বাংলাদেশে গুম উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে : অ্যামনেস্টি

Slider গ্রাম বাংলা জাতীয় টপ নিউজ ঢাকা

67726_Amnesty International
গ্রাম বাংলা ডেস্ক: আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশে মানুষ গুম ও মত প্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপসহ মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসের নির্বাচনের পর থেকে বাংলাদেশে বিভিন্ন সমস্যার ওপর ভিত্তি করে গতকাল মঙ্গলবার ‘বাংলাদেশ : ডিস্টারবিং ইনক্রিজ ইন ডিজঅ্যাপেয়ারেন্সেস, ক্যাম্পডাউন অন প্রেস ফ্রিডম’ শীর্ষক এক বিবৃতিতে সংস্থাটি এ উদ্বেগের কথা জানায়।

অ্যামনেস্টি জানায়, সাম্প্রতিক বছরে বাংলাদেশে নির্যাতিত হওয়া ১০০ ব্যক্তির সাথে কথা বলেছে তারা। নির্যাতিতরা সংস্থাটিকে জানিয়েছেন, বিনা অপরাধে নির্যাতন ও নিপীড়ণের শিকার হয়েছেন তারা।

বিবৃতিতে এ বছর ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ মানবাধিকারের যে সব ঘটনা মোকাবিলা করছে তা তুলে ধরা হয়। জরুরি করণীয় নির্ধারণ সম্পর্কে সরকারের কাছে তুলে ধরা হয়েছে কিছু সুপারিশ।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশ বিষয়ক গবেষক আব্বাস ফয়েজ বলেন, দারিদ্র্য কমিয়ে আনা ও অন্যান্য উন্নয়নের সূচকের ক্ষেত্রে উন্নতি করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু যখন মানবাধিকারের প্রতি সম্মান দেখানোর, যেমন নির্যাতন ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর থেকে বিধিনিষেধ তুলে দেয়ার মতো বিষয় আসে তখন তার সাথে ওই উন্নয়ন খাপ খায় না। আমরা একটি প্রবণতা প্রামাণ্য আকারে ধরতে পেরেছি। তা হলো, অব্যাহত গুমের জন্য দায়ী নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনী, যদিও তারা তা অস্বীকার করে। সরকারের উচিত তার নিজস্ব বাহিনীর এ বিষয়ে দীর্ঘ ও কঠোর পদক্ষেপ নেয়া এবং এসব ঘটনায় জবাবদিহির যে ঘাটতি আছে তা পুরোপুরি তুলে দেয়া।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ২০১২ সাল থেকে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে কমপক্ষে ২০টি গুমের ঘটনা অনুসন্ধান করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। তবে বাস্তবে এ সংখ্যা আরো অনেক বেশি হতে পারে। ২০ জন মানুষের মধ্যে নয়জনকে পাওয়া গেছে মৃত। আটক রাখার দু’ মাস পরে বাড়িতে ফিরতে পেরেছেন ছয়জন। পাঁচজনের খোঁজ নেই আজও। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপহরণের ঘটনা ঘটেছে অনেক। এতে টার্গেট করা হয়েছে বিরোধী দলগুলোর বিশিষ্ট সদস্যদের। বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষদর্শীরা পুলিশ বা এর বিশেষ বাহিনী র‌্যাবের জড়িত থাকার বিষয়টি নির্দেশ করেছেন। কিন্তু এই অভিযোগসমূহে নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর ভূমিকার কোনো জবাবদিহিতা নেই। এর মধ্যে এ বছর এপ্রিলে নারায়ণগঞ্জে সাত অপহরণ ও হত্যার একটি ঘটনায় র‌্যাবের কর্মকর্তাদের মূল হোতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। মানুষের ব্যাপক প্রতিবাদের মুখে পুলিশ সেই খুনের ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে তিন র‌্যাব কর্মকর্তাকে আটক করেছে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে এখনও অভিযোগ দাখিল করা হয়নি।

আব্বাস ফয়েজ বলেন, নারায়ণগঞ্জের ঘটনাটি ছিল বাংলাদেশের আইনি প্রক্রিয়ার জন্য লিটমাস টেস্ট। যেহেতু র‌্যাবের সন্দেহভাজনদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তা ইতিবাচক। এখন পুলিশকে অবশ্যই পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের মাধ্যমে প্রক্রিয়া অনুসরণের মধ্য দিয়ে যেতে হবে ও দায়ীদের বিচারের মুখোমুখি নিয়ে আসতে হবে।

ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশে এখনও বিদ্যমান বিভিন্ন আটক রাখার স্থানে নির্যাতনের নথিপত্র উপস্থাপন ও ইন্টারনেট ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে কঠোর আইনের সমালোচনা করা হয়।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল শতাধিক আটক ব্যক্তির সাথে কথা বলেছে। তারা সবাই আটক থাকার সময় তাদের সাথে বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন বা নির্দয় আচরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন। এটি নির্দেশ করে এই সমস্যা কতোটুকু ব্যাপক হতে পারে। এটা সেসব মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে সরকারের ব্যর্থতার বিষয়টিও নির্দেশ করে। নির্যাতনের পদ্ধতির মধ্যে যেসব প্রায় ঘটে, তা হচ্ছে, পেটানো, ছাদ থেকে ঝুলিয়ে রাখা, যৌনাঙ্গে ইলেকট্রিক শক দেয়া।

ব্রিফিংয়ে উপস্থাপন করা অন্তত দু’টি ঘটনার নথিপত্রে আটককৃতরা দাবি করেছে তাদেরকে পুলিশ পায়ে গুলি করেছে। এর মধ্যে একটি ঘটনায় অঙ্গহানিও ঘটেছে।

আব্বাস ফয়েজ বলেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনসমূহের দীর্ঘদিনের আহ্বানের জবাব অবশ্যই দিতে হবে বাংলাদেশ সরকারকে। এবং নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। গত দু’বছরে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর অভিযান জোরদার করেছে। বিশেষ করে ইন্টারনেট ব্যবহার নিয়ন্ত্রণমূলক কঠোর আইন দ্বারা। কমপে চারজন ব্লগার ও দুই মানবাধিকার কর্মীকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের অধীনে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এটা একটি ভাসাভাসাভাবে প্রণয়ণ করা আইন, যা কর্তৃপক্ষকে মানহানিকর তথ্য প্রচারকারীদের অভিযুক্ত করার ব্যাপক সুযোগ দেয়।

ইসলাম নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করার অভিযোগে এ বছরের এপ্রিলে গ্রেপ্তার হয় চার ব্লগার। তারা জামিনে মুক্ত হলেও, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রত্যাহার করা হয়নি।

ব্রিফিং নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল যেসব সম্পাদক ও সাংবাদিকের সাথে কথা বলেছে তারাও বলেছেন, অপেক্ষাকৃত সুক্ষ্ম দমন পীড়ন বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ফোনে হুমকি দেয়া থেকে শুরু করে সম্পাদকদের ওপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চাপ। সরকার সমালোচকদের গণমাধ্যমে যেন স্থান না হয় তার জন্য এই চাপ।

উত্থাপিত মানবাধিকারবিষয়ক উদ্বেগ নিয়ে সরকারের কাছ থেকে মন্তব্য চেয়েছিল অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। বিস্তারিত কোনো বর্ণনা না দিয়ে সরকার বলেছে, গুমের ঘটনাগুলো তদন্ত করা হচ্ছে। আর (নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিষিদ্ধকরণ) আইন ২০১৩)-এর অধীনে নির্দিষ্ট সংখ্যক আইনপ্রয়োগকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়েছে (তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে)। সরকার আরো বলেছে, সব ইলেক্ট্রোনিক মিডিয়ার প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট সবার সাথে আলোচনাসাপেক্ষে যেকোনো আইন (নতুন গণমাধ্যম নীতিমালা সংক্রান্ত) প্রণয়ন করা হবে। এমন আলোচনার প্রক্রিয়া নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি।

আব্বাস ফয়েজ বলেন, মানবাধিকার উদ্বেগগুলো নিয়ে সরকারের দৃঢ়তার পরীক্ষাস্বরূপ-ব্রিফিংয়ে জোর দেয়া ঘটনাগুলোর পরবর্তী পর্যায় পর্যবেক্ষণ করবে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

তিনি আরো বলেন, আমরা যেসব সুপারিশ করেছি সেগুলো গুরুত্বের সাথে নেয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *