গুলশান হামলা; ভারতীয় জঙ্গি মুছার যোগ খতিয়ে দেখছে এনআইএ

Slider ফুলজান বিবির বাংলা বাংলার মুখোমুখি

95d6c643e5e9b23796d0ce084fd9a4c3-40

গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার পরিকল্পনাকারীদের সঙ্গে ভারতে আটক আবু আল মুছা আল বেঙ্গলির কোনো যোগসূত্র আছে কি না, তা খতিয়ে দেখছে ভারতের ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ)। মুছা বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের সিআইডির হেফাজতে আছেন।
ভারতের ইংরেজি দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়ার অনলাইন সংস্করণে বলা হয়েছে, মুছার সঙ্গে জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) নেতা মোহাম্মদ সুলেমানের যোগাযোগ ছিল। এই সুলেমান গুলশানে হামলার মূল পরিকল্পনাকারী বলে বলা হচ্ছে। এই সুলেমান ও তাঁর সহযোগীদের ধরার জন্য এনআইএ মুছাকে নিজেদের হেফাজতে নিচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র টাইমস অব ইন্ডিয়াকে জানিয়েছে, এনআইএ ও পশ্চিমবঙ্গের সিআইডি যৌথভাবে কয়েক দিন ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। জিজ্ঞাসাবাদে মুছা বলেছেন, সুলেমানের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ দীর্ঘদিনের এবং ২০১৪-১৫ সালের মধ্যে তাঁদের ছয়বার সাক্ষাৎ হয়েছে।
পত্রিকাটি বলেছে, সুলেমানই ভারতে জেএমবির কাজকর্ম দেখতেন বলে মনে করা হচ্ছে। আর পশ্চিমবঙ্গ থেকে আইএসের জন্য জঙ্গি সংগ্রহের কাজে জড়িত ছিলেন মুছা।
নমুনা হস্তান্তর: গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার ঘটনায় নিহত পাঁচ জঙ্গিসহ ছয়জনের সংগৃহীত রক্ত ও চুলের নমুনা পরীক্ষার জন্য গতকাল শুক্রবার সকালে এফবিআইয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) কার্যালয় থেকে তদন্তকারীরা সংগৃহীত চুল ও রক্তের নমুনা গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে যুক্তরাষ্ট্রের তদন্ত সংস্থা এফবিআইয়ের ওই দলটির কাছে হস্তান্তর করেছেন। মামলার তদন্ত-সংশ্লিষ্ট একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, গতকালই নমুনাগুলো এফবিআইয়ের পরীক্ষাগারে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য পাঠিয়ে দেওয়ার কথা রয়েছে।
গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে র্যা বের ফেসবুকে ছবি প্রকাশ করা চারজনের
মধ্যে এক নারী রুমা আক্তারকে (২৫) গত বুধবার গভীর রাতে নরসিংদী উপজেলার সাধারচর ইউনিয়নের চরখোপি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। রুমা আক্তার পলাশ উপজেলার সুলতানপুর এলাকার শাহাজ উদ্দিন ওরফে বুদুর মিয়ার মেয়ে। র্যা ব তাদের ফেসবুকে গুলশানে হামলার সময় বেকারির পাশের ৭৯ নম্বর সড়কে সন্দেহজনক ঘোরাফেরা করছেন এমন চারজনের ছবি প্রকাশ করে তাঁদের ধরিয়ে দিতে অনুরোধ করেছিল।
রুমার ভাগনে সোহেলের বরাত দিয়ে প্রথম আলোর নরসিংদী প্রতিনিধি জানান, স্বামীর সঙ্গে রুমার বিচ্ছেদ হয়েছে। বছর খানেক আগে তিনি গৃহকর্মীর ভিসায় দুবাই গিয়েছিলেন। সেখানে ভালো না লাগায় তিন মাস পর দেশে ফিরে আসেন। পরে রাজধানীর বাড্ডায় একটি বাসায় গৃহকর্মীর কাজ নেন। এক সপ্তাহ আগে রুমা আক্তার তাঁর বড় বোনের বাড়ি চরখোপি এলাকায় ফরিদা বেগমের বাড়িতে বেড়াতে যান। এর মধ্যে গত বুধবার রাত আনুমানিক দেড়টার দিকে পলাশ উপজেলার চরসিন্দুর বাজারে গিয়ে তাঁর স্বজনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করে রুমা আক্তারকে সাদাপোশাকের পুলিশ গ্রেপ্তার করে।
শিবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খোন্দকার ইমাম হোসেন বলেন, গুলশান হামলার ভিডিও চিত্র দেখে রুমাকে ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের একটি দল ধরে নিয়ে গেছে বলে জানতে পেরেছি। এ ব্যাপারে আমাদের কাছে কোনো তথ্য ছিল না।’ তবে গতকাল রুমার গ্রেপ্তারের খবর জানতে চাইলে মামলার একজন তদন্ত তদারক কর্মকর্তা বলেন, রুমাকে গ্রেপ্তারের কোনো খবর তাঁদের কাছে নেই।
জঙ্গিদের লাশ নিতে স্বজনদের যোগাযোগ: সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) মর্গের হিমঘরে থাকা পাঁচ জঙ্গিসহ ছয়জনের লাশ ২১ দিনেও তাঁদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। তাঁরা হলেন মীর সামেহ মোবাশ্বের, রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, নিবরাস ইসলাম, খায়রুল ইসলাম পায়েল, শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল ও হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁর বাবুর্চি সন্দেহভাজন সাইফুল ইসলাম চৌকিদার।
ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, লাশ নিতে হলে স্বজনদের মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার আবেদন করতে হবে। লাশের অভিভাবকত্ব নির্ণয়ের জন্য তাঁদের ডিএনএ পরীক্ষাও করা হবে। মামলার তদন্ত-সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, নিহত ছয়জনের নুমনা সংগ্রহ করে তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরীক্ষাগারে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। গতকাল যোগাযোগ করা হলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, নিহত জঙ্গিদের স্বজনদের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হচ্ছে। লাশ নিতে হলে তাঁদের আবেদন করতে হবে। আবেদন পাওয়ার পর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জঙ্গি রোহান ইমতিয়াজের বাবা ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা এস এম ইমতিয়াজ খান। গতকাল তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছেলের লাশ নিতে কার সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে জানি না। আবেদন করতে হলেও করব। সরকার যেভাবে সিদ্ধান্ত নেবে, সেটাই মেনে নেব।’
বগুড়ার খায়রুল ইসলাম ওরফে পায়েলের মা দরিদ্র পিয়ারা বেগম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঈদের আগে পুলিশ আমাকে ঢাকায় নিয়ে দুদিন রেখেছিল। কয়েকটি কাগজে সইও নিয়েছিল। তখন তারা জানতে চেয়েছিল ছেলের লাশ নিতে চান কি না। আমি বলেছিলাম লাশ দেওয়া হলে নেব। তখন পুলিশ বলেছিল ঈদের পরে লাশ দেওয়া হবে। লাশ পেতে হেলে কী করতে হবে জানি না। এখন দরখাস্ত করা লাগলেও করব।’
বগুড়ার শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বলের চাচা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আফজাল হোসেন গতকাল বলেন, ঈদের আগে পুলিশ শফিকুলের বাবার (বদিউজ্জামান) কাছ থেকে বেশ কিছু কাগজে সই নিয়েছিল। শফিকুলের দরিদ্র বাবা জানেন না ছেলের লাশ নিতে হলে এখন তাঁকে কী করতে হবে।
জঙ্গি মীর সামেহ মোবাশ্বের, নিবরাস ইসলাম ও হলি আর্টিজানের বাবুর্চি সাইফুল ইসলাম চৌকিদারের লাশ নিতে চান বলে জানিয়েছেন তাঁদের স্বজনেরা।
১ জুলাই রাতে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলা চালায় জঙ্গিরা। ওই রাতে অভিযান চালাতে গিয়ে নিহত হন পুলিশের দুই কর্মকর্তা রবিউল করিম ও সালাউদ্দিন খান। পরদিন সকালে সেনা কমান্ডোদের নেতৃত্বে সমন্বিত অভিযানে পাঁচ জঙ্গিসহ ছয়জন নিহত হন। সেখান থেকে ১৭ বিদেশিসহ ২০ জিম্মির লাশ উদ্ধার করা হয়। অভিযানের আগে-পরে উদ্ধার করা হয় দেশি-বিদেশি ৩২ জনকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *