আজ বাফুফের টানটান উত্তেজনার নির্বাচন

Slider খেলা
1461990153
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) বহুল কাক্সিক্ষত নির্বাচন আজ। রাজধানীর হোটেল রেডিসন ওয়াটার ব্ল গার্ডেনে দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত চলবে বাফুফের বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম)। এবারের নির্বাচনে দুটি শক্তিশালী প্যানেল ছাড়াও বেশ কয়েকজন প্রার্থী স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করছেন। ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কাউন্সিলররা ঢাকায় চলে এসেছেন। নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে এএফসি প্রতিনিধি সি মুন ইয়ংও এখন  ঢাকায়।
সম্মিলিত পরিষদের ব্যানারে বাফুফের বর্তমান সভাপতি কাজী মো. সালাউদ্দিন তৃতীয়বারের মতো সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার জন্য প্রার্থী হয়েছেন। এই প্যানেল থেকে ইতিমধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সিনিয়র সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন আবদুস সালাম মুর্শেদী। ফলে সভাপতি ছাড়াও সহ-সভাপতি (চারটি)  এবং সদস্য (১৫টি) পদে লড়াই হবে। সম্মিলিত পরিষদ তাদের পূর্ণ ২১ জনের প্যানেল নিয়েই নির্বাচনী লড়াইয়ে নেমেছে। বিরোধী পক্ষ হিসেবে মাঠে নেমেছে মনজুর কাদের-লোকমান হোসেন ভূঁইয়ার নেতৃত্বাধীন ‘বাঁচাও ফুটবল’ পরিষদ।
এই প্যানেল থেকে সভাপতি পদে প্রার্থী হয়েছেন নরসিংদী-২ আসনের এমপি ব্যবসায়ী কামরুল আশরাফ খান পোটন। এ ছাড়া ‘বাঁচাও ফুটবল’ পরিষদ ৪ জন সহ-সভাপতি এবং ১৪ জন সদস্য মোট ১৯ জনের প্যানেল নিয়ে নির্বাচনী ময়দানে অবতীর্ণ হয়েছেন। এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সহ-সভাপতি পদে বর্তমান সহ-সভাপতি তাবিথ আউয়াল ও বর্তমান কমিটির কার্য নির্বাহী সদস্য ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিআইজি শেখ মারুফ হাসান এবং সদস্য পদে আমের খান, আসাদুজ্জামান মিঠু এবং ইকবাল হোসেন নির্বাচন করছেন। ১৩৪ জন ভোটার নির্বাচন করবেন আগামী চার বছর বাংলাদেশের ফুটবল কারা পরিচালনা করবেন।
ফিফার রুলস এবং রেগুলেশন মেনে এবার তৃতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে বাফুফের নির্বাচন। আগে সাধারণ সম্পাদকই ছিলেন বাফুফের প্রধান কর্তাব্যক্তি। কিন্তু ২০০৮ সাল থেকে সভাপতিই হবেন বাফুফের সর্বেসর্বা- ফিফার এই নিয়মে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং কমিটি গঠিত হয়েছে। আর এই নিয়ম চালুর পর থেকেই সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন কাজী সালাউদ্দিন। প্রথমবার অর্থাৎ ২০০৮ সালে যখন প্রথমবার সভাপতি নির্বাচিত হন সালাউদ্দিন তখন বিরোধী পক্ষ খুব বেশি শক্তিশালী ছিল না। বলতে গেলে অনেকটা উত্তাপহীন নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় আসেন সালাউদ্দিন।
এরপর ২০১২ সালে নির্বাচনে নামতেই হয়নি সালাউদ্দিনকে। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দ্বিতীয় মেয়াদে  সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু এবার প্রেক্ষাপট ভিন্ন। সহজেই পার পাচ্ছেন না সালাউদ্দিন। কারণ বিরোধী পক্ষ থেকে তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন বাঁচাও ফুটবল পরিষদ নেতা কামরুল আশরাফ খান পোটন। যার নেতৃত্বে আছেন সালাউদ্দিনেরই এক সময়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু মনজুর কাদের। এক সময়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু মনজুর কাদের এবারের নির্বাচনে সালাউদ্দিনের সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ! কারণ পোটনকে সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে তিনিই দাঁড় করিয়েছেন। এ ছাড়া সভাপতি সাবেক তারকা ফুটবলার গোলাম রব্বানী হেলাল এবং টঙ্গী ক্রীড়া চক্রের সভাপতি ও কাউন্সিলর নুরুল ইসলাম নুরুও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। পরে সালাউদ্দিনকে হেলাল এবং পোটনকে নুরু সমর্থন দিয়ে সরে দাঁড়ান।
নির্বাচনে নামার পর থেকেই সালাউদ্দিন এবং পোটনের প্যানেল পরস্পর পরস্পরের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ- অনুযোগ করে চলেছে। গত দুই টার্মে ক্ষমতায় থেকেও ফুটবলে কোনো ধরনের উন্নতি করতে পারেননি সালাউদ্দিন। উল্টো ফিফা-এএফসি টাকা লুটে পুটে খেয়েছে- এমন অভিযোগ ‘বাঁচাও ফুটবল’ নেতাদের। অপরদিকে পোটন একজন ব্যবসায়ী। দু’দিন ধরে ফুটবল ফেডারেশনে এসে ফুটবলের কি উন্নতি করবে- সালাউদ্দিনের প্যানেল থেকে এমন তীর্যক বাক্য ছুড়ে দেয়া হয়েছে। অভিযোগের মাত্রা এমন পর্যায়ে চলে গেছে বাফুফের নির্বাচনে সরকারের হস্তক্ষেপের বিষয়টিও উঠে এসেছে। দু’পক্ষই বলছে, সরকারের লোকরা নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে। সালাউদ্দিন তো আবার নিজের এবং কাউন্সিলরদের নিরাপত্তা নিয়েও সংশয়-শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
আবার নির্বাচন থেকে সালাউদ্দিনকে সরিয়ে দেয়া কিংবা নিজে থেকে সালাউদ্দিন সরে যাচ্ছেন এমন গুজব-গুঞ্জনও শোনা গেছে। দু’পক্ষ শুধু পাল্টাপাল্টি অভিযোগই করে ভোটারদের মনোরঞ্জনের জন্য গত ১৫ দিন বেশ ব্যস্ত-তটস্থ থেকেছে। ভোটারদের উদ্দেশে সালাউদ্দিন বলেছেন, ‘এটা আমার শেষ নির্বাচন। আমি যদি তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসতে পারি তাহলে ফুটবলে যেসব অসমাপ্ত কাজ আছে সেগুলো সম্পন্ন করব। জেলার ফুটবল উন্নয়নে আরো বেশি কাজ করব। ফুটবলের হারানো জোয়ার আবারো ফিরিয়ে আনব।’ আগামী চার বছর ২৫টি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে সালাউদ্দিনের কমিটি কাজ করবে বলে ইশতেহারও ঘোষণা করেছে। আর ভোটারদের উদ্দেশ্যে পোটন বলেছেন, ‘ফুটবলের উন্নতির জন্য টাকার প্রয়োজন। টাকা আমার কাছে কোনো সমস্যা নয়। আমি নির্বাচিত হলে জেলার ফুটবল উন্নয়নে বেশি করে কাজ করব। তৃণমূল থেকে ফুটবলার বের করে আনব।’ মোট ১৪টি বিষয় সামনে রেখে নির্বাচনী ইশতেহার দিয়েছে বাঁচাও ফুটবল পরিষদে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *