বাঁধনহারা উল্লাস

Slider জাতীয় শিক্ষা

file

ঢাকা: উচ্ছ্বাসের ফল। বাঁধনহারা উল্লাস। এবার এইচএসএসি ও সমমানের ফলে সাফল্যের ধারা অব্যাহত রেখেছেন  শিক্ষার্থীরা। পাসের হার, মোট জিপিএ-৫ সংখ্যা, শতভাগ পাস করাসহ সব সূচকেই ভালো ফলাফল হওয়ায় উল্লসিত সবাই। প্রকাশিত ফলে দেখা গেছে, এবার উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষায় সমন্বিত পাসের ওপর ৭৪ দশমিক ৭০ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৫৮ হাজার ২৭৬ জন। গত বছর পাসের হার ছিল ৬৯ দশমিক ৬০ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ৪২ হাজার ৮৯৪ জন। সেই হিসাবে এবার উচ্চ মাধ্যমিকে পাসের হার বেড়েছে ৫ দশমিক ১ শতাংশ। এ ছাড়া পূর্ণাঙ্গ জিপিএ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে ১৫ হাজার ৩৮২ জন। গতকাল বেলা ১টায় সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এবারের ফলাফলের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এরপর বেলা ২টা থেকে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা বোর্ডগুলোর ওয়েবসাইট (িি.িবফঁপধঃরড়হনড়ধৎফৎবংঁষঃং.মড়া.নফ), নিজেদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং যে কোনো মোবাইল থেকে এসএমএস করে ফল জানতে পারেন। চলতি বছর ৩রা এপ্রিল থেকে ১২ই জুন এইচএসসির লিখিত পরীক্ষা চলে। এরপর ১১ থেকে ২০শে জুন পর্যন্ত চলে ব্যবহারিক পরীক্ষা।

গতকাল সকালে শিক্ষামন্ত্রী সব বোর্ডের চেয়ারম্যানদের সঙ্গে নিয়ে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে ফলাফলের অনুলিপি হস্তান্তর করেন। ফলাফল প্রকাশের আনুষ্ঠানিকতা সেরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাসের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে এতে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। আরেকটু বেশি আনন্দিত যে আমাদের মেয়ে শিক্ষার্থী বেড়ে গেছে এবং তাদের পাসের হার বাড়ছে। তবে এখানে আমি মনে করি, ছেলে-মেয়ে যে-ই হোক, সন্তান সন্তানই। যারা এবার কৃতকার্য হতে পারেনি, তাদের আরেকটু মনোযোগী হতে বলেন প্রধানমন্ত্রী। অভিভাবক ও শিক্ষকদের বলেন আরেকটু যত্নবান হতে।
৮টি সাধারণ বোর্ড, মাদরাসা এবং কারিগরি বোর্ডের অধীনে ৮ হাজার ৩৪৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মোট ১২ লাখ ১৮ হাজার ৬২৮ জন শিক্ষার্থী এ বছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নেয়। তাদের মধ্যে পাস করেছে ৮ লাখ ৯৯ হাজার ১৫০ জন। এর মধ্যে ৮টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৭২ দশমিক ৪৭ শতাংশ, পূর্ণ জিপিএ পেয়েছেন ৪৮ হাজার ৯৫০ জন। মাদরাসা বোর্ডে পাস করেছেন ৮৮ দশমিক ১৯ শতাংশ পরীক্ষার্থী, তাদের মধ্যে ২ হাজার ৪১৪ জন পেয়েছেন জিপিএ-৫। আর কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে এবার ৮৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ শিক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছেন; ৬ হাজার ৫৮৭ জন পূর্ণ জিপিএ পেয়েছেন।  শিক্ষামন্ত্রী জানান, চলতি বছর উচ্চ মাধ্যমিকে পাসের হারের দিক দিয়ে ছাত্রীরা এগিয়ে আছে। ছাত্রদের মধ্যে যেখানে পাসের হার ৭৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ ছাত্র; সেখানে ৭৫ দশমিক ৬০ শতাংশ ছাত্রী এবার পাস করেছে। কেউ পাস করেনি এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এবার ২৫টি। গত বছর ৩৫টি প্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষার্থী ফেল করেছিল।
এবার মোট ১৯টি বিষয়ে ৩৬টি পত্রে সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতিতে পরীক্ষা হয়। গত বছর ছিল ১২টি বিষয়ের ২৩টি পত্রে সৃজনশীল। গত বছরের তুলনায় সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতিতে বিষয় বেড়েছে ৭টি ও পত্র বেড়েছে ১৩টি।  বিদেশে ৭টি কেন্দ্রে ২৪৮ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ২৩২ জন পাস করেছেন। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৫৩ জন। মাদরাসা বোর্ডে গত বছরের চেয়ে এবার পাসের হার কমলেও জিপিএ-৫ বেড়েছে। এই বোর্ডে এবার ৮৯ হাজার ৬০৩ জন পরীক্ষার্থী অংশ গ্রহণ করে পাস করেছেন ৮২ হাজার ৫৫৮ জন। পাসের হার ৮৮ দশমিক ১৯ শতাংশ। গত বছর ছিল ৯০ দশমিক ১৯ শতাংশ। তবে জিপিএ-৫ বেড়েছে ৯৭৯ জন। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৪১৪ জন। গত বছর ছিল ১৪৩৫ জন। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার কমলেও বেড়েছে জিপিএ-৫। এবার পাসের হার ৮৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ গত বছর ছিল ৮৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ।
পাসে মেয়েরা, জিপিএ ছেলেরা এগিয়ে: এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলে ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে। এবার ৮টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে ছেলে পরীক্ষার্থী ছিল ৬ লাখ ৪৫ হাজার ৭৯৮ জন। এর মধ্যে পাস করেছে ৪ লাখ ৭৭ হাজার ৪১৭ জন। পাসের হার ৭৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ। জিপিএ জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৩২ হাজার ৩৮১ জন। ছেলেদের তুলনার মেয়ে পরীক্ষার্থী বেশি ছিল ২৯ হাজার ৩৩৫ জন।  মেয়েদের ৭৫.৬০ শতাংশ এবং ছেলেদের পাসের হার ৭৩.৯৩ শতাংশ। ছাত্রের তুলানয় ২ দশমিক ৭১ শতাংশ ছাত্রী বেশি উত্তীর্ণ হয়েছে।
জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের প্রায় ৮৫ শতাংশই বিজ্ঞানের: আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন চলতি বছরের উচ্চমাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষায় যত পরীক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছেন, তাদের প্রায় ৮৫ শতাংশই বিজ্ঞান ও গার্হস্থ্য বিভাগের শিক্ষার্থী। এবার আটটি শিক্ষা বোর্ডে মোট জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৪৮ হাজার ৯৫০ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ৪১ হাজার ৪৬৮ জনই বিজ্ঞান ও গার্হস্থ্য শাখার পরীক্ষার্থী। পাসের হারেও বিজ্ঞান ও গার্হস্থ্য শাখার পরীক্ষার্থীরা এগিয়ে। এই শাখা থেকে ১ লাখ ৯০ হাজার ৮৫১ জন পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছেন ১ লাখ ৫৮ হাজার ৪৭৬ শতাংশ। পাসের হার ৮৩ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। ব্যবসায় শিক্ষা শাখা থেকে ৩ লাখ ৩ হাজার ৩৪২ জন পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছেন ২ লাখ ২৫ হাজার ৭৯১ জন। গড় পাসের হার ৭৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৪ হাজার ৭৩১ জন। মানবিক, ইসলাম শিক্ষা ও সংগীত শাখা থেকে ৫ লাখ ১২ হাজার ৮৬০ জন পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছেন ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৫৩৬ জন। পাসের হার ৬৭ দশমিক ৩৭ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ২ হাজার ৭৫১ জন। তিন শাখার মধ্যে এই শাখার ফল সবচেয়ে খারাপ।
৮৪৮ কলেজে সবাই পাস, সবাই ফেল ২৫ প্রতিষ্ঠানে: এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় এবার শতভাগ শিক্ষার্থী পাসের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা গতবারের চেয়ে ২৮৫টি কমেছে; সেই সঙ্গে কমেছে কেউ পাস করেনি এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা। ৮টি সাধারণ বোর্ড, মাদরাসা এবং কারিগরি বোর্ডের অধীনে ৮ হাজার ৩৪৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মোট ১২ লাখ ১৮ হাজার ৬২৮ জন শিক্ষার্থী এ বছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে ৮৪৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সব পরীক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিকে পাস করেছে, গত বছর এ সংখ্যা ছিল এক হাজার ১৩৩টি। আর ২৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষার্থী এবার পাস করতে পারেনি; গতবছর এ সংখ্যা ছিল ৩৫টি। সেই হিসেবে এবার শতভাগ শিক্ষার্থী ফেল করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১০টি কমেছে। এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় এবার ৭৪ দশমিক ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছেন, জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৫৮ হাজার ২৭৬ জন।
ফল পুনঃনিরীক্ষা: রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল অপারেটর টেলিটক থেকে আগামী ১৯ থেকে ২৫শে আগস্ট পর্যন্ত এইচএসসি ও সমমানের ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করা যাবে। ফল পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করতে জঝঈ লিখে স্পেস দিয়ে বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে বিষয় কোড লিখে ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে। ফিরতি এসএমএসে ফি বাবদ কত টাকা কেটে নেয়া হবে তা জানিয়ে একটি পিন নম্বর (পার্সোনাল আইডেন্টিফিকেশন নম্বর-চওঘ) দেয়া হবে। আবেদনে সম্মত থাকলে জঝঈ লিখে স্পেস দিয়ে ণঊঝ লিখে স্পেস দিয়ে পিন নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে যোগাযোগের জন্য একটি মোবাইল নম্বর লিখে ১৬২২২ নম্বরে এসএমএস পাঠাতে হবে। প্রতিটি বিষয় ও প্রতি পত্রের জন্য দেড়শ’ টাকা হারে চার্জ কাটা হবে। যেসব বিষয়ের দুটি পত্র (প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র) রয়েছে যে সকল বিষয়ের ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করলে দুটি পত্রের জন্য মোট ৩০০ টাকা ফি কাটা হবে। একই এসএমএসে একাধিক বিষয়ের আবেদন করা যাবে, এক্ষেত্রে বিষয় কোড পর্যায়ক্রমে কমা দিয়ে লিখতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *