বাপ–দাদার ভিটা ছাড়ব না’

Slider সারাদেশ

78575145ec66364b4e950aab881c366f-192_mymensingh-picture-bikkhov-somabesh-14

ময়মনসিংহ; মরব, তবু বাপ-দাদার ভিটা ছাড়ব না। আমাদের সাতপুরুষ বসবাস করে আসা বসতভিটা নিতে হলে আমাদের লাশের ওপর দিয়ে নিতে হবে। কেউ জীবিত থাকতে বসতভিটা দিবে না।’
ময়মনসিংহে বসতভিটাসহ কৃষকদের জমি অধিগ্রহণের সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে এলাকাবাসী আয়োজিত সমাবেশে এক বক্তা এসব কথা বলেন।

বেলা তিনটায় ময়মনসিংহ শহরতলির কাচারিঘাট (মেরা বাগান) এলাকায় মানববন্ধন হওয়ার কথা ছিল। এ জন্য বেলা দুইটা থেকেই চর ঈশ্বরদিয়া, চর গোবিন্দপুর, চর আনন্দিপুর, চর ভনানীপুর ও চর দুর্গাপুর গ্রামের শত শত মানুষ সেখানে সমবেত হন। পরে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে মানববন্ধনের পরিবর্তে সমাবেশ করা হয়।

কাচারিঘাটের সমাবেশে গিয়ে দেখা যায়, প্রখর রোদের মধ্যে সমাবেশস্থলে জড়ো হয়েছেন পাঁচ গ্রামের মানুষ। সমাবেশে যোগ দেওয়া নারী-পুরুষদের হাতে ছিল বিভিন্ন দাবি লেখাসংবলিত ফেস্টুন। এতে লেখা ছিল ‘মোদের দাবি একটাই, বসত ভিটায় থাকতে চাই’, ‘আমাদের দাবি মেনে নাও, নইলে মুখে বিষ দাও’, ‘বিভাগ চাই উন্নয়ন চাই, বসতভিটায় থাকতে চাই’ ইত্যাদি।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নাম বলে একটি কুচক্রী মহল তাঁদের ফসলের জমি ও বসতভিটা নিয়ে যেতে চাইছে। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে এক বক্তা বলেন, ‘আপনি আমাদের মা। আপনি একবার খোঁজ নিয়ে দেখেন, কীভাবে আমাদের প্রায় ১৫ হাজার পরিবারকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে।’
বক্তারা আরও বলেন, তাঁরাও চান বিভাগীয় কার্যালয় ও আধুনিক শহর হোক। কিন্তু এর জন্য বসতভিটা থেকে তাঁদের উচ্ছেদ না করে সরকার জমি অধিগ্রহণ করতে পারে। তাঁরা অভিযোগ করেন, জমি অধিগ্রহণে একটি স্বার্থান্বেষী মহলের ষড়যন্ত্র রয়েছে। বিষয়টি সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। সরকারের কাছে অনুরোধ, এই নকশা বাদ দিয়ে নদীর তীর ঘেঁষে জমি অধিগ্রহণের নতুন নকশা করা হোক।
সমাবেশে কাফনের কাপড় পরে যোগ দেন চর ঈশ্বরদিয়া গ্রামের রফিকুল ইসলাম ও একই গ্রামের সৈয়দ মো. গোলাম মোস্তফা। তাঁরা বলেন, ‘বসতভিটা থেকে উচ্ছেদের আগে আমরা লাশ হব।’

চর ঈশ্বরদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ওসমান গণির সভাপতিত্বে সমাবেশে চরাঞ্চলের গণ্যমান্য ব্যক্তি ছাড়াও আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির নেতারা বক্তব্য দেন।

ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিভাগীয় কার্যালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি কার্যালয় ও আধুনিক ময়মনসিংহ নগর গড়ে তুলতে ব্রহ্মপুত্র চরাঞ্চলের চর ঈশ্বরদিয়া, চর গোবিন্দপুর, চর আনন্দিপুর, চর ভনানীপুর ও চর দুর্গাপুর গ্রামের ৪ হাজার ৩০০ একর জমি অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে সরকার। বিভাগীয় কমিশনার জি এম সালেহ উদ্দিন বলেন, জমি অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত সরকারের। যাঁদের জমি অধিগ্রহণ করা হবে, তাঁদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের দায়িত্ব সরকার নেবে।

সরকারের এই সিদ্ধান্ত জানাজানি হওয়ার পর থেকেই প্রায় এক মাস ধরে নিজেদের ফসলের জমি ও বসতভিটা রক্ষায় আন্দোলন করে যাচ্ছেন ওই পাঁচ গ্রামের মানুষ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *