এক হতে হলে গুণতে হবে অতিরিক্ত ফি

অর্থ ও বাণিজ্য

 

2015_11_29_15_31_46_ip87BHCmtSVQPfMn3FFFn4LVQ5pmr3_original

 

 

 

 

 

ঢাকা : ব্যবসা একীভূত করতে  রবি ও এয়ারটেলকে অতিরিক্ত ফি দিতে হতে পারে। দুটি কোম্পানির তরঙ্গ এক করতে  গেলে এ ফি প্রয়োজন হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।  এ ফির পরিমাণ কয়েক’শ কোটি টাকা হতে পারে বলে সূত্রটি জানিয়েছে।

সূত্রের বক্তব্য অনুসারে, টেলিযোগাযোগ আইন অনুসানে লাইসেন্স বা তরঙ্গ হস্তান্তর যোগ্য নয়। ব্যবসা একিভূত করতে হলে দুই কোম্পানির তরঙ্গ একটি কোম্পানি ব্যবহার করবে, যা আইন অনুসারে সম্ভব নয়। তাই সরকার বিশেষ বিবেচনায় ফি নিয়ে তরঙ্গ বিনিময়ের অনুমোদন দিতে পারে, এমনটাই চিন্তাভাবনা চলছে। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধানমন্ত্রী।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান প্রকৌশলী শাহজাহান মাহমুদ এ প্রসঙ্গে বলেন,  ‘বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। এ বিষয়ে আমরা বিশেষজ্ঞদের মতামত নিচ্ছি। তাদের মতামত পেলেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

বাংলাদেশ টেলিযোগোযোগ আইন ২০০১ এর অষ্টম অধ্যায়ের (বেতার যোগাযোগ ও স্পেকট্রাম ব্যবস্থাপনা)  ৫৫ এর ধারার ৪ উপধারায় বলা আছে, ‘এই ধারার অধীন ইস্যুকৃত লাইসেন্স বা বরাদ্দকৃত ফ্রিকোয়েন্সি বা উহা ব্যবহারের অধিকার হস্তান্তরযোগ্য হইবে না এবং হস্তান্তর করা হইলে উহা ফল বিহীন হইবে।’

সূত্র জানায়, এ আইন অনুসারেই ব্যবসায় একীভূত করতে হলে তরঙ্গ নিয়ে জটিলতা থাকছে। এ বিষয়ে তিনটি উপায় আছে, এক, তরঙ্গ বিটিআরসি ফেরত নিয়ে পুনরায় বিক্রি করা (বরাদ্দ), এটা উচিত নয় কারণ তারা তো একবার কিনেছে । এছাড়া তারা আদালতে (রবি-এয়ারটেল) যেতে পারে নির্দেশনা পেতে, এ বিষয়ে আদালত ইতোমধ্যে আইন অনুসারে ব্যবস্থা নিতে বলেছে। ফলে একটাই উপায় আছে তা হলো, সরকার বিশেষ বিচেনায় একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি নিয়ে তরঙ্গ হস্তান্তরের অনুমোদন দিতে পারে। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের প্রয়োজন হবে। কারণ যাই ঘটুক আমাদের আইন মেনেই কাজ করতে হবে।

দীর্ঘদিন ধরে টেলিযোগাযোগ খাত নিয়ে কাজ করেন এমন একজন বিশেষজ্ঞ নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘এমনটাই (অতিরিক্ত ফি) উচিত হবে। বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে দুই অপারেটরের একীভূত হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। তবে দেশের প্রচলিত আইন তো মানতেই হবে। তাই ফি নিয়ে তরঙ্গ বিনিময়ের অনুমতি দেয়া যেতেই পারে। এতে সরকারের রাজস্বও আদায় হলো, কোম্পানি দুটি এক হয়ে বাজারে একটি প্রতিযোগিতা আনলো। আবার আইনও রক্ষিত হলো।’

এয়ারটেল টুজি-থ্রিজি মিলে ২০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ ব্যবহার করে। রবির হাতে রয়েছে  ১৯ দশমিক ৮০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ। দুই অপারেটর এক হলে তরঙ্গে পরিমাণ হবে ৩৯দশমিক৮০ মেগাহার্জ। দেশের সবচেয়ে বড় অপারেটর গ্রামীণফোন ৩২ মেগাহার্টজ তরঙ্গ ব্যবহার করে গ্রাহককে ফোন সেবা দিচ্ছে।

উল্লেখ্য, রবির মূল প্রতিষ্ঠান আজিয়াটা গ্রুপ বারহাদ ও এয়ারটেলের মালিক ভারতি এয়ারটেল । বাংলাদেশে নিজেদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম একীভূত করতে গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর আলোচনা শুরু করে বারহাদ ও ভারতী কর্তৃপক্ষ।  ২৮ জানুয়ারি মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে তারা একটি চুক্তিতে সই করে । তবে দুই কোম্পানি সেপ্টেম্বরই এক হওয়ার বিষয়ে বিটিআরসিতে আবেদন করে।

বিটিআরসি সেই আবেদনে প্রাথমিক সম্মতি দিলেও এখন আবেদনটির বিভিন্ন দিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। রবি ও এয়ারটেলের একীভূত হওয়ার আর্থসামাজিক প্রভাব নিয়ে সমীক্ষার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের দুই শিক্ষককে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া  আবেদন নিষ্পত্তির জন্য গণশুনানির আয়োজন করছে কমিশন। ১৭ ফেব্রুয়ারি এ শুনানী হবে।

রবি ও এয়ারটেলের একীভূত হওয়ার বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। এক হওয়ার আবেদনের ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) আদালতে আবেদন করে। এর প্রেক্ষিতে আদালত গত ২৫ জানুয়ারি যে আদেশ দিয়েছে তাতে বলা হয়েছে, বিটিআরসিকে আগামী ছয় সপ্তাহের মধ্যে রবি ও এয়ারটেলের মূল্যায়ন প্রতিবেদন সরকারের কাছে জমা দিতে হবে। আর এই প্রতিবেদন পাওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে সরকারকে এ বিষয়ে প্রতিবেদন আদালতে জমা দিতে হবে।’

কুয়ালালামপুরে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুসারে, এক হওয়া পর কোম্পানির রবি নামেই ব্যবসা পরিচালনা করবে। একিভূত কোম্পানির ৬৮.৩ শতাংশ শেয়ার থাকবে আজিয়াটার হাতে। আর ভারতীর কাছে থাকবে ২৫ শতাংশ । ৬.৭% থাকবে বর্তমানে রবির আরেক শেয়ারহোল্ডার জাপানের এনটিটি ডকোমো কাছে।

দুই কোম্পানি এক হলে তাদের গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ৪ কোটি। এর মাধ্যমে তারা বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম অপারেটরে পরিণত হবে। এখন সবচেয়ে বেশি গ্রাহক আছে গ্রামীণফোনের। প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহক সংখ্যা ৫  কোটি। আর ৩ কোটি ২৮ লাখ গ্রাহক নিয়ে বাজারে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে বাংলালিংক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *