শেখ হাসিনার কূটনৈতিক সাফল্যের রহস্য কী?

Slider জাতীয়

বিরোধী দলের বয়কট করা জানুয়ারির নির্বাচন শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এশিয়ার বেশ কয়েকটি মিত্র দেশের কাছ থেকে শুভেচ্ছা বার্তা পান। যার মধ্যে রয়েছে ভারত, চীন ও রাশিয়া। যদিও শক্তিশালী পশ্চিমা গণতান্ত্রিক দেশ যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে আশঙ্কার কথা জানিয়েছিল।

তবে এর একমাস পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছ থেকে সহযোগিতার বার্তাসমৃদ্ধ চিঠি পান শেখ হাসিনা। এরপর এক সপ্তাহ আগে উচ্চ পর্যায়ের একটি মার্কিন প্রতিনিধি দল ঢাকা সফরে আসে।

বাংলাদেশের নতুন সরকারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র কাজ করতে চায়, শুধুমাত্র এ কারণে এই পরিবর্তন দেখা যায়নি। এরসঙ্গে রয়েছে শেখ হাসিনার কূটনৈতিক দক্ষতাও। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতির মাধ্যমে তিনি বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোকে বন্ধু বানাতে পেরেছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কূটনৈতিক সাফল্য নিয়ে মার্কিন প্রভাবশালী সাময়িকী দ্য ডিপ্লোম্যাটে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা চারবার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। এবার নিয়ে পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন তিনি।

কিন্তু তার এই যাত্রাটা সহজ ছিল না। কারণ তার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতাদের হত্যা করে দলকে দুর্বল করে দেওয়া হয়েছিল। এরপর সামরিক স্বৈরশাসকদের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছিলেন দলের অন্যান্য নেতারা। এতে আওয়ামী লীগ আরও দুর্বল হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ১৯৮১ সালে দেশে ফেরার পর দলকে পুনর্গঠন করেন এবং বর্তমানে দলে তার প্রতিদ্বন্দ্বী কেউ নেই।

বিরোধী দল বিএনপির নেত্রী রুমিন ফারহানা দ্য ডিপ্লোম্যাটকে বলেছেন, ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা সহজ কোনো বিষয় নয়। যেখানে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিরোধী দলকে দমন ও গুম করার অভিযোগ রয়েছে।

তবে বাংলাদেশের অনেকে মনে করেন, বিশ্ব রাজনীতির ক্ষেত্রে শেখ হাসিনা দূরদর্শী। ফলে বাংলাদেশের জাতীয় ও অর্থনৈতিক স্বার্থের জন্য তিনি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের মতে, শেখ হাসিনার সাফল্যের গোপন রহস্য হলো অর্থনৈতিক কূটনীতি। তিনি বলেছেন, “তিনি সবসময় অর্থনৈতিক কূটনীতিকে প্রাধান্য দেন। আমি মনে করি এটি তার পররাষ্ট্র নীতির মেরুদণ্ড হিসেবে কাজ করে।”

করোনা মহামারির মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল ছিল। যা বহিঃর্বিশ্বে পররাষ্ট্র নীতিকে দৃঢ় করেছে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়েছে।

শেখ হাসিনার অধীনে বাংলাদেশ চীন, ভারত ও রাশিয়ার সঙ্গে শক্তিশালী অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। এরমধ্যে রাশিয়া বাংলাদেশে তৈরি করছে ১২ বিলিয়ন ডলারের পারমাণবিক কেন্দ্র। যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল অবকাঠামো।

এছাড়া বাংলাদেশ তৈরি পোশাক রপ্তানি করে বিপুল অর্থ আয় করছে। সঙ্গে বাংলাদেশের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে অন্যান্য দেশে বাংলাদেশের মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে। যেমন গত বছর বাংলাদেশ সফরে এসে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ফরাসি বিমান উৎপাদনকারী জায়ান্ট এয়ারবাসের হয়ে ৩ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি করেন।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্রেটেজিক স্টাডিস (বিআইআইএসএস)-এর সাবেক চেয়ারম্যান ও গবেষক মুন্সি ফয়েজ আহমেদ দ্য ডিপ্লোম্যাটকে বলেছেন, শেখ হাসিনার কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সাফল্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো তিনি অন্যদের বোঝাতে সমর্থ হন যে, তারা তার কাছ থেকে ভালো কিছুই পাচ্ছে। এছাড়া শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক রাজনীতি নিয়েও সরব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *