বঙ্গবন্ধুর পৈতৃক বাড়ি সংরক্ষণ হবে

Slider জাতীয়

 

 

untitled-4_207040

 

 

 

 

 

 

গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পৈতৃক বাড়িকে আগের অবয়বে ফিরিয়ে নিয়ে সংরক্ষণের প্রস্তাব দিয়েছে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়। গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে স্থপতি আবু সাঈদ এম আহমেদ এ প্রস্তাব দেন। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের খামখেয়ালির কারণে বাড়িটির অবকাঠামোতে পরিবর্তন এসেছে। এ অবস্থায় প্রত্নতাত্তি্বক ঐতিহ্য হিসেবে ১৬২ বছরের পুরনো বাড়িটি অবিকৃত রেখে সংরক্ষণের এ প্রস্তাব দেওয়া হয়।
বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক সিনিয়র মন্ত্রী  জানিয়েছেন, বৈঠকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ১৭ একর জমির মধ্যে ১২ একর এলাকায় শপিং কমপ্লেক্স, স্কুল, পার্ক ও সিনে কমপ্লেক্স নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে সেখানে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার স্মৃতি জাদুঘর সংরক্ষণ করা হবে। যুদ্ধাপরাধীদের দণ্ড কার্যকরের স্থান হিসেবে ফাঁসির মঞ্চও সংরক্ষণের উদ্যোগ রয়েছে। সেই সঙ্গে প্রত্নতাত্তি্বক ঐতিহ্য হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএম হল, শহীদুল্লাহ হলসহ কয়েকটি ছাত্রাবাসের বর্তমান কাঠামো অবিকৃত রেখে সেখানে বহুতল ভবন নির্মাণের বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে।

গতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর পৈতৃক বাড়ির নতুন নকশা উপস্থাপন এবং এ বিষয়ে একটি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন করেন স্থপতি ইনস্টিটিউটের সভাপতি স্থপতি আবু সাঈদ এম আহমেদ। এতে বলা হয়েছে, বাড়িটি ১৮৫৪ সালে নির্মিত। বছর ছয়েক আগে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর বাড়িটি সংস্কার করে। তখন পুরনো বাড়ি সংস্কারের সঠিক নিয়ম অনুসরণ না করে শুধু রঙ ও প্লাস্টারের প্রলেপ দেওয়ায় বঙ্গবন্ধুর পৈতৃক বাড়িটি প্রত্নতাত্তি্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে বাড়িটির পুরনো আদল পুনরুদ্ধার করা হবে। বৈঠকে তিনটি নকশা উপস্থাপন করা হয়। এর মধ্যে একটি নকশা চূড়ান্ত করবেন প্রধানমন্ত্রী। বঙ্গবন্ধুর পৈতৃক বাড়ির যে অংশটি বিকৃতভাবে সংস্কার করা হয়েছে, তার মালিকানা প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানার। প্রধানমন্ত্রী তার সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।

কয়েকজন মন্ত্রী জানিয়েছেন, সংস্কারের নামে বঙ্গবন্ধুর পৈতৃক বাড়ির মূল অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী বিস্মিত হয়েছেন। তিনি বলেছেন, প্লাস্টার করায় ১৬২ বছরের পুরনো বাড়িটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে তিনি প্রত্নতাত্তি্বক ঐতিহ্য হিসেবে বাড়িটিকে অবিকৃত রেখে সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছেন। মন্ত্রিসভার বৈঠকের আগে বাড়িটির পুরনো আদল ফিরিয়ে আনার সম্ভাব্যতা যাচাই করার জন্য সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরকে নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। ওই সময়ে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বাড়িটির পুরনো অবকাঠামো ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হয়েছিল।

এ বিষয়ে সংস্কৃতিমন্ত্রী গতকাল বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহ থাকায় এই বাড়ি সংস্কারের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ প্রস্তাব অনুযায়ী, বাড়িটির আগের রূপ পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে। এর ফলে নতুন প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুর পৈতৃক বাড়ির অবকাঠামো সম্পর্কে জানতে পারবে।

আসাদুজ্জামান নূর আরও বলেন, আগেরবার সংস্কারের নামে বাড়িটির পুরনো আদলের কিছুটা পরিবর্তন হয়। এ ধরনের বাড়ি কোনোমতেই রঙ ও প্লাস্টার দিয়ে সংস্কার করতে হয় না, যা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ক্ষুব্ধ ছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, বঙ্গবন্ধুর পৈতৃক বাড়ি নির্মাণের সময়কালে সিমেন্টের বদলে চুন ও সুরকি ব্যবহার করা হতো। ইটের আকারও ছিল ভিন্ন। দরজা-জানালার নকশাও ছিল অন্য রকম। ফরিদপুর-খুলনা অঞ্চলে লোনাপানির কারণে বাড়ি তৈরির সময় গাবের রসের প্রলেপ দেওয়া হতো। তাই নকশার অনুমোদন পেলে নতুন করে ইট তৈরি করে ও দরজা-জানালার নকশা অবিকৃত রেখে বঙ্গবন্ধুর পৈতৃক বাড়িটিকে পুরনো আদলে ফিরিয়ে আনা হবে।

স্থপতি ইনস্টিটিউটের সভাপতি স্থপতি আবু সাঈদ এম আহমেদ বলেন, আগেরবারের সংস্কারের সময় বাড়িটির কিছুটা রূপ পরিবর্তন হয়েছিল। এখন বাড়িটির চিত্র ও অন্যান্য বাড়ির নকশা দেখে সংস্কার করা হবে। কোনোভাবেই বাড়ির নকশা বিকৃত করা হবে না। মূল আদলেই বঙ্গবন্ধুর পৈতৃক কাচারিবাড়িটি সংস্কার করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *