ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকার, গনতন্ত্রের মানসকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার সারাদেশ জুড়ে যখন উন্নয়নের জোয়ার (২০০৯ থেকে বর্তমান পর্যন্ত) বইয়ে দিয়েছেন তখনও পিরোজপুর জেলার অন্তর্গত নাজিরপুর উপজেলাধীন বাংলাদেশের সবচেয়ে অবহেলিত মালিখালী (গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া উপজেলার কোলঘেষে অবস্থিত) ইউনিয়নটি উন্নয়ন বঞ্চিত রয়েই গেল। ইতিহাস ঐতিহ্যের বর্নিল দ্যুতিতে ভাস্বর এ ইউনিয়নটি যে একটি অবহেলিত জনপদ যেকোন সচেতন সুধী যাঁরা অন্তত একবার ইউনিয়নটিতে অবস্থান করেছেন তাঁরা অকপটে এ সত্যতা স্বীকার করে নিবেন । জনবহুল এক বর্ধিষ্ণু অঞ্চল আমাদের মালিখালী।
প্রায় ১২ হাজার ভোটার সমৃদ্ধ এ ইউনিয়নে হিন্দু ও মুসলমান সবাই সম্প্রীতির বন্ধনে বসবাসরত। ঈদ ও পূজায় ইউনিয়নবাসী নানা উৎসাহÑউদ্দীপনায় মহাসমারোহে উৎসব দুটি পালন করে থাকেন। এখানে রয়েছে একটি ডাকঘর, কোন কলেজ নেই, একটি ইবতেদায়ী ও একটি কওমীমাদ্রাসা থাকলেও নেই কোন দাখিল-আলিম মাদ্রাসা, বাজার রয়েছে দুটি,একটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা পর্যাপ্ত,নেই কোন সরকারীÑবেসরকারী ব্যাংক এর শাখা, ইউনিয়নের অধিকাংশ বাড়ীতে নেই গভীর নলকূপ এবং বিদ্যুতের সুব্যবস্থা। যদিও ইতোমধ্যে মালিখালীতে কয়েক কিলোমিটার বিদ্যুতের খুঁটি এসে গেছে। মানুষের মনে কোন দুঃখ থাকতনা যদি ইউনিয়নবাসীর আশা আকাক্সক্ষার প্রতিফলন হিসেবে বাঁশবাড়ীয়া থেকে চাঁদকাঠী পর্যন্ত পাকা সড়কটি নির্মানের মাধ্যমে তাদের যুগ যুগ ধরে লালিত স্বপ্নটির বাস্তবায়ন হতো। এ ইউনিয়নের ঐতিহ্যের এক পবিত্র বিদ্যাপীঠের নাম মালিখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, যে বিদ্যালয়ের সুনাম বাংলাদেশ সহ বিশ্বের অনেক দেশেই রয়েছে। ১৯২১ সনে প্রতিষ্ঠিত এ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী বাংলাদেশ তথা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ অনেক পদে দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছেন। ইউনিয়নের যোগাযোগ ব্যবস্থার বেহাল দশার কারনে হয়তো সরকারী ছুটিতেও এসব ইউনিয়নরতœ মুখগুলো বাড়ীতে আসতে চাননা। যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুন্নত থাকায় হয়তোবা মাননীয় এমপি,উপজেলা চেয়ারম্যান এমনকি প্রশাসনিক কোন কর্মকর্তাও এ ইউনিয়নে আসতে চাননা। অবহেলিত আমাদের এ ইউনিয়নে রয়েছেন দুজন সচিব, দুজন ম্যাজিস্ট্রেট, মেরিন-বিএসসি-ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার, বেশ কয়েকজন এমবিবিএস ডাক্তার, অনেক সরকারী-বেসরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সহ অসংখ্য অধ্যাপক-প্রভাষক-শিক্ষক। প্রতি ঘরে না হলেও প্রতি বাড়ীতে অন্তত একজন গ্রাজুয়েট পাওয়া যাবে এমন কথা অনস্বীকার্য।
ঢাকা অথবা দেশের যেকোন শহরে যেতে হলে (বর্ষাকাল ব্যতিরেকে) সূর্য ওঠার পূর্বে ঘুম থেকে উঠে কয়েক মাইল হেঁটে অথবা অতিরিক্ত অর্থ খরচা করে মোটর সাইকেল ভাড়া করে তবে পৌঁছতে হয় বাসস্ট্যান্ডে। আর বর্ষাকাল এলে তো মহাবিপদ, স্যান্ডেল বা জুতা হাতে করে নিয়ে যেতে হবে ট্রলারঘাটা পর্যন্ত। অতঃপর কয়েকঘন্টা ব্যয় করে তবে পৌঁছতে হবে বাসস্ট্যান্ডে। এ যে কত কষ্টের তা একমাত্র ইউনিয়নবাসী উপলব্ধি করতে পারে। অথচ আমাদেরই রয়েছে গৌরবান্বিত অতীত। মালিখালী ইউনিয়নের অহংকার এক সময়ের স্বনামধন্য দুই নেতৃত্ব প্রয়াত গোপাল বসু এবং প্রয়াত নিরোদ বিহারী নাগ এ অঞ্চলের এমপি ছিলেন। স্বমহিমায় প্রোজ্জ্বল এ দুই নেতৃত্বের বাস ছিল যে ইউনিয়নে সে ইউনিয়নের যোগাযোগ ব্যবস্থা এত অনুন্নত থাকার তখনকার কারণ না জানি গ্রাম পর্যায়ে যোগাযোগ প্রযুক্তির বেহাল দশা। তারপরও কবি কাজী নজরুলের লেখা থেকে বলতে চাই-“জননীর স্তন্য পানে যদি কোন ঋণ থাকে তবে তারও চেয়ে বড় ঋণ আমাদের দেশ জননীর কাছে, যার জলবায়ূ রসধারায় আমাদের প্রাণ-মন-দেহ অনুক্ষণ সঞ্জীবিত হয়ে উঠেছে। যে দেশ আমার পিতার জননী, আমার জননীর জননী।” ১৯৯১ থেকে শুরু করে বর্তমান পর্যন্ত সকল জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল যদি পর্যালোচনা করি তাহলে দেখা যাবে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ প্রতিটি নির্বাচনে রেকর্ড সংখ্যক ভোট পেয়ে আসছে। ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার গঠন করায় মালিখালী ইউনিয়নের কোন উন্নয়ন সম্ভব হয়নি হয়তোবা এ কারনে যে বিএনপি দলীয় ভাবে কাজ বন্টন করায় এ এলাকার আওয়ামীলীগ থেকে নির্বাচিত সাংসদ প্রয়াত শুধাংশু শেখর হালদার আওয়ামীলীগের ভোট ব্যাংক বলে খ্যাত মালিখালী ইউনিয়নের উন্নয়নে ব্যর্থ হন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ সরকার গঠন করলেও এ অঞ্চল থেকে দেলোয়ার হোসেন সাঈদী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন কাজেই সেবারও ইউনিয়নটি ছিল উন্নয়ন বঞ্চিত। ২০০১ সালে আবার বিএনপি ক্ষমতায় গেল ।
দেলোয়ার হোসেন সাঈদী এ অঞ্চল থেকে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেন। মালিখালী আওয়ামীপ্রধান এলাকা হওয়ায় এখানে কোন উন্নয়নই তিনি করলেননা। ভাগ্যাহত মালিখালীবাসী সেই তিমিরেই রয়ে গেল। বিগত এই নির্বাচনগুলিতে মালিখালীবাসী আওয়ামীলীগকে ভোট দিলেও উল্লেখিত জটিলতার কারনে আওয়ামীলীগ এ ইউনিয়নের উন্নয়নে এগিয়ে আসতে পারেনি। যেভাবেই হোক ইউনিয়নটি অবহেলার কবলে পড়ে সেই অনুন্নতই রয়ে গেছে। এ ইউনিয়নের অতীত থেকে শুরু করে বর্তমান চেয়ারম্যান কে কতটুকু ইউনিয়ন উন্নয়নে এগিয়ে এসেছেন তা আজ ইউনিয়নবাসী অবগত। অত্যন্ত গর্বের বিষয় যে ২০০৮ এর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশের একজন শক্তিশালী প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে আমাদের পিরোজপুর-১ আসনের এমপি বীরমুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব একেএমএ আউয়াল মহোদয় পরাজিত করেছেন। যে সাঈদীর নিকট বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের মেধাবী নেতৃত্ব পিরোজপুর-১ আসনের সাবেক এমপি প্রয়াত সুধাংশু শেখর হালদার দু -দুবার হেরে গেছেন। সেই আসনে আমাদের আলহাজ্ব একেএমএ আউয়াল মহোদয় তাকে অনায়াশে পরাজিত করে আলোড়ন সৃষ্টিকারী নজির স্থাপন করেছেন। এ ধরনের সাফল্য নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবী রাখে। এমন সাফল্য সাধারন জনগনের অকৃত্রিম ভালবাসারই প্রতিফলন এ বিষয়টি এমপি মহোদয়কে উপলব্ধি করতেই হয়। আর এ ভালবাসা দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের মালিখালী ইউনিয়ন যে অগ্রগন্য তা নিশ্চয়ই এমপি মহোদয় অবগত আছেন। ইউনিয়নের প্রায় ৯০% অধিবাসীই আওয়ামীমনা হওয়ায় এবং সে সময় মালিখালীর লোকজন আলহাজ্ব এ কে এম এ আউয়াল মহোদয়কে তাদের হৃদয় দিয়ে ভালবাসার কারনে সকলেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছেন যা ভাববার বিষয় বটে। মালিখালী ইউনিয়নের রেকর্ড সংখ্যক ভোট এমপি মহোদয়ের বাক্সে বেশী যাওয়ার কারনে সাঈদী সাহেব কয়েক হাজার ভোটে পরাজিত হয়েছেন। কাজেই মালিখালী ইউনিয়নবাসী এমপি মহোদয়ের নিকট এ ইউনিয়ন উন্নয়নের দাবী রাখতেই পারে রেখেছিলও। আর এমন ইউনিয়নবাসীর পাশে সমবেদনায় সঙ্গী হতে এমপি মহোদয় সর্বাগ্রে এগিয়ে আসবেন এ বিশ্বাস লালন করে এসেছিল ইউনিয়নের সাদা মনের মানুষগুলো। ইউনিয়নবাসী অনেক আশায় বুক বেঁধেছিল যে আলহাজ্ব একেএমএ আউয়াল মহোদয়ের আমলে মালিখালী ইউনিয়নের আর কোন উন্নয়ন হোক বা না হোক অন্তত বাঁশবাড়ীয়া থেকে চাঁদকাঠী পর্যন্ত পাকাসড়কের নির্মান কাজটি সুসম্পন্ন হবে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় সে স্বপ্ন বিগত (২০০৯-২০১৪) পাঁচ বছরেও এমনকি আজও পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। এ ব্যাপারে মালিখালী ইউনিয়নের বর্ষীয়ান, অভিজ্ঞ ও ত্যাগী নেতৃবৃন্দের সাথে বিষয়টি আলোচনা করা হলে তারা বিষয়টির ব্যাখ্যা দিলেন এভাবে যে “ এমপি মহোদয় ঐ পাঁচ বছরে নাজিরপুর উপজেলায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন।
নাজিরপুরে অনেক বড় ক্যাম্পাস নিয়ে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মহিলা মহাবিদ্যালয় স্থাপন সহ বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,মসজিদ,মন্দির বিভিন্ন ইউনিয়নের রাস্তাঘাট পুনঃনির্মান করেছেন। অথচ মালিখালী ইউনিয়নের কোন উন্নয়ন হয়নি, এ ব্যর্থতা সম্পূর্নরূপে মালিখালী ইউনিয়নলীগ পরিচালনাকারী অপরিপক্ক আওয়ামীলীগ নেতা সহ দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের যারা ইউনিয়নের উন্নয়নের কথা চিন্তা না করে নিজেদের আখের গোছাতেই ব্যস্ত রয়েছে। তারা এক পর্যায়ে এও বললেন যে মালিখালীবাসীর একমাত্র লজ্জা এজন্য যে মালিখালী ইউনিয়নলীগের তত্ত্বাবধানের জন্য অখ্যাত এবং অনভিজ্ঞ কাউকে বহাল করা হয়েছে। আমাদের ইউনিয়ন আজ যোগ্য নেতৃত্বহীন এক বন্ধ্যাদশায় উপনীত হতে চলেছে। আপনারা যাদের মাধ্যমে উন্নয়ন প্রত্যাশা করবেন তাদের কাঁধে চেপে বসেছে দুর্নীতির ভূত। কথায় আছেনা As is the headmaster so his institution. . আমাদের ইউনিয়নের রাজনৈতিক অবস্থা এ ইংরেজী প্রবাদটির অর্থের সত্যতা বহন করছে।” আর যাই হোক তাঁদের এ মন্তব্যকে পুরোপুরি ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেওয়া যায়না। আসলে মালিখালীর উন্নয়ন করতে হলে মালিখালী ইউনিয়নলীগ পরিচালনাকারী আওয়ামীলীগ নেতা সহ দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদেরই এগিয়ে আসতে হবে। তারা মালিখালী ইউনিয়নের উন্নয়নের জন্য এমপি মহোদয়ের নিকট যেকোন দাবী নিয়ে দাঁড়ালে তিনি তা উপেক্ষা করতে পারবেননা । কিন্তু উন্নয়ন না করে শুধুই নিজেদের কথা ভাবলে জনগনতো তাদের প্রত্যাখ্যান করবেই। মালিখালী ইউনিয়নের আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দের নিকট জনগনের প্রত্যাশা যে তারা ইউনিয়নের উন্নয়নের জন্য কিছু একটা করুক।
আমাদের এ ইউনিয়নে ৯০% এরও বেশী আওয়ামীলীগ সমর্থিত ভোটার থাকা সত্ত্বেও ২০০৮ এর জাতীয় নির্বাচনের পর বর্তমান অর্থাৎ ২২ ফেব্র“য়ারী ২০১৬ এর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন বাদে যে দুটি স্থানীয় নির্বাচন হয়েছে সেখানে আওয়ামীলীগের ভোট কমেছে বৈ বাড়েনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বর্ষীয়ান আওয়ামীলীগ নেতা ক্ষুব্ধ কন্ঠে প্রকাশ করলেন এভাবে যে “ উক্ত বিষয়টির কারণ খতিয়ে দেখলে যেটা পাওয়া যায় তা হল তৃণমূল পর্যায়ের যে সকল নেতৃত্ব বিএনপি সরকারের আমলে অর্থাৎ আওয়ামীলীগের দুর্দিনে (২০০১-২০০৯) মালিখালী ইউনিয়নের আওয়ামীলীগকে টিকিয়ে রাখতে সমর্থ হয়েছে সে সকল নেতৃত্বকে অবহেলা করে নতুন মুখ দিয়ে ইউনিয়নলীগ পরিচালনা করার মত ভুল সিদ্ধান্তের কারনে। যার বাস্তব বহিঃপ্রকাশ দেখা গেছে বিগত ২০১১ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের মধ্যদিয়ে।
ই্উনিয়নলীগ পরিচালনাকারী আওয়ামীলীগের হাইব্রিড নেতা অনেক দৌঁড়ঝাপের মাধ্যমে আওয়ামীলীগ সমর্থিত পংকজ বড়াল নামক একজন প্রার্থী দাঁড় করাতে সমর্থ হয়েছিল বটে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ঐ প্রার্থীর পক্ষে আর দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব হয়নি। সুমন মন্ডল মিঠু (বর্তমান চেয়ারম্যান)এর পক্ষে সাধারন জনগন ভোটের ব্যালট নিয়ে এগিয়ে গেছে। মিঠুর বাবা প্রয়াত রমেশ চন্দ্র মন্ডলের জনগনের মাঝে রেখে যাওয়া গুড উইল আর তার চেয়েও বড় বিষয় হলো মালিখালী ইউনিয়নের হাইব্রিড নেতার সমর্থন যেদিকে গেছে সাধারন জনগন তার বিপরীত দিকে অর্থাৎ মিঠুর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। যদি ঐ নেতার সমর্থন মিঠুর পক্ষে যেত তাহলে সাধারন জনগন মিঠুর বিপক্ষে অবস্থান নিতেও দ্বিধা করতনা যা উপলব্ধির বিষয়। বিগত ২৭ ফেব্র“য়ারীর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ফলাফল ঐ একই ইঙ্গিত বহন করছে বললেও ভুল হবেনা। এ ইউনিয়নে যত ভোট কাষ্ঠ হওয়ার কথা তা হয়নি কারন অনেকেই অভিমান করে ভোট দিতে আসেননি। এ ইউনিয়নের কয়েকজন নেতার উপর সাধারন জনগন এতটা ক্ষুব্ধ ছিল যে ভোটের পনের-বিশ দিন আগে কোন কোন নেতাকে ইউনিয়নের বাইরে থাকতে হয়েছে কারন নেতারা অন্তত এইটুকু বুঝতে পেরেছিল যে তাদের কারও কারও মুখ দেখলে সাধারন জনগন হয়তো দোয়াত-কলমে-ভোট নাও দিতে পারে।” রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গীতাঞ্জলি কাব্যের একটি উদ্ধৃতির অবতারনা না করলেই নয়। রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলি কাব্যে কবির কালজয়ী উদ্ধৃতি “তোমার পতাকা যারে দাও তারে বহিবারে দাও শকতি।” উদ্ধৃতিটির মর্মার্থ বিশ্লেষন করলেই এর অন্তর্নিহিত বিষয়টি যেকোন ব্যক্তির বোধগম্য হওয়ার কথা। যেকোন গুরুত্বপূর্ণ কাজের দায়িত্ব সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের উপর অর্পণ করা যুক্তিযুক্ত যে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সে কাজটির জন্য যথোপযুক্ত।। অল্পবয়স্ক, পাতলা রক্তবাহী অকালপক্ক দিয়ে আর যা-ই হোক কোন মহৎ কাজের সুসম্পন্নতা পাওয়া যেমন কঠিন তেমনি এর সুস্পষ্ট সুন্দর ফলপ্রসূ অগ্রযাত্রা সফলভাবে পাওয়া সম্ভব নয়। রাজনীতির ক্ষেত্রে নীতি নির্ধারককেও হতে হবে বর্ষীয়ান- প্রজ্ঞাবান, নীতিতে অবিচল ও ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন।
কারণ তার নির্দেশেই গোটা ইউনিয়নবাসী সঠিক দিকনির্দেশনা পাবে। সমাজে শান্তি বিরাজ করবে, সর্বসাধারন্যে ভালমন্দবোঝার চৈতন্য জেগে উঠবে। এক্ষেত্রে ন্যায়পরায়ন, সর্বজনশ্রদ্ধেয় ব্যক্তিকে মালিখালী ইউনিয়নলীগ পরিচালনার দায়িত্বে বহাল করা যেতে পারে। যিনি ব্যক্তি স্বার্থের উর্দ্ধে থেকে ইউনিয়নের উন্নয়নে নিজেকে উৎসর্গ করতে পারেন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক কলেজের অধ্যক্ষ, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য এই পদগুলোতে অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করে প্রমোশনের পর প্রমোশন নিয়েই তবে নিজেকে উক্ত পদে অধিষ্ঠিত করতে হয়। একজন সচিব কিন্তু সরাসরি সচিব পদে অভিষিক্ত হয়নি তাঁকেও অভিজ্ঞতা অর্জনের প্রক্রিয়ায় স্তরের পর স্তর পার হয়ে তবে স্বীয় পদটি পেতে হয়েছে। রাজনীতির ক্ষেত্রেও যে এ বিষয়টির বিবেচনা নেই একথা বিশ্বাস করতে পারিনা। কিন্তু মালিখালী ইউনিয়নের ক্ষেত্রে যেটা দেখা যাচ্ছে সেটা অত্যন্ত দুঃখের ও লজ্জার। গোবরে যদি পদ্মফুল ফোটেও সেটা পদ্মফুলই,যে পদ্মফুলটি সমাজে সর্বজন গ্রহনযোগ্য। কিন্তু হঠাৎ করেই অর্থাৎ রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ হলেই কোন ব্যক্তি সর্বজন গ্রহনযোগ্য বলে বিবেচিত হওয়ার কথা নয়। অর্থ থাকলেই একটি কলাগাছকে অনেক জ্ঞানীগুনীদের উপেক্ষা করে সবার মাথার উপর বসিয়ে দেওয়া যায়না।
এটা সম্ভব হলে তাতে ক্ষমতার অপব্যবহার হয় কিন্তু ভবিষ্যতের জন্য রাজনীতির সঠিক মেধা খুঁজে পাওয়া সম্ভব হয়না। মালিখালী ইউনিয়ন নামক সুন্দর ফুলবাগানটি পরিচর্যার জন্য এ অঞ্চলের এমপি যে সকল মালীকে দায়িত্ব দিয়েেিলন তাদের মধ্যে কতিপয় মালীর কারনে ফুলবাগানটির শ্রী অধিকাংশই ম্লান। গল্পের রাজার সেই তিনটাকার প্রাণীর কারনে কোটি টাকার বাগান নষ্ট হওয়ার মতই অবস্থা। মালিখালীর এহেন অবস্থার কথা বেশ কয়েকবার এমপিকে বিভিন্ন মহল থেকে বিভিন্ন আঙ্গিকে অবগত করানো হলে আমাদের এমপি মহোদয় মালিখালীর এহনে পরিস্থিতির বিষয়টি না জানি উপলব্ধিতে এনে ইউনিয়নের লড়া গ্রামের শ্রী শ্রী জগদানন্দ আশ্রমে একবার আওয়ামীলীগের এক বর্ধিত সভায় হাজার হাজার জনগনের সামনে ঘোষনা দিয়েছিলেন আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে কোন দুর্নীতিবাজের স্থান হবেনা।ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে শক্ত হাতে ইউনিয়ন পরিচালনার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন। হাজার হাজার টাকা উৎকোচ গ্রহনের মাধ্যমে যে সকল নেতা সাধারণ জনগনের কাছে আওয়ামীলীগের ভাবমূর্তি নষ্ট করে চলেছে তাদেরকে ওই সকল টাকা ফেরৎ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। দল ও ইউনিয়নের শৃংখলা পরিপন্থি কোন কাজ পুনরায় হলে কমিটি ভেঙে দেওয়ার সতর্কবানী শুনিয়েছিলেন। কিন্তু ২২ তারিখের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের নমিনেশনের ক্ষেত্রে এমপি মহোদয় তার সেই বর্ধিত সভার প্রতিশ্র“তি মোতাবেক চেয়ারম্যান এর নামের পরিবর্তে জনগনের কাছে বিতর্কিত এবং অখ্যাত সেই ব্যক্তির নাম কেন্দ্রে প্রেরন করতে কেন কুন্ঠিত হলেননা এ প্রশ্ন থেকেই যায়। ছিনতাই, চাঁদাবাজি, সালিস এর নামে জনগনের কাছ থেকে হয়রানি মূলক মুসলেকা’র টাকা আত্মসাৎ এর মাধ্যমে মালিখালী ইউনিয়নের লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ সহ সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছিল আওয়ামীলীগের নাম ভাঙিয়ে খাওয়া কতিপয় অসাধু ও বর্বর ব্যক্তি। সাধারণ জনগন সহ ইউনিয়নের মধ্যে কর্মরত সকল চাকরিজীবী ছিল এই পান্ডাগুলোর ভয়ে আতংকিত। ইউনয়িন পরিষদ নির্বাচনে দলের ডেলিগেট ভোট না পেলেও এমপির হস্তক্ষেপে মালিখালী ইউনিয়নে সমাজ বিরোধী পান্ডাগুলোকে সরাসরি মদদ দেয়া সহ তাদের দিয়ে ইউনিয়নের মানুষের মনে ত্রাস সৃষ্টিকারী পেনাখালী ট্রজিডীর ১নং আসামী সেই টিপু সুলতানের নামটিই যখন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় পার্টি অফিসে পৌঁছায় তখন মালিখালী ইউনিয়নের সাধারণ জনগনের সিংহভাগ মানুষই হতাশার সাগরে তলিয়ে যাচ্ছিল।
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে তাই মালিখালীবাসীর মধ্যে চলছিল হতাশাময় উৎকণ্ঠা ও টানাপোড়েন। বিতর্কিত ব্যক্তিকেই না আউয়াল মহোদয় মালিখালীর চেয়ারম্যান করে নেন। এরূপ নানা অস্থিরতা ও অবক্ষয়ের মুখে মালিখালীর সাধারণ জনগন যখন একেবারেই অস্থির এবং দিশাহীন ঠিক তখনই তাদের তপ্ত হৃদয়ে প্রশান্তির একফোটা জল ছিটিয়ে দেশরতœ শেখ হাসিনা ইউনিয়নের সর্বস্তরের মানুষের জীবনে ফিরিয়ে দিলেন অনাবিল সুখ-স্বাচ্ছন্দময় স্বস্তির নিঃশ্বাস। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সুযোগ্য সভানেত্রী তাঁর রাজিৈতক মেধাবী বিশ্লেষন ও দূরদর্শিতায় তৃণমূলে তদন্ত সাপেক্ষে এমপি আউয়াল এর মনোনীত টিপু সুলতানের পরিবর্তে সুমন মন্ডল মিঠুকে মনোনয়ন দিয়ে মালিখালীবাসীকে ধন্য করলেন। উল্লেখ্য শেখ হাসিনার পরিচালনায় বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মনোনয়নের সুদক্ষ কমিটি এতটাই নিখুতভাবে বিচার বিশ্লেষনের মাধ্যমে সারা বাংলাদেশে নৌকা প্রতীকে প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছেন যেখানে ৯৮% প্রার্থীই বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছেন যা আওয়ামীলীগের ভাবমূর্তিকে আরও উজ্জ্বল করেছে। মালিখালীতেও কেন্দ্রীয় মনোনয়ন কমিটির মিঠুকে মনোনয়ন তাঁদের তৃণমূল রাজনীতির প্রতি সজাগ দৃষ্টির একটি বহি:প্রকাশ এবং তাঁদের এ মেধাদীপ্ত ও চুলচেরা বিশ্লেষনের মাধ্যমে সাধারণ জনগনের মনপূত মনোনয়ন যেন মালিখালীবাসীর জীবনে মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি । এমপি আউয়ালের মনোনীত প্রার্থী নমিনেশন না পাওয়ায় নির্বাচনে শেখ হাসিনা মনোনীত নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে এমপি তার অধীনস্ত নেতা কর্মীদের অবস্থান নিতে নির্দেশ দেওয়ায় মালিখালীর সাধারণ জনগন জগদানন্দ ঠাকুরের আশ্রমের বর্ধিত সভার এমপির ঐদিনের বক্তব্যকে জাস্ট একটা আই ওয়াস বলেই মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে। তাদের এ ভাবনাকে মিথ্যা ভাবার অবকাশও এখন থকছে কোথায়? এমপির এই আই ওয়াশ এর কারনে মালিখালীবাসী যে আলহাজ্ব একেএমএ আউয়াল মহোদয়ের নিকট কৃতজ্ঞতায় আবদ্ধ থাকবে সে ব্যাপারে তারা নিতান্তই দ্বিধাগ্রস্ত ।
মালিখালীবাসীর একটাই ভাষ্য বাংলাদেশের মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা মালিখালী বাসীর মুখে ফিরিয়ে দিলেন অনাবিল হাসি। মালিখালীর জনগনও বিদ্রোহী প্রার্থী টিপুর পক্ষের সকল রক্ত চক্ষুকে উপেক্ষা করে নৌকা প্রতীকে ভোট প্রদান করে দেড় সহস্রাধিক ভোটে নৌকাকে জয়ী করে দেশ জননী শেখ হাসিনার মনোনয়ন কে মূল্যায়িত করলেন। আর ভোটের ব্যাপারে নির্বাচনী মূহূর্তে মিঠুকে নির্বাচন করার সাহস যোগলেন টুঙ্গিপাড়ার মেয়র আহম্মেদ মীর্জা মামা ও টুঙ্গিপাড়ার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জননন্দিত জননেতা সোলায়মান বিশ্বাস। যাঁদের কাছে মালিখালীবাসী আজ অনেকটাই ঋণী। বিদ্রোহী প্রার্থীর ভয়ে যারা নৌকায় ভোট দিতে পারিনি মিঠুর বিজয়ে তারা যেন আরও বেশী খুশি। বিদ্রোহী পক্ষের টিপু সুলতান আনারস প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে লক্ষ লক্ষ টাকা ছড়ানোর কারনে কিছু অসচেতন মানুষের ভোট কিনে নিতে সমর্থ হয়েছে তাছাড়া পিরোজপুর জেলা আওয়ামীলীগ, উপজেলা আওয়ামীলীগের মত শক্তিশালী নেতাদের নৌকার প্রতি প্রত্যক্ষ বিরোধিতা সত্ত্বেও শেখ হাসিনার আশির্বাদপুষ্ট হিসেবে সর্বোপরি বঙ্গবন্ধুর নৌকায় মিঠুর ঐতিহাসিক বিজয় সম্ভব হয়েছে। নেতাদের কঠোর বিরোধিতা সর্বোপরি টাকা দিয়ে ভোট কেনা না হলে বিদ্রোহী প্রার্থী টিপুর আনারস প্রতীক অপেক্ষা কমপক্ষে ৩০০০ থেকে ৪০০০ ভোট বেশী পেয়ে জয়ী হত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী। মালিখালীর সাধারণ জনগন তাই আজ বঙ্গবন্ধু কন্যার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। তাঁরা দেশ জননী শেখ হাসিনার কাছে এক অপরিশোধ্য ঋণে ঋণী। তাইতো ঘরে ঘরে রোজা রেখে নামাজ আদায় করে মহান আল্লাহর দরবারে শেখ হাসিনার জন্য দোয়া দরুদ পড়ে দীর্ঘায়ূ কামনা করছে মালিখালী ই্উনিয়নের সিংহভাগ মুসলিম জনগন, মন্দিরে মন্দিরে কাসর ঘন্টা বাজিয়ে দেবতার পদমূলে পূজা দিয়ে পরম করুণাময় ঈশ্বরের নিকট দেশরতেœর জন্য দীর্ঘজীবন প্রার্থনা করছে ইউনিয়নের হিন্দু ধর্মাবলম্বী নরনারী। মালিখালীর সাধারন জনগনের মনে স্বস্তি¡ ফিরলেও অর্জিত স্বাধীনতা রক্ষার শংকায় তারা এখনও আতংকিত রয়েছে। মালিখালী ইউণিয়নের ঐসকল দুস্কৃতিকারী পান্ডাদের অত্যাচার আর নির্যাতনের ভয় সারাক্ষন তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে তাদের। তারপরও ডিজিটাল বাংলায় মিডিয়া সাথে থাকায় তারা মমতাময়ী শেখ হাসিনার কাছে যেকোন সংবাদ অচিরে পৌঁছে দিয়ে দেশরত্নের সার্বিক সহযোগীতা পাবে এটাই সর্বশেষ সান্ত্বনা।
মালিখালী ইউনিয়নের যুগযুগ ধরে লালিত স্বপ্ন বাঁশবাড়ীয়া থেকে চাঁদকাঠী পর্যন্ত একটি পাকা সড়ক পাওয়া। এক কিলোমিটার পাকা রাস্তা নেই নাজিরপুরের এ ইউনিয়নটিতে।বিশেষ সূত্রে জানা গেছে মালিখালীবাসী শেখ হাসিনার দৃিষ্ট কাড়তে সক্ষম হওয়ায় বাঁশবাড়ীয়া থেকে চাঁদকাঠী পর্যন্ত পাকা রাস্তার ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রিয়মুখ জননন্দিত জননেতা বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি মহোদয়কে সরাসরি মালিখালী ইউনিয়নের রাস্তার বিষয়টি অচিরেই সমাধা করার জন্য বিশেষভাবে বলেছেন। আমরা ইউনিয়নবাসী রইলাম বহুদিনের প্রতীক্ষিত বাঁশবাড়ীয়া থেকে চাঁদকাঠী পর্যন্ত পাকা সড়কের কাজ শুরু হওয়ার সেই মহিমান্বিত দিনটির অপেক্ষায়। পরিশেষে মালিখালী ইউনিয়নের গর্ব বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠতম তরুন প্রতিভাবান কবি আবুল হাসানের উদ্ধৃতির অবতারনা করে মালিখালী ইউনিয়নের রাজনৈতিক বিশ্লেষন ও উন্নয়ন সম্পর্কিত এ প্রতিবেদনের পরিসমাপ্তি টানতে চাই।
“ ঝিনুক নীরবে সহ ঝিনুক নীরবে সয়ে যাও
ভেতরে বিষের বালি মুখ বুজে মুক্তা ফলাও”
লেখক:
প্রাণকৃষ্ণ বিশ্বাস প্রান্ত
বিএ(অনার্স)এমএ (ইংলিশ)বিএড এমএড (ঢাবি)