মোবাইল ব্যাংকিংয়ে সক্রিয় ১৬ অপরাধ চক্র

Slider তথ্যপ্রযুক্তি ফুলজান বিবির বাংলা

30535_f1

 

ঢাকা: মোবাইল ব্যাংকিং ঘিরে সক্রিয় রয়েছে ১৬টি সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্র। তথ্যপ্রযুক্তির ফাঁক ফোকর ব্যবহার করে তারা হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। নানা উপায়ে চক্রটি ফাঁদে ফেলছে সাধারণ মানুষকে। ঈদকে সামনে রেখে তারা আরো বেশি সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
চক্রগুলোর মধ্যে রয়েছে, অপরাধ সংক্রান্ত গাড়িচোর ও পকেটমার গ্রুপের প্রতারণা, হ্যালো পার্টির প্রতারণা, জিনের বাদশার প্রতারণা, চাকরি বা ডিলারশিপ প্রদানের নামে প্রতারণা, বিদেশে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জিম্মি করে হুন্ডি-ব্যবসা/থাইল্যান্ডভিত্তিক মানবপাচারে মোবাইল ব্যাংকিং এবং সুন্দরবনের বনদস্যুদের হাতে জিম্মি বা আটক করে মুক্তিপণ আদায়, শিশু বা পূর্ণবয়স্ক মানুষকে জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায়, মাস্টার ইন অল পীর-সন্ন্যাসী, মারা গেছে গ্রুপের প্রতারণা, জজ সাহেবকে ফোন করুন, সিকিউরিটি সেল থেকে বলছি গ্রুপের প্রতারণা বা হুমকি ও ভুয়া ফ্লেক্সি করে টাকা ফেরত চাওয়ার ঘটনা।
এছাড়া, ফেসবুক আইডি হ্যাক করে আইডি ফিরিয়ে দেয়ার নাম করেও টাকা চাওয়া হয় মোবাইল ব্যাংকিং মাধ্যম ব্যবহার করে। পরীক্ষার নম্বর বাড়িয়ে দেয়ার কথা বলে এবং বিভিন্ন অপারেটর থেকে ফোন করে গ্রাহককে টাকা পাঠানোর ঘটনা হরহামেশাই হচ্ছে। মূলত মোবাইল ফোনে আর্থিক বিষয়ে এসব প্রতারণার ঘটনা ঘটে থাকে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় বিকাশ ও ডাচ্‌-বাংলা মোবাইল ব্যাংকিং সেবা।
এসব বিষয় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (সিআইডি) শাহ  আলম। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে তিনি মোবাইল ব্যাংকিং নিয়ে সংঘটিত নানা অপরাধের চিত্র তুলে ধরেন। পাশাপাশি এর কারণও ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, চোরচক্র মোবাইল ফোনের ব্যালেন্স থেকে কৌশলে টাকা হাতিয়ে নেয়। এই কৌশলটা জানা না থাকলে যে কোনো সময় বড় অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিতে পারে প্রতারক চক্র। সিআইডির এই কর্মকর্তা জানান, যারা মোবাইল ফোন থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়, সেই চোরচক্রের মূল হোতা তার কামলাদের (সহযোগীদের) নিয়ে টার্গেট এজেন্ট (ব্যক্তিও হতে পারে) ঠিক করে এবং মোবাইল অপারেটর বা তাদের থার্ডপার্টি এজেন্টদের কাছ থেকে কোনো টার্গেট এজেন্টের নম্বরের রেজিস্ট্রেশন ফর্মের নমুনা স্বাক্ষর সংগ্রহ করে। অন্যদিকে, পিনকোড চোর সরজমিন এজেন্টদের দোকানে লেনদেন করার ছলে আনমনে দাঁড়িয়ে থাকার ভান করে আড়চোখে অন্যের পিনকোড দেখে নেয়। এরপর নমুনা স্বাক্ষর অনুশীলনকারী নমুনা স্বাক্ষর অনুশীলন করে থাকে। টাকা উত্তোলনকারী সরজমিন এজেন্টের দোকানে এসে তার এজেন্ট নম্বর জানতে চান এবং বলেন তার ‘আত্মীয় বা বন্ধুর কাছ’ থেকে কিছু টাকা আসবে। ঠিক ওই সময় টাকা উত্তোলনকারীর ইশারায় মূলহোতা বা তার সহযোগী ভিকটিম এজেন্টের অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠায় (মানি লোড করে)। টাকা উত্তোলনকারী ক্যাশ আউট করে বা নগদ টাকা উঠিয়ে মূলহোতাকে রিপোর্ট করে। মূলহোতার নির্দেশে নমুনা স্বাক্ষর অনুশীলনকারী কাস্টমার কেয়ার থেকে সিম তুলে তিন মিনিটের মধ্যেই চুরি করা পিনকোড বসিয়ে অন্য অ্যাকাউন্টে টাকা পাচার করে।
প্রসঙ্গত, গত জুলাই মাস পর্যন্ত দেশে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসে নিবন্ধিত গ্রাহকের সংখ্যা ৩ কোটি ৩৩ লাখ। আর এজেন্টের সংখ্যা ৬ লাখ ১৩ হাজার ১৫১। সংশ্লিষ্টরা জানান, এসব থেকে সাবধান থাকতে হবে। কারণ এই অপরাধগুলো প্রমাণিত এবং এভাবে প্রতারণা হচ্ছে। এসব জানার পরও অনেকে এই ধরনের প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। এদিকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের নানা ত্রুটি ও অপরাধ সংশ্লিষ্টতার অন্যতম কারণ এর সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর একচেটিয়া ব্যবসা বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সম্প্রতি মোবাইল অপারেটররা এধরনের আর্থিক সেবা খাতে যুক্ত হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তাদের এ আগ্রহে এখাতে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার স্বার্থে অপারেটরদের সুযোগ দেয়া উচিত বলে জানিয়েছে সরকার। এ প্রসঙ্গে  ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, একটি প্রতিষ্ঠান বিকাশ ইতিমধ্যেই এই খাতে সফলতা পেয়েছে। তবে বাজারে প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে মোবাইল অপারেটরদের এই খাতে সেবা প্রদানের সুযোগ দেয়া উচিত। মোবাইল অপারেটরদের এই খাতে কাজ করার সুযোগ না দেয়াটাকে আমার কাছে বিমাতাসুলভ আচরণ বলে মনে হয়। তাই অপারেটরদের জন্য এই খাতকে উন্মুক্ত করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বিটিআরসিকে এক সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছি। তিনি বলেন, বাংলাদেশে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির সুবিধা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাতে হলে মোবাইল অপারেটরদের ডিজিটাল আর্থিক সেবাখাতে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। এমএফএস সেবা দিতে মোবাইল অপারেটরদের প্রযুক্তিকে বলা হয় ইউএসএসডি। এই প্রযুক্তি আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের নেটওয়ার্কের সঙ্গে গ্রাহককে যুক্ত করতে ব্যবহার করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, একজন গ্রাহক যখন তার ব্যক্তিগত হিসাব থেকে আরেকজনকে টাকা পাঠান, তখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রেরক ও প্রাপকের কাছে দুটি ক্ষুদে বার্তা যায়। অপারেটরদের এই প্রযুক্তিগত সুবিধাকেই বলা হয় ইউএসএসডি। মোবাইল অপারেটরদের হিসাবে, দুই বছর আগে এমএফএস সেবার জন্য তাদের নেটওয়ার্কে ৩৮ লাখ ইউএসএসডি তথ্যের আদান-প্রদান হতো। সেটি এখন বৃদ্ধি পেয়ে ৪ কোটি ৫৬ লাখ হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *