দুই প্রার্থী সহ পঞ্চম ধাপে ৮জন মারা গেলেন

Slider জাতীয় রাজনীতি সারাদেশ

122563_171

পঞ্চম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে আজ শনিবার নির্বাচনী সহিংসতায় জামালপুর, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায় আটজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে জামালপুরে এক কিশোরসহ তিনজন, নোয়াখালীতে এক বৃদ্ধ, চট্টগ্রামে এক সদস্য প্রার্থীসহ তিনজন এবং কুমিল্লায় এক চেয়ারম্যান প্রার্থীর মৃত্যু হয়।

জামালপুর : জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরাবাদ ইউনিয়নের কুঠারচর ইবতেদায়ি মাদ্রাসা ভোটকেন্দ্রে আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. শাকিরুজ্জামান রাখাল ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মো. শাহজাহান মিয়ার সমর্থকদের মধ্যে জাল ভোট দেওয়া নিয়ে সংঘর্ষ হয়। এ সময় তিনজন নিহত হন।

নিহত ব্যক্তিরা হলেন দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার শেখপাড়ার আফজাল শেখের ছেলে মাজেদ মিয়া (১৪), একই এলাকার নূর ইসলাম (৫৫) ও কুতুবের চর গ্রামের জিয়া (৩২)। জামালপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. নিজামউদ্দিন প্রথম আলোকে তিনজনের মৃত্যুর খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেন।

জামালপুরের এসপি বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ চলছিল। এ সময় বিদ্রোহী প্রার্থী মো. শাহজাহান মিয়ার সমর্থকেরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ভোটকেন্দ্রে হামলা চালান। এ ঘটনায় পাঁচ পুলিশ সদস্য, তিন আনসার সদস্যসহ আটজন আহত হন। তাঁদের মধ্যে দুজনকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ১০০টি ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়। ওই কেন্দ্রে ভোট গ্রহণও স্থগিত আছে।

নিহত কিশোর মাজেদের চাচা কালাম মিয়া বলেন, তাঁর ভাতিজা ভোট দেখার জন্য ওই কেন্দ্রে যায়। সংঘর্ষ বাধলে গুলিবিদ্ধ হয়ে সে মারা যায়। তারপর সেখান থেকে লাশ বাড়িতে নিয়ে আসা হয়।

নোয়াখালী : জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার রাজগঞ্জ ইউনিয়নের রাজগঞ্জ সিনিয়র মাদ্রাসা কেন্দ্রে ভোট দিতে গিয়ে দুই সদস্য প্রার্থীর সমর্থক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার মধ্যে পড়ে এক বৃদ্ধ মারা গেছেন। ওই কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। আজ বেলা ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। ওই বৃদ্ধের নাম সৈয়দ আহম্মেদ (৬৫)।

প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিদের ভাষ্য, কেন্দ্রের বাইরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও তাদের ধাওয়া দেয়। ওই কেন্দ্রে ভোট দিতে এসেছিলেন সৈয়দ আহম্মেদ। ধাওয়ার মধ্যে পড়ে গিয়ে তিনি মাথায় আঘাত পান। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ফরিদউদ্দিন চৌধুরীর ভাষ্য, মাথায় আঘাতের কারণে সৈয়দ আহম্মেদ মারা যান।

কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাসিম আহমেদ বলেন, ভোট স্থগিত করা হয়েছে।

বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুর রহমান এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

চট্টগ্রাম : দুপুর ১২টার দিকে পটিয়া আশিয়া ইউনিয়নের আছদ আলী ফকির মাজার সংলগ্ন শাহআমানত হেফজখানা ও এতিম খানা কেন্দ্রের বাইরে দুই ইউপি সদস্যের সমর্থকদের সংঘর্ষের সময় বাবুল শীল (৫০) নামে এক ব্যক্তি নিহত হন।

তাঁর ছেলে জিতেন্দ্র শীল বলেন, ‘আমার বাবা ইউপি সদস্য সৈয়দ নুরুল করিমের পক্ষের কাজ করেছে বলে তাকে মারধর করা হয়।’

পটিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক দেব আরতি চৌধুরী বলেন, ‘তাঁর শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাইনি। আমরা মৃত অবস্থায় পেয়েছি।’

এ ছাড়া বড়উঠান ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সদস্য প্রার্থী মো. ইয়াছিনকে (৪৫) কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। শাহ মিরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে সাড়ে ১২ টার দিকে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী দিদারুল আলম এবং বিদ্রোহী প্রার্থী আবদুল মান্নান খানের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের সময় তাকে কোপানো হয় বলে আবদুল মান্নান অভিযোগ করেন। মো. ইয়াছিনকে বেলা দেড়টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে আনা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। এ দিকে একই ঘটনায় গুরুতর আহত মোহাম্মদ হোসেন (৬০) চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যা সাতটার দিকে চমেক হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি বিভাগে মারা যান। চমেক হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির তত্ত্বাবধায়ক জহিরুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

ইয়াছিনের প্রতিবেশী মোহাম্মদ আলী মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষের সময় তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে শরীরের পেট, বুক ও মাথায় কোপানো হয়েছে। মোহাম্মদ আলীই ইয়াছিনকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন।

জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন বিকেলের দিকে পটিয়াতে নির্বাচনী সহিংসতায় দুজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এ ছাড়া বেশ কিছু কেন্দ্রে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে উল্লেখ করে চারটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করার কথা জানান।

কুমিল্লা : তিতাস উপজেলার বলরামপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী মো. কামাল উদ্দিনকে কুপিয়ে ও টেটাবিদ্ধ করে হত্যা করা হয়েছে। আজ শনিবার ইউপি নির্বাচনের পঞ্চম দফা ভোট শেষ হওয়ার ঘণ্টা খানেক আগে নাগেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রের বাইরে এ ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, বিকেল তিনটায় ওই ভোট কেন্দ্রে যান মো. কামাল উদ্দিন। এ সময় তাঁকে লাঞ্ছিত করেন বিএনপির মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকে চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. তোফায়েল আহাম্মদ ভুঁঞা ও তাঁর সমর্থকেরা। এ সময় কামাল উদ্দিন আত্মরক্ষার্থে তাঁর পিস্তল থেকে দুটি ফাঁকা গুলি ছোড়েন। তখন বিএনপি প্রার্থীর সমর্থকেরা তাঁকে রামদা দিয়ে কোপায় এবং লাঠি দিয়ে পেটায় ও টেটাবিদ্ধ করে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে তিতাস উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহতের কামালের বড় ভাই মোজাম্মেল হক দাবি করেন, বিএনপি মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী তোফায়েল আহাম্মদ ভুঁঞা, তিতাস উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির চেয়ারম্যান সালাহউদ্দিন সরকার এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সহকারী একান্ত সচিব-২ আবদুল মতিনের নির্দেশে কামাল উদ্দিনকে হত্যা করা হয়েছে।

এদিকে এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী তোফায়েল আহাম্মদকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ধরেননি।

তিতাস থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আ স ম আবদুন নুর বলেন, নিহত ব্যক্তির মাথার ডান পাশে ও ডান কানের নিচে ভারী আঘাতের চিহ্ন আছে। এ ছাড়া পিঠে তিনটি, বুকে তিনটি ও নাভির নিচে টেটার আঘাতের তিনটি চিহ্ন আছে। তাঁকে কুপিয়ে ও টেটাবিদ্ধ করে হত্যা করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *