নজরদারিতে ২১ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

Slider জাতীয়

39975_f1

 

ঢাকা; একুশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে নরজদারিতে আনতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার বরাত দিয়ে এ চিঠি দেয়া হয়। এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থী, শিক্ষকদের জঙ্গি র‌্যাডিকালাইজেশনসহ বিভিন্ন উস্কানিমূলক কাজের ইন্ধন রয়েছে বলে চিঠিতে বলা হয়েছে। গত ২৭শে অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ৩ পৃষ্ঠার চিঠিতে এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে লিখিত আকারে জানানোর কথা বলা হয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব (সমন্বয়ক) মো. সারওয়ার হোসেন বলেন, চিঠিতে চার ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তথ্য রয়েছে। সে অনুসারে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়, মাধ্যমিক-১ ও ২, মাদরাসা ও কলেজ শাখার কাছে চিঠি হস্তান্তর করেছি। তারা এখন এ বিষয়ে কোনো আপডেট দেয়নি। তবে আমরা এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নরজদারিতে রেখেছি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, রাজধানীর ২১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাদরাসায় উগ্রবাদের প্রচারণা, লিফলেট বিতরণসহ জঙ্গি সম্পৃক্তসহ নানা উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডে উদ্বুদ্ধ করছে। এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে লিখিত আকারে জানাতে হবে।
চিঠিতে যেসব প্রতিষ্ঠানের কথা বলা হয়েছে সেগুলো হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস ফ্যাকাল্টি, বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়, ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়, ইংরেজি মাধ্যম স্কুল আগা খান স্কুল (উত্তরা), স্কলাসটিকা, লেকহেড গ্রামার স্কুল (ধানমন্ডি, বনানী ও মোহাম্মদপুর), তামিরুল মিল্লাত মাদরাসা (মীর হাজিরবাগ, যাত্রাবাড়ী) ও টঙ্গি, মসজিদুল মোমেন জামে মসজিদ (মিরপুর-১০), দারুল উলুম রহমানিয়া মাদরাসা (নিউ মার্কেট), আল আমিন মসজিদ (মোহাম্মদপুর), আহলে হাদিস মসজিদ (কামারপাড়া, আবদুল্লাহপুর), জামিয়া নুরিয়া মাদরাসা (ডেমরা), লালবাগ জামিয়া কোরানিয়া আরাবিয়া মাদরাসা, বসুন্ধরা মসজিদ-মাদরাসা (বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা), ঢাকা, মারকাজুল উলুম আল ইসলামিয়া মাদরাসা-মসজিদ কমপ্লেক্স (বসিলা রোড, মোহাম্মদপুর), কামরাঙ্গীরচর মাদরাসা, জামেয়া মোহাম্মদিয়া মাদরাসা (সাড়ে এগারো, মিরপুর)।
চিঠিতে বলা হয়েছে, রাজধানীর ২১টি প্রতিষ্ঠানের উগ্রবাদী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার প্রমাণ রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, ইংরেজি মাধ্যম স্কুল, মাদরাসা মসজিদে এক শ্রেণি উগ্রবাদী ছাত্র, শিক্ষক টার্গেট করে বিভিন্ন ধরনের ওয়েব সাইট, ভিডিও ফুটেজ, জিহাদী বই, জিহাদী বক্তব্যসম্বলিত অডিও’র মাধ্যমে জঙ্গি কার্যক্রমে উদ্বুদ্ধ করেছে বলে গোপন সূত্রে জানা গেছে।
প্রতিবেদনে করণীয় ঠিক করতে কয়েক দফা সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে আছে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মাদরাসা ও মসজিদে নিরীক্ষণ কার্যক্রম জোরদার করা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক, ছাত্র ও অভিভাবকদের জঙ্গিবিরোধী আলোচনা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সকলকে সচেতন করা। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ছাত্রছাত্রী যৌক্তিক কারণ ছাড়া ১৫ দিনের বেশি অনুপস্থিত থাকলে তাদের সম্পর্কে নিকটবর্তী থানা ও গোয়েন্দা সংস্থার নিকট নিয়মিত রিপোর্ট প্রদানের ব্যবস্থা করা। উঠতি বয়সী যুবক নিখোঁজ সংক্রান্তে থানায় জিডি হলে তা অনুসন্ধানপূর্বক নিখোঁজের ছবি, মোবাইল নম্বর ও প্রয়োজনীয় তথ্যসহ গোয়েন্দা সংস্থাকে অবহিত করা এবং ভাড়াটিয়াদের বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে নিশ্চিত হয়ে ভাড়া প্রদানে বাড়ির মালিকদের সতর্ক করা।
গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ার ঘটনার বিষয়ে বলছেন, জঙ্গিরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে টার্গেট করে মাঠে নেমেছে। তারা কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের ধর্মীয় উন্মাদনার মাধ্যমে বিভ্রান্ত করে জঙ্গিবাদের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। সেজন্য চিহ্নিত কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নজরদারি করা ছাড়াও দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জঙ্গিবাদবিরোধী প্রচারণা চালানোসহ নানান পদক্ষেপ নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকেও নেয়া হচ্ছে কার্যকর পদক্ষেপ। জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিশেষ কর্মসূচি থাকবে। একই সঙ্গে সব অভিভাবককে সন্তানদের চালচলনের ওপর খেয়াল রাখতে হবে যেন কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে তার সন্তান জড়িত হয়ে না যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *