ঐতিহাসিক এক গণভোটে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ছাড়ার পক্ষে রায় দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের জনগণ। গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত এ গণভোটে ইইউতে থাকার পক্ষে ৪৮.১ শতাংশ এবং বিপক্ষে ৫১.৯ শতাংশ ভোট পড়ে। এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাজ্যই হতে যাচ্ছে ৬০ বছরের পুরনো এ জোট ত্যাগ করা প্রথম কোনো দেশ। এ ভোটের মাধ্যমে ২৮ জাতির ইইউ জোটের অস্তিত্বকেই প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছে ব্রিটিশরা। কেউ কেউ বলছেন, এটি যুক্তরাজ্যের অন্ধকার যুগের দিকে যাত্রা। ফল প্রকাশের পর গতকাল শুক্রবার পদত্যাগের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। আগামী অক্টোবরে নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের পর পদ ছাড়বেন তিনি। গতকাল ফ্রান্স, ইতালি ও নেদারল্যান্ডসের ডানপন্থি রাজনীতিকরা নিজ নিজ দেশে গণভোটের আহ্বান জানিয়েছেন। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য আগামী মঙ্গলবার ইউরোপীয় পার্লামেন্টের বিশেষ অধিবেশন আহ্বান করা হয়েছে। যুক্তরাজ্যের ইইউ
শুধু ইইউ নয়, গণভোটে খোদ যুক্তরাজ্যের রাজনৈতিক বিভক্তিও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ইতিমধ্যে স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার নিকোলা স্টারজিওন স্বাধীনতার পক্ষে ফের গণভোট আয়োজনের ইঙ্গিত দিয়েছেন। যুক্তরাজ্যের চার অঙ্গরাজ্যের মধ্যে ইংল্যান্ডের বেশির ভাগ ও ওয়েলস ইইউ ছাড়ার পক্ষে এবং রাজধানী লন্ডন, স্কটল্যান্ড ও উত্তর আয়ারল্যান্ড ইইউতে থাকার পক্ষে রায় দেয়। গণভোটের রায়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের নেতারা। যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপ তো বটেই, এশিয়ার পুঁজিবাজারেও গতকাল ধস নামে।
বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ হয়। এতে ইইউ ছাড়ার পক্ষে ‘লিভ’ এ ভোট পড়ে ৫২ শতাংশ (প্রায় এক কোটি ৬৮ লাখ) , আর থাকার পক্ষে ‘রিমেইন’ এ ৪৮ শতাংশ (প্রায় এক কোটি ৫৭ লাখ)। মোট ভোটের হার ৭২ দশমিক ২ শতাংশ। তবে ‘ব্রেক্সিট’ নামে পরিচিতি পাওয়া এ গণভোটের সঙ্গে সঙ্গেই ইইউর সঙ্গে বিচ্ছেদ হচ্ছে না যুক্তরাজ্যের। লিসবন চুক্তির আর্টিকেল-ফিফটিতে স্বাক্ষরের পরও অন্তত দু’বছর ‘বিচ্ছেদ’ সংক্রান্ত আলোচনা চলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ওই আলোচনাতেই ‘যুক্তরাজ্য কোন প্রক্রিয়ায় ইইউ ছাড়বে’ তা ঠিক হবে। পুরো প্রক্রিয়া ২০২০ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে সম্পন্ন না-ও হতে পারে। ইইউর নিয়ম অনুযায়ী, আর্টিকেল-ফিফটি চালু করা দেশ এরপর আবারও সংস্থায় ফিরতে চাইলে সব সদস্য রাষ্ট্রের সমর্থন লাগবে। তবে ইইউর শীর্ষ নেতা মার্টিন শুলজ বলেছেন, যত দ্রুত সম্ভব ব্রিটেন যেন ইইউ ছাড়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। এতে তারা যেন গড়িমসি না করে। ইইউর আইনজীবীরা এর বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখছে। ইইউ কমিশন প্রধান জ্যাঁ ক্লদ জাঙ্কার বলেন, ২৭ সদস্যের ইইউনিয়ন কাজ করে যাবে। নেতারা বলছেন, জোট ছাড়তে দেরি করলে অনিশ্চয়তা দীর্ঘায়িত হবে।
গণভোটের ফল ঘোষণা শুরুর পর পরই পুঁজিবাজারে এর প্রভাব পড়তে শুরু করে। ডলারের বিপরীতে পাউন্ডের নাটকীয় দরপতন হয়েছে। এক পর্যায়ে পাউন্ডের দর ১০ শতাংশ নেমে আসে। যা ১৯৮৫ সালের পর সর্বনিম্ন। এ ঘটনায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের শেয়ারবাজারের সূচকও কমতে শুরু করে। পড়ে গেছে জ্বালানি তেলের দামও। রয়টার্স বলেছে, ২০০৮ সালের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের পর আন্তর্জাতিক অর্থবাজারে সবচেয়ে বড় ঝাঁকুনি দিল এই গণভোট।
এ রায় যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, ব্রেক্সিট ইতিমধ্যেই মার্কিন অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, ইইউ ভেঙে পড়তে পারে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইইউ সদস্য দেশগুলোর বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ ছাড়া পুঁজিবাজারে ঘোলাটে পরিস্থিতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে।
বিভক্ত যুক্তরাজ্যে ফাটলের আশঙ্কা
ভোটের আগেই ধারণা করা হয়েছিল লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি। ভোটের ফলে তার প্রতিফলনই ঘটেছে। ভোট মানচিত্রে দেখা যায়, পুরো যুক্তরাজ্যের উত্তর অংশ ইইউতে থাকার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। বিপরীতে দেশের দক্ষিণের প্রায় পুরো অংশ এই জোট ছাড়ার পক্ষে। ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে বিচ্ছেদপন্থিরা জয়ী হলেও স্কটল্যান্ড ও উত্তর আয়ারল্যান্ডে দেখা গেছে উল্টো চিত্র। তবে সবখানেই ব্যবধান ছিল খুব কম। ইংল্যান্ডে ১ কোটি ৫২ লাখ ইইউ ছাড়ার পক্ষে রায় দিয়েছেন। বিপরীতে থাকার পক্ষে ভোট পড়েছে ১ কোটি ৩৩ লাখ। এখানে ভোটের হার ৭৩ শতাংশ।
ওয়েলসে ৭২ শতাংশ ভোটের মধ্যে ইইউ ছাড়ার পক্ষে সাড়ে ৮ লাখ, থাকার পক্ষে পৌনে ৮ লাখ ভোট পড়েছে। স্কটল্যান্ডে থাকার পক্ষে ভোট দিয়েছেন সাড়ে ১৬ লাখ, ছাড়ার পক্ষে ১০ লাখ। এখানে ভোটের হার ৬৭ শতাংশ। একইভাবে উত্তর আয়ারল্যান্ডের সাড়ে ৪ লাখ ভোটার ইউতে থাকার পক্ষে ভোট দিয়েছেন। সাড়ে ৩ লাখ ভোট দিয়েছেন ছাড়ার পক্ষে। এখানে ৬৩ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন। রাজধানী লন্ডনে ৬০ শতাংশ ভোট পড়েছে থাকার পক্ষে, বাকি ৪০ শতাংশ বিপক্ষে।
বিবিসির এক বিশ্লেষণে ইইউবিরোধীদের জয়ের কারণ হিসেবে আটটি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে অতি সতর্ক অর্থনৈতিক নীতি ইইউপন্থিদের জন্য আত্মঘাতী হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এছাড়াও স্বাস্থ্য খাতে সাশ্রয়, অভিবাসন ইস্যু, ক্যামেরনের ডাক উপেক্ষা, ভোটারদের মনোযোগ আকর্ষণে লেবারদের ব্যর্থতা ও বরিস জনসন আর মাইকেল গভের মতো ব্যক্তিত্বের প্রচারণার কথা বলা হয়েছে।
ফল প্রকাশের পর উচ্ছ্বসিত ইইউবিরোধী ইউকে ইন্ডিপেন্ডেন্স দলের নেতা নাইজেল ফারাজ গণভোটের দিনটিকে স্বাধীনতা দিবস হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। এটিকে তিনি সাধারণ মানুষের বিজয় হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
ভোটচিত্রের এ বৈপরীত্যের চেয়েও বড় শঙ্কা এখন যুক্তরাজ্যের অখণ্ডতা নিয়ে। স্কটল্যান্ড দু’বছর আগে স্বাধীনতার প্রশ্নে গণভোটের আয়োজন করেছিল। তা কোনোমতে উতরে গেলেও এবার স্বাধীনতাপন্থিদের অবস্থান আরও জোরালো হয়েছে। স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার নিকোলা স্টারজিওন বলেছেন, স্কটিশরা ইইউতেই তাদের ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছে। স্বাধীনতার প্রশ্নে ফের গণভোটের বিষয়টিও বিবেচনায় রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। উত্তর আয়ারল্যান্ডের সবচেয়ে বড় জাতীয়তাবাদী দল শিন ফেন বলেছে, আইরিশ প্রজাতন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার প্রশ্নে গণভোট করার পক্ষে এখন তাদের শক্ত যুক্তি রয়েছে।
অভিবাসীবিরোধী মনোভাবের জয়
ইইউ ছাড়ার কারণে যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের ইইউভুক্ত অন্য দেশগুলোতে অবাধ যাতায়াত বাধাগ্রস্ত হবে। ইউরোপভুক্ত অন্য দেশের নাগরিকরাও দেশটিতে আগের মতো সহজে ঢুকতে পারবেন না। আগের মতো চলাচল অবাধ করতে অন্য দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাজ্যকে আবার চুক্তি করতে হবে। জাতিসংঘের হিসাবে, যুক্তরাজ্যে অন্তত ৩৩ লাখ ইইউভুক্ত দেশগুলোর নাগরিকরা বাস করেন। যুক্তরাজ্যের ১২ লাখ নাগরিক থাকেন ইইউর অন্যান্য দেশে।
ইইউ ছাড়ার পক্ষের প্রচারকরা বারবার বলে আসছিলেন, অভিবাসীদের ব্রিটেনে প্রবেশ বন্ধ করতেই এ জোট ছাড়তে চান তারা। বিশেষ করে ইউরোপ থেকে কেউ যাতে অবাধে যুক্তরাজ্যে গিয়ে বসবাস করতে না পারে, সেটিই তাদের মূল লক্ষ্য। মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে গৃহযুদ্ধের কারণে ইউরোপে শরণার্থীদের ঢল নামার পর তাদের প্রচার আরও জোরালো হয়। ইইউভুক্ত বিভিন্ন দেশ শরণার্থীদের আশ্রয় দিতে নানা পদক্ষেপ নিলেও যুক্তরাজ্যে এর তীব্র বিরোধিতা দেখা যায়। ইউরোপের সঙ্গে এই বিচ্ছেদের পর এখন উগ্র জাতীয়তাবাদী শক্তিগুলোর আরও ব্যাপক উত্থান ঘটতে পারে। দেখা মিলতে পারে অভিবাসীবিরোধী নতুন এক যুক্তরাজ্যের।
ইইউতে থাকার পক্ষের গ্রুপ বলেছিল, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এলে ৫০ কোটি মানুষের বাজার হারাবে ব্রিটেন। তাতে অর্থনীতিতে আবার ‘ধস’ নামবে, যা এক যুগেও কাটিয়ে ওঠা যাবে না।
চাপে পড়বে ব্রিটিশ অর্থনীতি
বিশ্বের পঞ্চম অর্থনীতির দেশ যুক্তরাজ্যকে এখন থেকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে একাই চলতে হবে। আগের মতো ইইউর ছাতার নিচে থেকে বাণিজ্য করতে পারবে না দেশটি। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে নতুন করে চুক্তি করতে হবে। বিশ্বব্যাপী নতুন করে চুক্তি করতে যুক্তরাজ্যের এক দশকও লেগে যেতে পারে বলে মনে করছেন অর্থনীতি বিশ্লেষকরা। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বলেছে, ইইউ ছাড়লে এক বছরের মধ্যেই যুক্তরাজ্য মন্দায় পড়তে পারে। সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও ব্যাপক হ্রাস পাবে। বেকারত্বের হার ৬ শতাংশ ছাড়িয়ে যাওয়ারও শঙ্কা রয়েছে। হাজারো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দপ্তর লন্ডন থেকে প্যারিস বা ফ্রাঙ্কফুর্টে স্থানান্তর হয়ে যেতে পারে।
বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ
ব্রিটিশদের এমন সিদ্ধান্তের বড় প্রভাব পড়বে বিশ্ব রাজনীতিতে। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর এক মেরু বিশ্বে ইউরোপীয় ইউনিয়নে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বিশ্বস্ত ও ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিল যুক্তরাজ্য। এখন জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ায় দেশটি অনেকটাই একা হয়ে পড়ল। তার আর আগের সেই প্রভাব থাকে কি-না দেখার বিষয়। এ প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, রাশিয়া ও ফ্রান্স সবারই নতুন করে চিন্তাভাবনা করতে হবে। বিশেষত বৈশ্বিক নিরাপত্তা ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আগের রাজনৈতিক ক্রম এখন কতটা কার্যকর হবে, তাও ভাবনার বিষয়।
ইইউতে উদ্বেগ
৪১ বছর আগে এক গণভোটের মাধ্যমে ইউরোপিয়ান ইকোনমিক কমিউনিটিতে (ইইসি) যোগ দিয়েছিল যুক্তরাজ্য। তাতে ৬৭ শতাংশ ব্রিটিশ ইইসির পক্ষে ভোট দিয়েছিল। ওই ইইসিই পরে ইউরোপীয় ইউনিয়নে রূপ নেয়। বৃহস্পতিবারের ভোটের পর এখন যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ইউরোপের সম্পর্ক নতুন রূপ ধারণ করবে।
ইইউর দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতির দেশটির এ সিদ্ধান্তের ফলে এ জোটের বিভিন্ন কর্মসূচি বিঘি্নত হবে। জোটের ঐক্যেও ফাটল ধরার শঙ্কা রয়েছে। গ্রিসকে দেউলিয়াত্বের হাত থেকে রক্ষা করতে ইইউর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হবে। সিরিয়াসহ বিভিন্ন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ থেকে আসা শরণার্থীদের নিয়েও জোটটি বিপদে পড়তে পারে। অন্যান্য দেশও যুক্তরাজ্যকে অনুসরণ করে ইইউ ছাড়তে গণভোটের আয়োজন করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছিল। গতকালই ফ্রান্সের কট্টর ডানপন্থি দল ন্যাশনাল ফ্রন্টের নেতা ম্যারি লি পেন বলেছেন, ফ্রান্সেরও উচিত তার পথ নির্ধারণ করা। ইতালির রাজনৈতিক দল নর্দার্ন লীগ বলেছে, এখন আমাদের পালা। নেদারল্যান্ডসের অভিবাসীবিরোধী রাজনীতিক গিয়ার্ট ওয়াইল্ডারসও গণভোটের দাবি তুলেছেন। এ ছাড়াও ডেনমার্ক ও জার্মানির ডানপন্থি দলগুলো যুক্তরাজ্যের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে নিজেদের দেশেও গণভোটের আহ্বান জানিয়েছেন।
বিশ্বনেতাদের প্রতিক্রিয়া
গণভোটের ফল প্রকাশের পর জাতিসংঘ প্রধান বান কি মুন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, ন্যাটো প্রধান, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম ট্রার্নবুলসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যভুক্ত দেশগুলোর রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক বলেছেন, এখন ২৭ জাতির জোট হিসেবে তারা ঐক্যবদ্ধ থাকতে চান। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট মার্টিন শুলজ তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘আমরা এই ফলকে সম্মান জানাই। আমরা পরিষ্কার হলাম, যুক্তরাজ্য তার নিজের পথে যাবে।’ জার্মানির ভাইস চ্যান্সেলর সিগমার গ্যাব্রিয়েল ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, ‘ইউরোপের জন্য একটি বাজে দিন।’ জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রাঙ্ক-ওয়াল্টার স্টেইনমেয়র বলেন, ‘ব্রিটেনের যে সংবাদ পেলাম তা সত্যিই গুরুতর। ইউরোপ ও ব্রিটেনের জন্য দিনটি শোকের বলেই মনে হচ্ছে।’
বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী চার্লস মিশেল বলেন, ‘ইইউ সদস্যদের অগ্রাধিকার এবং ইউরোপের নয়া ভবিষ্যৎ নির্ধারণে আলোচনা করা প্রয়োজন।’ আইরিশ সরকার বলেছে, এই ফল আয়ারল্যান্ড, ব্রিটেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পোল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইটোল্ড ওয়াসজিকক্সি বলেন, ‘ইইউ ধারণার পরিবর্তন প্রয়োজন, এ তারই নিদর্শন।’
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও বলেন, ‘ইউউ ছাড়ার পক্ষে ব্রিটেনের নাগরিকদের সিদ্ধান্তের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা রয়েছে। ব্রিটেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন অবিচ্ছেদ্য অংশীদার হিসেবেই কাজ করবে।’
জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন আশা প্রকাশ করেন, ব্রিটেন ইইউ ছাড়ার পরও এই জোট জাতিসংঘের অন্যতম অংশীদার হিসেবে সক্রিয় থাকবে। উন্নয়ন, মানবাধিকার, শান্তি, নিরাপত্তা ও অভিবাসনের মতো নানা ইস্যুতে ইইউ জাতিসংঘের পাশে থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প এই ফলকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, এটা একটা দারুণ ব্যাপার। যুক্তরাজ্যের জনগণ তাদের নিজ দেশকে ফিরে পেয়েছে। তিনি বর্তমানে স্কটল্যান্ড সফরে রয়েছেন।