জিয়া-তামিমকে ধরিয়ে দিলে পুরস্কার ২০ লাখ টাকা জঙ্গি হামলার মাস্টারমাইন্ড

Slider জাতীয় ফুলজান বিবির বাংলা

 

25481_f2
সাম্প্রতিক সময়ে জঙ্গি হামলার পেছনে কানাডা প্রবাসী তামিম চৌধুরী ও সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত পলাতক মেজর সৈয়দ মো. জিয়াউল হক মাস্টারমাইন্ডের ভূমিকায় আছেন বলে জানিয়েছেন পুলিশের আইজি একেএম শহীদুল হক। এ দুইজনকে ধরিয়ে দিলে ২০ লাখ টাকা করে পুরস্কারের ঘোষণাও দিয়েছেন তিনি। পুলিশ প্রধান বলেন, পলাতক থেকে মেজর জিয়াউল জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম ও তামিম জেএমবি’র নেতৃত্ব প্রদান করছে। গুলশান ও শোলাকিয়ায় ঈদ জামাতে নারকীয় হামলার ঘটনায় তারা পরিকল্পনাকারী। তাদের অনুসারীরা ওই হামলা চালিয়েছে। তাদের দুইজনকে ধরিয়ে দিতে পারলে ২০ লাখ করে মোট ৪০ লাখ টাকা পুরস্কার দেয়া হবে। তথ্যদানকারীর নিরাপত্তার স্বার্থে নাম ও পরিচয় গোপন রাখা হবে। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসনাত করীমের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘হাসনাত করিম পুলিশের নলেজে আছে’। গতকাল দুপুরে রাজধানীর ফুলবাড়িয়ায় পুলিশের হেডকোয়ার্টারে সাম্প্রতিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। আইজিপি বলেন, বর্তমান সময়ে দেশীয় জঙ্গিরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তারা ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে মানুষকে বিপদগামী করছে। তারা ইসলামের নামে নিরীহ মানুষকে হত্যা করছে যা ইসলাম আদৌও সমর্থন করে না বলে দেশের আলেম ও ওলামারা মত দিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে জেএমবি ও  আনসারুল্লাহ বাংলা টিমসহ আরো কিছু জঙ্গি সংগঠন কয়েকটি হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। ওই হামলায় দুইজন মাস্টারমাইন্ড হিসাবে কাজ করছে বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। পলাতক জঙ্গি মেজর সৈয়দ মো. জিয়াউল হক জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের নেতৃত্ব প্রদান করছে। অপরদিকে কানাডা প্রবাসী তামিম চৌধুরী জেএমবি’র নেতৃত্ব প্রদান করছে। পুলিশ তাদের খুঁজছে। তাদের ধরতে পুলিশ জনগণের সহযোগিতা চাইছে। যদি তাদের কেউ ধরিয়ে দেয় তাহলে তাদের প্রত্যেকের জন্য ২০ লাখ টাকা পুরস্কার দেয়া হবে। তাদের ধরা গেলে ওইসব ঘটনায় তাদেরকে কারা মদত দিয়েছে তা উদঘাটিত হবে। এছাড়াও তাদের সঙ্গে আর কারা জড়িত আছে তাও জানা যাবে।
তিনি আরো বলেন, গুলশান, শোলাকিয়া এবং কল্যাণপুরের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা হয়েছে। আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। ওই মামলাগুলো পুলিশ তদন্ত করছে। তদন্তে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে এসব হামলার পেছনে জড়িতরা হচ্ছে ‘হোম গ্রোন জঙ্গি’। এরা মূলত জেএমবি’র সদস্য। তারা বিভিন্ন নামে হামলা চালায়। পুলিশ  মামলার তদন্তে সব তথ্য যাচাই-বাছাই করছে। অচিরেই এ ঘটনার পূর্ণাঙ্গ রহস্য উন্মোচন হবে। দেশবাসীকে বাংলাদেশের পুলিশের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করতে চাই, আপনারা আতঙ্কিত হবেন না। কোনো গুজবে কান দিবেন না। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জনমত গঠনে ভূমিকা পালন করুন। তাদের দমনে পুলিশকে সহায়তা করুন। জঙ্গিদের সব কর্মকাণ্ডকে দেশের মানুষ তীব্রভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা মারা যাওয়ার পর তাদের লাশও পরিবার গ্রহণ করতে রাজি হয়নি। তাদের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে সামাজিক ঐকমত্য গড়ে উঠেছে। একেএম শহীদুল হক আরো বলেন, বাংলাদেশ শান্তিপ্রিয় একটি দেশ। আমাদের দেশের মানুষ ধার্মিক। কিন্তু, ধর্মান্ধ নয়। তারা  কোরআন ও হাদিসের অপব্যাখ্যা দিয়ে আংশিক বা খণ্ডিত ব্যাখ্যা দিয়ে অশান্তি সৃষ্টি করে আবহমান কাল ধরে চলে আসা বিরাজমান শান্তি বিনষ্ট করতে পারবে না। এদেশ কখনও আফগানিস্তান, সিরিয়া ও ইরাকে পরিণত করতে পারবে না। দেশের শান্তিপ্রিয় মানুষ ওইসব জঙ্গির সকল কর্মকাণ্ড রুখে দেবে। তিনি আরো বলেন, জঙ্গিবাদের সঙ্গে যারা জড়িত হয়েছে তারা অনেকেই নিজ ইচ্ছায় বাড়ি থেকে চলে গেছে। ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা শুনে তারা ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে বাড়ি ছেড়েছে। যারা স্বেচ্ছায় বাড়ি ছেড়েছে তারা যদি সঠিক পথে ফিরে আসে তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের সহযোগিতা করবে। আর যারা বিপথে থেকে রাষ্ট্রবিরোধী কাজে যুক্ত থাকবে তাদের ব্যাপারে পুলিশ কোনো ছাড় দেবে না। তাদের ধরে পুলিশ আইনের আওতায় আনবে।
নর্থ সাউথের সাবেক শিক্ষক হাসনাত করীম পুলিশের হেফাজতে আছেন কিনা অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, হামলার দিনে তার গতিবিধি ও কর্মকাণ্ড রহস্যজনক ছিল। তিনি পুলিশের নলেজে আছেন।
সংবাদ সম্মেলনে এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত আইজিপি ড. জাবেদ পাটোয়ারী, মুখলেসুর রহমান, মইনুল আহসান চৌধুরী, র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, ডিএমপি কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া, ডিএমপি’র অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম ও এআইজি মিডিয়া জালাল আহমেদ চৌধুরী প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *