ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি: হিলারি প্রেসিডেন্ট হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হবে

Slider সারাবিশ্ব

37512_103

 

ঢাকা;  তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের হুঁশিয়ারি দিলেন ডনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বললেন, হিলারি ক্লিনটন যদি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তাহলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হবে। কারণ, তিনি সিরিয়া ইস্যুতে যে নীতি গ্রহণ করেছেন তা এ যুদ্ধের দিকে নিয়ে যাবে বিশ্বকে। অনলাইন সিএনএন ও বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর দিয়েছে। ট্রাম্প বলেছেন, সিরিয়ায় পারমাণবিক শক্তিধর রাশিয়ার উপস্থিতি রয়েছে। সেখানে হিলারি যে নীতি গ্রহণ করেছেন তাতে এ যুদ্ধ শুরু হবে। প্রধানত পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প এসব কথা বলেছেন। ফ্লোরিডার মিয়ামিতে ট্রাম্প ন্যাশনাল ডোরাল গলফ ক্লাবে এ সাক্ষাৎকার দেন ট্রাম্প। তিনি আরো বলেছেন, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে পদত্যাগে বাধ্য করানোর চেষ্টা করার চেয়ে ইসলামিক স্টেটকে পরাজিত করাই অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। ওই সাক্ষাৎকারে ট্রাম্পের কাছে বেশ কিছু প্রশ্ন ছুড়ে দেয়া হয়েছিল। এর মধ্যে অন্যতম- রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে অবমাননা করার পর তার সঙ্গে হিলারি ক্লিনটনের সমঝোতা প্রক্রিয়া কেমন হবে? ফিলিপাইনের নতুন প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতের্তের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সম্পর্কের অবনতির প্রসঙ্গেও তার কাছে জানতে চাওয়া হয়। নিজের নির্বাচনের প্রার্থিতার জন্য রিপাবলিকানদের ঐক্যবদ্ধ করতে ব্যর্থতা সম্পর্কে তার কাছে জানতে চাওয়া হয়। বলা হয়, যদি রিপাবলিকানরা ঐক্যবদ্ধ থাকতেন তাহলে সহজেই নির্বাচনে জিতে যেতেন ডনাল্ড ট্রাম্প। এসব প্রশ্নের জবাবে ডনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, যদি আমার দলে ঐক্য থাকতো তাহলে সহজেই আমরা হিলারির বিরুদ্ধে নির্বাচনে বিজয়ী হতাম। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ সম্পর্কে ডনাল্ড ট্রাম্প বলেন, হিলারি সংকট সমাধানের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে টেনে নিয়ে যেতে চান। উল্লেখ্য, হিলারি ক্লিনটন সিরিয়ায় ‘নো ফ্লাই জোন’ এবং ‘সেফ জোন’ প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছিলেন যুদ্ধে লিপ্ত নন এমন মানুষদের রক্ষা করার জন্য। তবে কিছু বিশ্লেষক আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, এমন জোন গঠন করা হলে যুক্তরাষ্ট্রকে রাশিয়ার যুদ্ধ বিমানের সঙ্গে সরাসরি সংঘর্ষে জড়িয়ে ফেলা হবে। এ বিষয়ে ডনাল্ড ট্রাম্প বলেন, আমাদের যেটা করা উচিত তা হলো আইসিসের দিকে নজর দেয়া। আমাদের সিরিয়ার দিকে নজর দেয়া উচিত নয়। আমরা যদি হিলারি ক্লিনটনের কথা শুনি তাহলে আমাদেরকে সিরিয়া নিয়ে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে জড়িয়ে ফেলা হবে। তিনি বলেন, এখন আমরা শুধু সিরিয়ার বিরুদ্ধেই লড়াই করছি না। আমরা লড়াই করছি সিরিয়া, রাশিয়া ও ইরানের বিরুদ্ধে। রাশিয়া পারমাণবিক শক্তিধর দেশ। তবে এ সমালোচনাকে প্রত্যাখ্যান করেছে হিলারি ক্লিনটনের প্রচারণা শিবির। উল্টো তারা বলেছেন, রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটদের জাতীয় নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরাই ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট পদে যোগ্য নন বলে তার নিন্দা জানিয়েছেন। হিলারির প্রচারণাবিষয়ক মুখপাত্র জেসে লেহরিস এক বিবৃতিতে বলেছেন, আরো একবার ট্রাম্প প্রমাণ করলেন যে, তিনি পুতিনের কথায় চলেন। আমেরিকানদের ভীতির জন্য তিনি কাজ করছেন। সিরিয়ায় মানবাধিকারকে রক্ষা করে আইসিসকে কিভাবে পরাজিত করা যাবে সে বিষয়ে তিনি কোনোই পরিকল্পনা দেন নি। অন্যদিকে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের বেশ প্রশংসাই করেছেন ডনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, তিন বছর আগের চেয়ে প্রেসিডেন্ট আসাদ এখন অনেক শক্তিশালী। ইসলামিক স্টেটকে পরাজিত করার চেয়ে আসাদকে ক্ষমতা থেকে সরানোর চেষ্টা কম গুরুত্বপূর্ণ। আইসিস ও আসাদ এ দুটি ইস্যুতে আসাদ আমার দ্বিতীয় অগ্রাধিকার। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক নিয়েও কথা বলেছেন ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, হিলারি যখন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন তখন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার সম্পর্ক নিয়ে তিনি যেভাবে কাজ করেছেন এবং তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের যেভাবে কড়া ভাষায় সমালোচনা করেছেন তাতে কী করে হিলারি তাদের কাছে ফিরে যাবেন! কিভাবে পুতিনের সঙ্গে তিনি সমঝোতা করবেন, যাকে তিনি ‘ইভিল’ বলে আখ্যায়িত করেছেন! ওদিকে ফিলিপাইনের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সমালোচনা করেছেন ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, বিশ্বনেতাদের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি বাদ দিয়ে প্রেসিডেন্ট ওবামা তার (ট্রাম্প) গলফ খেলার দিকে নজর দিয়েছেন। উল্লেখ্য, ক্ষমতায় আসার পর থেকেই রদ্রিগো দুতের্তে প্রকাশ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শত্রুভাবাপন্ন অবস্থান নিয়েছেন। তিনি নিজের দেশে মাদকবিরোধী যে দমন-পীড়ন চালাচ্ছেন তার মার্কিন সমালোচনাকে অগ্রাহ্য করেছেন। এক্ষেত্রে ওবামা ও যুক্তরাষ্ট্রকে ফিলিপাইনকে চাবুক দিয়ে সোজা পথে রাখার মতো দেশ হিসেবে না দেখতে আহ্বান জানান। তবে ওবামা প্রশাসন আশা করেছেন, এ দেশ দুটি মিত্র হিসেবেই থাকবে। কিন্তু ট্রাম্প তা মেনে নেন নি। তিনি বলেছেন, প্রেসিডেন্ট দুতের্তে সর্বশেষ যে মন্তব্য করেছেন তা আমার (যুক্তরাষ্ট্র) দেশের বিরুদ্ধে অসম্মানজনক। ট্রাম্প আবারো অভিযোগ করেন জনমত জরিপে জালিয়াতি করছে মিডিয়া। একই সঙ্গে রিপাবলিকান পার্টির নেতৃত্বের প্রতি তার সমর্থকরা হতাশ বলেও তিনি মন্তব্য করেন। ট্রাম্প বলেন, আমার লোকেরা দলীয় নেতৃত্বের প্রতি ভীষণ ক্ষুব্ধ। কারণ, এটা এমন একটা নির্বাচন যেখানে আমরা ১০০ ভাগ বিজয়ী হওয়ার সুযোগ থাকতো, যদি শীর্ষ পদগুলো আমাদের সমর্থন করতেন। তারপরও আমি মনে করি আমরা যে করে হোক বিজয়ী হতে চলেছি। ট্রাম্প আরো বলেছেন, তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে তার মন্ত্রিসভায় ডেমোক্রেটদের রাখার কথা ভাবছেন না। তবে তাদের সঙ্গে এক হয়ে কাজ করবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *