বনশ্রীতে দুই শিশু হত্যা জেসমিনকে নিয়ে ধূম্রজাল কাটেনি

Slider নারী ও শিশু

5444_458

 

রাজধানীর রামপুরার বনশ্রীতে দুই শিশু হত্যার ঘটনায় নতুন কোনো তথ্য দেননি তাদের মা মাহফুজা মালেক জেসমিন। ফলে তার স্বীকারোক্তি নিয়ে এখনও ধূম্রজাল কাটেনি। জেসমিন বারবার হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার  করে একই তথ্য দিচ্ছেন। তবে এখনও অনেক প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যাচ্ছেন তিনি। ডিবি সূত্রে জানা গেছে, গতকাল কয়েক দফা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে তাকে। তার সঙ্গে কারও সম্পর্ক রয়েছে কি-না এবং এই হত্যাকাণ্ডে আর কেউ জড়িত আছে কি-না এমন প্রশ্নের উত্তরে জেসমিন নীরব থাকেন। কিছু সময় পরে জানান, এ পর্যন্ত অনেকবার এসব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদকালে হঠাৎ তিনি আনমনা হয়ে যান। জিজ্ঞাসাবাদ শুরুর পর প্রায়ই ঘুমিয়ে যান তিনি। খাওয়ার প্রতি তেমন  কোনো আবদার করছেন না। তবে একই বিষয়ে বারবার জিজ্ঞাসাবাদ করার পর নীরবতার আশ্রয় নেন। এ বিষয়ে গোয়েন্দারা কৌশলী ভূমিকা পালন করছেন। জেসমিন জানিয়েছেন, তিনি দুই সন্তানকে নিয়েই বেশি ভাবতেন। ভিকারুননিসা নূন স্কুলে মেয়ে নুসরাত আমান অরণিকে আনা-নেয়া করতেন তিনি। সেখানে অন্য শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের সঙ্গে ছিল তার সখ্য। ডিবি সূত্রমতে জিজ্ঞাসাবাদে জেসমিন জানিয়েছেন, তারা প্রত্যেকেই বিত্তশালী। তার স্বামী আমানউল্লাহ আমান ভালো ব্যবসা করলেও উচ্চবিত্ত এসব নারী অভিভাবকদের জীবনযাপন, বাচ্চাদের লেখাপড়ার অন্যান্য বিষয়ে বিপুল অর্থব্যয়ের গল্প শুনে তিনি হতাশায় ভুগতেন। এর মধ্যে তার মেয়ে অরণি গত পরীক্ষায় ৬০ ভাগের বেশি মার্ক না পাওয়ায় তার দুশ্চিন্তা বেড়ে যায়। এই দুশ্চিন্তার কারণেই দুই সন্তানকে হত্যা করা হয়েছে তা বিশ্বাস করছেন না সাধারণ মানুষ। এমনকি এটা বিশ্বাসযোগ্য না তদন্ত সংশ্লিষ্টদের কাছেও।
ডিবি’র একজন কর্মকর্তা জানান, লেখাপড়া ও ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তার কারণে সন্তানকে হত্যা করা হতে পারে না। এর পেছনে আর কি কারণ আছে তা বের করার চেষ্টা করছে ডিবি। ইতিমধ্যে জেসমিনের বোন মিলাসহ ঘনিষ্ঠ কয়েক বান্ধবীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কিন্তু তাদের কাছ থেকে তেমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। ডিবি’র এডিসি নুরুন্নবী জানান, এখন পর্যন্ত  জেসমিন বা তার স্বামীর পরকীয়ার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। জিজ্ঞাসাবাদে একই কথা বারবার বলছেন জেসমিন। তবে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য জিজ্ঞাসাবাদ ছাড়াও প্রযুক্তি এবং তার ঘনিষ্ঠদের কাছ থেকে নানা তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে জেসমিন ও তার স্বামী আমানউল্লাহ আমানের চাচাতো ভাই সোলায়মান সরকার বলেন, আমান দীর্ঘদিন থেকে ভালো ব্যবসা করছে। দুই সন্তানকে ভালো স্কুলে পড়াচ্ছিলো। এমনকি বাসায় একাধিক গৃহশিক্ষক ছিলো। সেখানে জেসমিনের এই বক্তব্য বিশ্বাসযোগ্য না। এ ঘটনার আরও তদন্ত প্রয়োজন বলে দাবি করেন তিনি।
সূত্রমতে, জিজ্ঞাসাবাদে দুই সন্তান হত্যার দায়ে কোনো অনুশোচনা দেখা যায়নি জেসমিনের মধ্যে। একপর্যায়ে দুই সন্তানের ছবি দেখিয়ে হত্যার কারণ ও প্রকৃত সংশ্লিষ্টদের সম্পর্কে জানতে চাইলে ফুঁপিয়ে উঠেন জেসমিন। এছাড়া, খাবারসহ অন্যান্য সকল ক্ষেত্রেই স্বাভাবিক আচরণ করেন তিনি।
স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে রামপুরার বনশ্রীর বি ব্লকের চার নম্বর সড়কের নয় নম্বর বাড়ির পঞ্চম তলায় ভাড়া থাকতেন ব্যবসায়ী আমানউল্লাহ আমান। গত ২৯শে ফেব্রুয়ারি ওই বাসায় হত্যা করা হয় অরণি ও আলভীকে। মৃত্যুর কারণ হিসেবে প্রথমে রেস্টুরেন্টের খাবারের বিষক্রিয়ার কারণের কথা বলা হয়। তবে ময়নাতদন্ত শেষে ১লা মার্চ ঢাকা  মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রভাষক ডা. প্রদীপ বিশ্বাস জানান, তাদের শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। পরদিন জামালপুর থেকে দুই শিশুর পিতা আমানুল্লাহ, মা জেসমিন ও খালা আফরোজা মিলাকে আটক করে র‌্যাব। ৩রা মার্চ সংবাদ সম্মেলন করে র‌্যাব জানায় জেসমিন নিজেই তার দুই সন্তানকে হত্যা করেছে বলে স্বীকার করেছে। এই স্বীকারোক্তি শুরু থেকেই অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য বলেই মনে হয়। এ ঘটনায় জেসমিনকে আসামি করে মামলা করেছেন আমানউল্লাহ আমান। ৪ঠা মার্চ জেসমিনকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয় রামপুরা থানা পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তা। এরমধ্যে মামলাটি ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়। গত ৯ই মার্চ ডিবি’র পরিদর্শক লোকমান হেকিমের আবেদনের প্রেক্ষিতে আবারও পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *