অনাকাঙ্ক্ষিত কর্মকাণ্ড বরদাশ্‌ত করা হবে না–সশস্ত্র বাহিনীকে প্রধানমন্ত্রী

Slider গ্রাম বাংলা জাতীয় টপ নিউজ ফুলজান বিবির বাংলা

 

2169_f4
দেশের সুনাম ক্ষুণ্ন হয় এমন কোনো কাজ না করার জন্য জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে থাকা সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সশস্ত্রবাহিনীর সুনাম প্রশ্নবিদ্ধ হতে দেয়া যাবে না। সরকার এক্ষেত্রে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত কর্মকাণ্ড বরদাশত করবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সকালে মিরপুর সেনানিবাসের শেখ হাসিনা কমপ্লেক্সে ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ (ডিএসসিএসসি) ২০১৫-১৬ কোর্সের গ্রাজুয়েশন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভাষণ দেন। অনুষ্ঠানে তিনি গ্রাজুয়েটদের মাঝে সনদ বিতরণ করেন।
সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যদের মর্যাদার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ শীর্ষ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ। তাই, আমাদের সশস্ত্রবাহিনীর সুনাম ক্ষুণ্ন হয় এমন কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত কর্মকাণ্ড আমরা বরদাশত করবো না। আমরা চাই আমাদের সশস্ত্রবাহিনীর সুনাম অক্ষুণ্ন থাকবে। যে যেখানেই নিয়োজিত থাকুন না কেন নিজেদের দায়িত্ব মর্যাদার সঙ্গে পালন করতে হবে। কোনোভাবেই সশস্ত্রবাহিনীর সুনাম প্রশ্নবিদ্ধ হতে দেয়া হবে না। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের সশস্ত্রবাহিনীর উজ্জ্বল ভাবমূর্তির বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যদের সততা, নিষ্ঠা ও দক্ষতা শুধু দেশেই নয়, বহির্বিশ্বেও সুনাম কুড়িয়েছে, যা বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল করছে। তিনি বলেন, আমাদের শান্তিরক্ষীরা শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শান্তিরক্ষার পাশাপাশি কর্মরত দেশগুলোতে গণতন্ত্রের বিকাশ, আর্থ-সামাজিক, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতের উন্নয়ন ও পুনর্গঠনে ব্যাপক সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছে।
দেশের বিভিন্ন দুর্যোগে সেনাবাহিনী সদস্যদের সাহসিকতাপূর্ণ ভূমিকার বিষয়টি উল্লেখ করে করে শেখ হাসিনা বলেন, মাতৃভূমির স্বাধীনতা রক্ষার মহান দায়িত্ব পালনে আমাদের সশস্ত্রবাহিনী সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রয়েছে। পাশাপাশি দেশপ্রেমিক এই বাহিনী সিডর ও আইলার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ তাজরিন ফ্যাশন অগ্নিকাণ্ড ও রানা প্লাজার ধ্বংসযজ্ঞ মোকাবিলায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব বান-কি মুনের উচ্ছ্বসিত প্রশংসার বিষয়টিও অনুষ্ঠানে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।
সশস্ত্রবাহিনীকে দেশের জাতীয় সম্পদ হিসেবে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, এ বাহিনী স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় জাতীয় ক্ষমতা কাঠামোর অন্যতম একটি প্রতিষ্ঠান। জাতির পিতা এই উপলব্ধি থেকে স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে সুশৃঙ্খল ও পেশাদার একটি সশস্ত্রবাহিনী গঠনের কাজ শুরু করেছিলেন। এ লক্ষ্যেই ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ (ডিএসসিএসসি) প্রতিষ্ঠা করা হয়। স্টাফ কলেজটি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সামরিক প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে অনন্য এক প্রতিষ্ঠানের সুনাম অর্জন করায় কলেজের কমান্ড্যান্ট, অনুষদ সদস্য এবং অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী।
এছাড়া সামরিক বাহিনীর কমান্ড ও স্টাফ কলেজের অবকাঠামোগত সুবিধা সমপ্রসারণে সরকারের পক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টিও উল্লেখ করেন তিনি।
সশস্ত্রবাহিনীতে নারীদের অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি আশাব্যঞ্জক উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সশস্ত্রবাহিনীতে নারীদের অংশগ্রহণ বর্তমান সরকারের ‘নারীর ক্ষমতায়ন’ নীতির সাফল্যের আরেকটি স্বাক্ষর। তিনি উল্লেখ করেন, ১৯৯৬ সালে তার সরকারই প্রথমবারের মতো সেনাবাহিনী এবং পুলিশ প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ে নারীর অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেয়।
নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ শুরু, ভারতের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে ছিটমহল বিনিময়, মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিজয়, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতাসহ তার সরকারের আমলে দেশের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগই অতীতের সব আন্দোলন, সংগ্রামে বিজয় ও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনের কারিগর ছিল এবং আগামীতে আওয়ামী লীগই অর্থনৈতিক মুক্তির দিশারী। জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত, সুখী-সমৃদ্ধ ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তোলার সংগ্রামে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহবান জানান তিনি।
বক্তব্যের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অমর একুশে ফেব্রুয়ারির ভাষা শহীদ, মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদসহ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানান। একই সঙ্গে তিনি জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে জীবনদানকারী বাংলাদেশের ১২৮ বীর সৈনিককে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করার পাশাপাশি স্বজন হারানো পরিবারগুলোর প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজের কমান্ডেন্ট মেজর জেনারেল সাজ্জাদুল হক। অনুষ্ঠানে জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা, মন্ত্রী পরিষদের সদস্যবৃন্দ, তিন বাহিনীর প্রধান, সংসদ সদস্যসহ কূটনীতিক, বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা  উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *