ওয়াশিংটন সংলাপ জঙ্গিবিরোধী অভিযানের বিস্তারিত জানাবে ঢাকা

Slider বাংলার মুখোমুখি

 

19569_f1
সামপ্রতিক সময়ে দেশব্যাপী পরিচালিত জঙ্গিবিরোধী পুলিশি অভিযান এবং আলোচিত ক্রসফায়ারের বিষয়ে ওয়াশিংটনকে বিস্তারিত বলবে ঢাকা। আগামী বৃহস্পতিবার থেকে যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হওয়া দু’দিনের পার্টনারশিপ ডায়ালগ বা অংশীদারিত্ব সংলাপে এ বিষয়গুলো তুলে ধরা হবে। সেখানে জঙ্গি-উগ্রবাদীদের হামলা ও অব্যাহত হুমকি মোকাবিলায় বাংলাদেশ দেশি-বিদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তায় যে ব্যবস্থা নিয়েছে বা নিচ্ছে তা-ও তুলে ধরা হবে। একাধিক কূটনৈতিক সূত্র মানবজমিনকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সূত্র মতে, পার্টনারশিপ ডায়ালগে মূলত ৩ ধাপে আলোচনা হবে। যার প্রথম ধাপ- সিকিউরিটি কো-অপারেশন বা নিরাপত্তা সহযোগিতা। বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রপন্থা মোকাবিলা এবং উভয়ের শান্তি ও নিরাপত্তার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শক্তিশালী অংশীদারিত্ব রয়েছে। দ্বিপক্ষীয় এবং বহুপক্ষীয় কাঠামোতে দু’দেশ এক সঙ্গে কাজ করে। বাংলাদেশে উগ্রপন্থিদের তৎপরতা বেড়ে যাওয়া এবং দেশি-বিদেশি নাগরিক ও মার্কিন মিশনের কর্মকর্তাকে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনায় এখানকার নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে বিচলিত যুক্তরাষ্ট্র। এখানে থাকা মার্কিন মিশন, কূটনীতিক ও স্টাফদের নিরাপত্তা নিয়ে ওয়াশিংটনের উদ্বেগ রয়েছে। বাংলাদেশকে নিরাপদ রাখতে যুক্তরাষ্ট্র আরো ঘনিষ্ঠভাবে সহযোগিতা দিতে চায়। বিশেষ করে উগ্রবাদীদের হামলা ঠেকানোর জন্য তারা আগাম তথ্য বিনিময়ের সুনির্দিষ্ট উদ্যোগ চায়। একই সঙ্গে বাংলাদেশে তাদের নাগরিক, কূটনীতিক ও মিশনের সর্বস্তরের স্টাফদের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা চায়। উদভূত পরিস্থিতিতে আসন্ন পার্টনারশিপ ডায়ালগে নিরাপত্তা সহযোগিতার আলোচনা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন উভয় দেশের কূটনীতিকরা। এবারের সংলাপে নিরাপত্তার বিষয়টি যে মুখ্য আলোচ্য হচ্ছে- সেটি ওয়াশিংটন যাওয়ার আগে দুই দেশের কর্মকর্তাই গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন। ঢাকার কর্মকর্তাদের মতে, গত বছরের শেষ থেকে চলতি মে মাস পর্যন্ত এখানে সংঘটিত চাঞ্চল্যকর উগ্রবাদী হত্যাকাণ্ডগুলোর তদন্ত-অগ্রগতি জানতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। এখানে মার্কিন মিশনের কর্মকর্তা জুলহাজ মান্নান তার বন্ধুর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের তদন্তের বিষয়েও বিস্তারিত তথ্য চায় ওয়াশিংটন। ঢাকার কর্মকর্তারা তা তুলে ধরার প্রস্তুতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে গতরাতে রওনা হয়েছেন। সেখানে কেবল ওই একটি খুনের ঘটনাই নয়, অন্য ৩৩টি চাঞ্চল্যকর হত্যার বিস্তারিত তথ্য শেয়ার করবে ঢাকা। পুলিশি তদন্তের এসব ঘটনার সঙ্গে আন্তর্জাতিক জঙ্গি নেটওয়ার্কের কোনো তথ্য না পাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরবেন কর্মকর্তারা। ওই হত্যাকাণ্ডগুলোর বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে কোনো তথ্য থাকলে তা-ও শেয়ার করার অনুরোধ জানাবেন। ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার আগে গতকাল মানবজমিনের সঙ্গে আলাপে সরকারের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, সংলাপে দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট অনেক বিষয়েই কথা হবে। সেখানে নিরাপত্তার আলোচনায় জঙ্গিবিরোধী সামপ্রতিক অভিযানসহ সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্র জানতে চাইতে পারে। কারণ এর সঙ্গে উভয়ের নিরাপত্তার বিষয়টি জড়িত। নিরাপত্তার বৃহত্তর স্বার্থে বাংলাদেশ অনেক কিছু শেয়ার করতে প্রস্তুত। ওই কর্মকর্তার ভাষ্য- জঙ্গিবিরোধী অভিযান চলাকালে বন্দুকযুদ্ধে সন্দেহভাজন জঙ্গির মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন আসতে পারে। ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে আলোচিত দুটি ক্রসফায়ার নিয়েও যুক্তরাষ্ট্র কথা তুলতে পারে। আমরা এ বিষয়ে আমাদের বক্তব্য তুলে ধরবো। একই সঙ্গে মার্কিন নাগরিক, কূটনীতিক ও মিশনের দেশি-বিদেশি স্টাফদের নিরাপত্তা নিশ্ছিদ্র করার বিষয়ে সরকার যে অঙ্গীকারবদ্ধ তা-ও তুলে ধরবো।
জঙ্গিবিরোধী অভিযান নিয়ে যা বলবে ঢাকা: একাধিক কূটনৈতিক সূত্র মতে, গত ১০-১৬ই জুন পর্যন্ত পুলিশ ও র‌্যাব পরিচালিত জঙ্গিবিরোধী যৌথ অভিযানের তথ্য তুলে ধরবে ঢাকা। ওই অভিযানে পুলিশ ১৯৩ জঙ্গি এবং র‌্যাব ১ জঙ্গিকে আটক করেছে। অভিযানে জঙ্গি, ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি, অস্ত্র, মাদক মামলাসহ বিভিন্ন মামলায় মোট ১১ হাজার ৩শ’ ৮৩ জনকে আটক করেছে র‌্যাব-পুলিশ। কেবল তাই নয়, ৭ দিনের ওই বিশেষ অভিযানে ২ হাজার ৬শ’ ৭৪ মোটরসাইকেলও আটক করা হয়েছে। উদ্ধারের তালিকায় ৮১ আগ্নেয়ান্ত্র, ১৪ রিভলবার, ২১ পিস্তল, ৩১টি এলজি, ৬টি বন্দুক, ৫টি পাইটগান, ২টি শুটারগান, ৩৯ চাপাতি ও ৪টি ছোরাসহ গুলি, কার্তুজ, ম্যাগাজিন ও গান পাউডার রয়েছে। কূটনৈতিক সূত্র মতে, জঙ্গিকে আটকের বিষয়ে ৭ দিনের অভিযানের তথ্য সরবরাহ করা হলেও অন্য আসামিদের আটকের বিষয়ে প্রথম চারদিনে প্রথমই তথ্য শেয়ার করবে ঢাকা।
ওয়াশিংটনের পথে পররাষ্ট্র সচিব: এদিকে ডায়ালগে অংশ নিতে গতরাতে পররাষ্ট্র সচিব এম. শহীদুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের ১৩ সদস্যের প্রতিনিধি দল ওয়াশিংটনের পথে রওনা করেছেন। ডায়ালগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব  দেবেন দেশটির স্টেট ডিপার্টমেন্টের রাজনীতিবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি থমাস এ শ্যানন। ২০১২ সাল থেকে নিরাপত্তা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ এবং উন্নয়ন সহযোগিতা- ওই ৩ ধাপে আলোচনা হয়ে আসছে। এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। সংলাপে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের জিএসপি সুবিধা পুনর্বহালের বিষয়টি আলোচনায় আসতে পারে। সেখানে শ্রম অধিকার ও কর্মপরিবেশের বিষয়েও কথা হতে পারে। এ নিয়ে বাংলাদেশের সমপ্রতিক অগ্রগতির বিষয়টি সেখানে তুলে ধরা হতে পারে বলে জানা গেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *