অস্ত্র রেখে বলে জঙ্গি ধরেছি, পরে মারা হয়

Slider রাজনীতি

f443831da89acff7d1ba332b85123bba-26

ঢাকা: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, অস্ত্র রেখে কিছু কিছু পুলিশ সদস্য বলে এরা জঙ্গি; এদের ধরেছি। কিছুদিন পর দেখা যায়, তাদের (জঙ্গি) গুলি করে মেরে ফেলা হয়।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির ৩৮ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় খালেদা জিয়া এসব কথা বলেন। তিনি রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, পদ্মা সেতু নিয়েও কথা বলেন।

খালেদা জিয়া বলেন, ‘এই সরকার কথা কথায় কিছুদিন পরপর জঙ্গির ধোয়া তুলে। অমুক জায়গায় এতজন জঙ্গি পাওয়া গেছে। তারপর জঙ্গিগুলোকে ধরে, সত্যিকার জঙ্গি কি না জানি না। কিছু লোক তাদের ধরা থাকে। এগুলো না খেয়ে খেয়ে দীর্ঘদিন বন্দী করে রেখে তাদের দাঁড়ি-চুল এত বড় করে, বিদঘুটে চেহারা হয়ে যায়। তারপর তাদের জঙ্গি বলে সামনে নিয়ে আসে। আর কতগুলো পুলিশ আছে, অস্ত্রশস্ত্র সাজিয়ে বলে এরা জঙ্গি, হরকাতুল জেহাদ, এদের ধরেছি। তার কিছুদিন পর দেখা যায়, লোকগুলোকে ধরে, তাদের গুলি মেরে ফেলা হয়। কেন গুলি করে মেরে ফেলা হয়? দেশে আইন আছে, আদালত আছে, জিজ্ঞাসাবাদ করবে। এগুলো দুঃখজনক ঘটনা।’

বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, আমি এখনো বলব, রামপাল কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র ওখানে হওয়া উচিত নয়। তাহলে ওই অঞ্চলের ব্যাপক ক্ষতি হবে। সুন্দরবন শেষ হয়ে যাবে।

রামপালে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে নিজের সংবাদ সম্মেলনের কথা উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘সেদিন রামপাল নিয়ে আমি বক্তব্য দিয়েছি। তারা এটা নিয়ে অনেক ব্যঙ্গ করেছেন, আজেবাজে কথা বলেছেন। কিন্তু আমরা যা যা বলেছি, কোনো পয়েন্টেই তারা সঠিক উত্তর দিতে পারেনি।’

খালেদা জিয়া বলেন, এমনি ওই অঞ্চলে একবার সিডর হয়েছে, একবার আইলা হয়েছে। তার মধ্যে মিঠা পানি থেকে লবণাক্ত পানি ঢুকবে। এটা হলে সুন্দরবনটা শেষ হয়ে যাবে। সে জন্য সবাই বলেছে এ প্রকল্পটি ওখানে না করার জন্য।

বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, আমরা কোনো সময় বলিনি বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করতে হবে। বিদ্যুৎ আমাদের প্রয়োজন আছে। সেটা এমন জায়গায় হতে হবে, যেখানে পরিবেশ এবং মানুষের ক্ষতি হবে না। রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পকে ‘লোকসানি’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘লাভ হলে ভাগ হবে, লোকসান হলে দায় আমাদের ঘাড়ে। প্রকল্পই তো লোকসানি, লোকসান তো হবেই। পনেরো বছর (প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়) পর ওই নেতারা, আমরা কোথায় থাকব জানি না। পরবর্তী প্রজন্মকে এর বোঝা বহন করে যেতে হবে।’

পদ্মা সেতু দেখে যেতে পারব কি না জানি না
খালেদা জিয়া দাবি করেন, বর্তমান সরকারের যেসব চুক্তির কথা শুনছেন, তার একটাও দেশের পক্ষে নয়। চুক্তিগুলো সম্পর্কে কেউ পরিষ্কার করে কিছু জানে না। সরকার এক একটা উন্নয়ন প্রকল্প নেয়, দুই মাস পর ওই প্রকল্প ব্যয় ডাবল-ত্রিপল হয়ে যায়। তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত পদ্মাসেতুর কিছু হয়নি। আমাদের সময় পদ্মাসেতুর ব্যয় সাড়ে আট হাজার বিলিয়ন ধরা হয়েছিল, আর এখন হয়েছে ৩২ হাজার কোটি টাকা। এ পর্যায়েও থাকবে না, আরও বাড়বে। তারপরও আমরা দেখে যেতে পারব কি না জানি না।’

প্রকল্প ব্যয় বাড়ার কারণ কমিশন
বিএনপির নেত্রী বলেন, প্রকল্প ব্যয় বাড়ার কারণটা হলো, এখানে কমিশনের ব্যাপার আছে। ওই জিনিসটা পকেটে নেয়, হিসাব-কিতাব করে তারপরে প্রকল্প ব্যয় ঠিক করা হয়। এভাবেই তারা কাজ করছে। এদের কারও কোনো দেশ প্রেম নেই। এরা নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি বলে দাবি করে। তিনি বলেন, মুক্তির সপক্ষের শক্তি আপনারা। তাহলে দেশটার এই দুরবস্থা করছেন কেন? একবার করেছিলেন, তারপর বহুদিন পর আবার মানুষের কাছে মাফটাফ চেয়ে এসেছেন। এখন আবার শুরু করছেন।

গণতন্ত্র না থাকলে জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটে
দেশে আইনের শাসন নেই দাবি করে খালেদা জিয়া বলেন, আইন শাসন সবার জন্য সমান নয়। আওয়ামী লীগ হলে একরকম, বিএনপি, অন্য পার্টি বা সাধারণ মানুষ হলে আরেক রকম। আওয়ামী লীগের লোকের অপরাধ করলেও, গুম, খুন, নারী নির্যাতন, লুটপাট এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে মারধর করলেও বিচার করা হয় না। ন্যায় বিচার বলে কিছু নেই। যেখানে ন্যায়বিচার না থাকে না, গণতন্ত্র থাকে না সেখানে জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটে।

যশোরে উদীচী, পল্টনে সিপিবির জনসভা, রমনার বটমূলে, গোপালগঞ্জে বোমা হামলার ঘটনার উল্লেখ করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ওই সময় কোনো অপরাধী, জঙ্গি ধরা পড়েনি। জেএমবি, হরকাতুল জিহাদের একটা লোককেও তারা ধরেনি। তিনি বলেন, ‘বিএনপি যখন ক্ষমতায় আসল। আমাদের সময়ও যে বোমাবাজি করেনি, তা নয়। কিন্তু আমরা তাদের বড় বড় নেতাদের জীবিত অবস্থায় ধরেছি। জীবিত কারণ এটাই, তাদের কাছ থেকে সত্যিকার তথ্য বের করা।

এর আগে বিএনপির চেয়ারপারসন দলের কমিউনিকেশন উইংয়ের তৈরি করা বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় নতুন আঙ্গিকে বিএনপির অফিশিয়াল ওয়েব সাইটের উদ্বোধন করেন।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়াও আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমির উদ্দিন সরকার, আ স ম হান্নান শাহ, মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *