রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণে প্রধান হাতিয়ার ‘ভ্যাট’

Slider অর্থ ও বাণিজ্য

NBR_532890424

 

 

 

 

 

ঢাকা: অভ্যন্তরীণ সম্পদের ওপর নির্ভরতা যেকোনো দেশকে উন্নতির শিখরে তুলতে পারে। মুক্তবাজার অর্থনীতি অনুযায়ী আমদানি-রপ্তানিতে শুল্কারোপ কমছে। বিশ্বের অন্য দেশের মতো অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণের ওপর বাংলাদেশেরও নির্ভরতা বাড়ছে। সেক্ষেত্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) লক্ষ্যমাত্রা পূরণে পরোক্ষ কর (ভ্যাট) নির্ভর হচ্ছে।

বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রায় মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এর পরিমাণ বাড়ছে। ভ্যাটকে লক্ষ্যমাত্রার প্রধান হাতিয়ার করতে নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন পরিকল্পনা। এর অংশ হিসেবে সনাতনী পদ্ধতির পরিবর্তে অনলাইনে আদায় হবে ভ্যাট বা মূসক। এজন্য নেওয়া হয়েছে বড় প্রকল্প। ১ জুলাই থেকে অনলাইনে ভ্যাট আদায় শুরু হবে।

সূত্র জানায়, মুক্তবাজার অর্থনীতির অংশ হিসেবে ২০১৪-১৫ অর্থবছর ৭৭০টি পণ্য থেকে সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়। এর মাধ্যমে রাজস্ব আদায় কমে ৫৫০ কোটি টাকা। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি অর্থবছর (২০১৫-১৬) ১০৭টি পণ্য ব্যতীত সব পণ্যে সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়। আগামী অর্থবছর কোনো সম্পূরক শুল্ক থাকবে না বলে ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে।

এনবিআর সূত্র জানায়, ২০১৪-১৫ অর্থবছরের সংশোধিত রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৩৫ হাজার ২৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে আয়কর ৫৬ হাজার ৮৬ কোটি থেকে সংশোধন করে ৪৯ হাজার ২৬৪ কোটি টাকা ও মূসক ৫৫ হাজার ১৩ কোটি থেকে সংশোধন করে ৪৯ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়।

সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রায় মূসককে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়। আয়কর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১২৯ কোটি টাকা বেশি আদায় হলেও ভ্যাট আদায় হয়েছে ৩৭৪ কোটি ১ লাখ টাকা।

অপরদিকে, চলতি অর্থবছর (২০১৫-১৬) রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৭৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। এর মধ্যে আয়কর ৬৫ হাজার ৯৩২ কোটি, ভ্যাট ৬৩ হাজার ৯০২ কোটি ও শুল্ক ৪৬ হাজার ৫৩৬ কোটি টাকা।

সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছর (২০১৫-১৭) ভ্যাট খাতকে প্রধান খাত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এজন্য সারাদেশে ব্যক্তি শ্রেণির করদাতা জরিপের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করার কাজ চলছে। ইতোমধ্যে প্রায় দেড় লাখ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান খুঁজে পেয়েছে এনবিআর। এর মধ্যে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান মূসক আওতার বাইরে। তবে মূসক বিভাগ বলছে, দেশে শুধু ২০ হাজার ভ্যাট প্রদানে সক্ষম হোটেল-রেস্তোরা থাকলেও হাতে গোনা কিছু ভ্যাট দেয়। এছাড়া রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরগুলোতেও বড় বড় শপিংমল, মুদি ও ডিপার্টমেন্টাল স্টোর ভ্যাট দেয় না। নতুন সব প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাটের আওতায় আনতে সারাদেশে অভিযান চলছে।

সূত্র আরও জানায়, ১ জুলাই থেকে অনলাইনে ভ্যাট আদায় শুরু হবে। সারাদেশের সব দোকান থেকে ভ্যাট আদায়ে কর্মযজ্ঞ প্রায় শেষ পর্যায়ে। যেসব প্রতিষ্ঠান ভ্যাট আদায় করছে না তাদের বিরুদ্ধে অভিযানও চলছে।

সূত্র জানায়, ঢাকার একটি স্বনামধন্য শপিংমলে ৩০১টি দোকান। সম্প্রতি ঢাকা উত্তর কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট কর্মকর্তারা অভিযান চালিয়ে হতাশ হয়েছেন। এসব দোকানে মাসে শত কোটি টাকা বিক্রি হয়, ভ্যাট নেয় কিন্তু তা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হয় না। প্রথমে দিলেন আল্টিমেটাম। এতে আগস্টে ৩০ ও সর্বশেষ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১২০টি দোকান সম্পূর্ণ অনলাইন ভ্যাটের আওতায়। আগামী জুন নাগাদ ৩০১টি দোকান ভ্যাটের আওতায় চলে আসবে।

এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের একজন কর্মকর্তা বলেন, আমরা সম্ভাব্য সব দোকানে রেইড দিচ্ছি। ব্যবসায়ীরাও সচেতন হচ্ছে। প্রতিদিন নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন নিতে যোগাযোগ করছে। বাজেট ঘোষণার আগে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান এর আওতায় চলে আসবে।

এ বিষয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি আব্দুল মাতলুব আহমাদ বলেন, অভ্যন্তরীণ সম্পদ আর রাজস্ব আহরণের ওপর নির্ভরতা প্রমাণ করে দেশ অর্থনীতিতে সক্ষমতা অর্জন করেছে।

তিনি বলেন, দেশে বিনিয়োগ বাড়ছে, বাড়ছে ব্যবসার পরিধি। সেক্ষেত্রে মূসক আদায়ের পরিমাণও বাড়ছে। মূসক হবে আগামী দিনের হাতিয়ার।

এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান বলেন, পহেলা জুলাই থেকে মূসক আইন বাস্তবায়ন করা হবে। এ আইন নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।

তিনি বলেন, এ আইন প্রয়োগের মাধ্যমে মূসক আদায় অনেক বেড়ে যাবে। সম্পূর্ণ ডিজিটাল পদ্ধতিতে মূসক আরোহণের ফলে কোনো প্রতিষ্ঠান ফাঁকির সুযোগ পাবে না।

প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আহরণ বাড়াতে আমরা নতুন নতুন ক্ষেত্র খুঁজছি, নতুন করদাতা জরিপের কাজ করছি। সরকারি প্রকল্প থেকে মূসক আদায়ে সরকারি সব দফতর সহযোগিতা করছে, আগামীতে আরো বেশি সহযোগিতা করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *