের জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরিত হয়ে থাকে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরিত কোনো মামলা স্থানান্তরের তারিখ থেকে ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে নিষ্পত্তির বিধান রয়েছে। কোনো অনিবার্য কারণে তা সম্ভব না হলে ট্রাইব্যুনাল কারণ লিপিবদ্ধ করে অতিরিক্ত ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে মামলাটি নিষ্পত্তি করতে পারবেন। বর্ধিত সময়ের মধ্যেও যুক্তিসংগত কোনো কারণে মামলা নিষ্পত্তি করা সম্ভব না হলে ট্রাইব্যুনাল এর কারণ লিখে মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য সর্বশেষ আরো ১৫ কার্যদিবস সময় নিতে পারবেন। সর্বশেষ বর্ধিত মেয়াদেও যদি কোনো মামলা নিষ্পত্তি করা সম্ভব না হয় তাহলে মামলাটি যে আদালত থেকে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরিত হয়েছিল সেখানে ফেরত যাবে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *