‘বিরোধী দল নির্মূলের নীলনকশা বাস্তবায়ন করছে সরকার’

Slider জাতীয় রাজনীতি

25516_rr

 

আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালে ক্ষমতায় যাওয়ার পর থেকে সুপরিকল্পিতভাবে বিরোধী দল-মতকে নির্মূল করার নীল নকশা বাস্তবায়ন করে চলেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, নীলনকশার অংশ হিসেবে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করা হয়েছে। ওয়ান ইলেভেন সরকারের আমলে আওয়ামী লীগ নেতাদের নামে দায়েরকৃত প্রায় ১০ হাজার মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে। অথচ বিএনপির নেতাদের নামে করা মামলাগুলো সচল করা হয়েছে। বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে সাত বছরের সাজা দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ মওদুদ আহমদের বাড়ি নিয়ে রায় বিএনপিকে দুর্বল করার কৌশলের অংশ। আজ দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। মির্জা আলমগীর বলেন, মওদুদ আহমদের বাড়ির মামলা প্রমাণ করে, জঙ্গিবাদ নির্মূল বা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা নয়, যেকোনো মূল্যে ক্ষমতায় টিকে থাকাই এই সরকারের একমাত্র লক্ষ্য। তিনি সরকারকে এই ‘ভয়াবহ পথ’ থেকে সরে আসার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, যখন জাতি উগ্রবাদের বিপক্ষে সংকট মোকাবিলা করছে, তখন গোটা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা জরুরি। এই অবস্থায় বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করার প্রক্রিয়া শুভ ফল বয়ে আনবে না। আমরা এই প্রক্রিয়ার নিন্দা জানাই। একইসঙ্গে সরকারকে এই ভয়াবহ পথ থেকে সরে এসে গণতন্ত্রের পথে ফিরে আসার আহ্বান জানাই। জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় সরকারের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, পুলিশ সন্দেহভাজন হিসেবে যাদের ধরছে, তাদের বিচারের আওতায় না এনে ৯০ শতাংশকে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হচ্ছে। এতে সন্দেহ জঙ্গিবাদের শিকড় খোঁজার ক্ষেত্রে সরকারের কতটুকু আন্তরিকতা আছে, তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, জাতীয় দায়িত্ব থেকে খালেদা জিয়া জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বিএনপির প্রাথমিক আলোচনা শুরু হয়েছে। এটি ফলপ্রসূ হলে গণমাধ্যমকে জানানো হবে। এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা আলমগীর বলেন, জামায়াতে ইসলামীকে জোটে রাখা না রাখা প্রসঙ্গে প্রফেসর এমাজউদ্দীন আহমদ যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা তাঁর ব্যক্তিগত মতামত। এমাজউদ্দীন আহমদ তাঁর বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রচার হওয়ার পর একটি প্রতিবাদ দিয়েছেন। সেখানে স্বব্যাখ্যা আছে। মির্জা আলমগীর বলেন, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগের নির্বাচনগুলো অনেক সুষ্ঠু হয়েছে। কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা সংবিধান থেকে বাতিলের পর দেশের নিবাচনী ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটসহ দেশে আজ একের পর এক বিভিন্ন ধরণের সংকট দেখা দিচ্ছে। কেয়ারটেকার ব্যবস্থা বাতিলের কারণেই আজকের এই সংকট। কিন্তু সরকার বিরোধীদলকে নিশ্চিহ্ন করার টার্গেট করেছে। এজন্য তারা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। আমাদের দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে খালাস দেয়া একটি মামলায় আপিল করে তাকে ৭ বছরের সাজা দেয়া হয়েছে। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন দাবি করেন, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ব্যক্তিগত উদ্যোগে মওদুদ আহমদকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, ওই বাড়িটি এক অস্ট্রিয়ার নাগরিকের ছিল। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর তিনি চলে গেলে তা অর্পিত সম্পত্তি ভেবে ভুল করে সরকার নিজের করে নিয়ে নেয়। পরে তা আবারও ওই অস্ট্রিয় নাগরিককে ফিরিয়ে দেওয়া হলে তিনি তা বিক্রি করেন। যা মওদুদ আহমেদের ভাইয়ের নামে মালিকানা হয়। সেখানে মওদুদ আহমেদ ৩৭ বছর ধরে বাস করছেন। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক আবুল খায়ের ভূইয়া, সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ ও আবদুল আওয়াল খান উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *