মানলেন আইএস-উত্থানের দায় ইরাক-যুদ্ধ নিয়ে ক্ষমা চাইলেন ব্লেয়ার

Slider সারাবিশ্ব

gfhgfপেরিয়ে গিয়েছে এক যুগেরও বেশি। এখনও পিছু ছাড়ে না ‘যুদ্ধাপরাধী’ তকমা। মার্কিন সংবাদ মাধ্যম সিএনএন-কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে এই স্বীকারোক্তি করে ২০০৩ সালে ইরাক-যুদ্ধের ‘ভুলে’র জন্য ক্ষমা চেয়ে নিলেন প্রাক্তন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার! তবে সাদ্দাম হুসেনকে গদিচ্যুত করা নিয়ে যে তাঁর কোনও অনুশোচনা নেই, তা-ও স্পষ্ট করে দিলেন টনি। বিশ্ব জুড়ে লাগাতার সমালোচনার মুখে পড়েও এত দিন ইরাক-যুদ্ধের প্রশ্নে একপ্রকার অনড়ই থেকেছেন টনি। এই প্রথম এক দশক আগের সেই যুদ্ধ নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন ব্রিটেনের প্রাক্তন এই প্রধানমন্ত্রী।

‘লং রোড টু হেল: আমেরিকা ইন ইরাক’ শীর্ষক এই সাক্ষাৎকারে টনি বলেন, ‘‘সাদ্দামের সরকারের হাতে গণহত্যার অস্ত্র রয়েছে বলে যে খবর গোয়েন্দা সূত্রে পেয়েছিলাম তা ভুল ছিল। যদিও সাদ্দাম অন্য রাষ্ট্র এবং নিজের লোকেদের উপরেই রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগ করেছিল। যে ভাবে পরিস্থিতি বিচার করেছিলাম, বাস্তবে তেমনটা ছিল না।’’ প্রসঙ্গত, ২০০৩ সালে মার্কিন সেনার নেতৃত্বে ইরাকের মাটিতে ব্যাপক সেনা অভিযান চলে। তাতে সামিল হয় ব্রিটেনও। দীর্ঘ লড়াইয়ের পরে গদিচ্যুত হন ইরাকের শাসক সাদ্দাম হুসেন। পরিস্থিতি অবশ্য তার পরেও স্বাভাবিক হয়নি।

যুদ্ধে কয়েক হাজার ইরাকির পাশাপাশি হাজার চারেক মার্কিন সেনা এবং ১৭৯ জন ব্রিটিশ সেনার মৃত্যু হয়। সাদ্দামের পতনের পরে বিশৃঙ্খলা চরমে পৌঁছয়। ব্যাঙের ছাতার মতো মাথা তুলতে শুরু করে জঙ্গি সংগঠন। সামনে আসে ইরাকি আল-কায়দা। আর সেখান থেকেই পরে তৈরি হয় ইসলামিক স্টেট (আইএস)।

তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের এই সামরিক অভিযানে সব চেয়ে উল্লেখযোগ্য শরিক ছিলেন টনি ব্লেয়ার। ইরাকি গোয়েন্দাদের মারণাস্ত্রের ভুল খবরের পাশাপাশি যৌথ অভিযানেও যে সমস্যা ছিল, তা মেনে নিয়েছেন খোদ টনি। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের পরিকল্পনায় ত্রুটি ছিল। সে জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী। তবে একটা গোটা শাসনব্যবস্থা ফেলে দিলে কী পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, সেটা বুঝতে ভুল হয়েছিল।’’ তবে সাদ্দাম-প্রশ্নে অনড় টনি। তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, তিন দশক ধরে ইরাকে ‘স্বৈরাচার’ চালিয়েছিলেন সাদ্দাম। পড়শি ইরান আর কুয়েতের সঙ্গে সংঘাতের পাশাপাশি, উত্তর ইরাকের কুর্দ সম্প্রদায়ের উপরেও তিনি রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগ করেছেন বলে অভিযোগ।

বর্তমানে ইসলামিক স্টেটের ধর্ম-শাসনে রক্তাক্ত ইরাক। ঘরছাড়া লক্ষাধিক। ২০০৩ সালের ইরাক-যুদ্ধই যে আইএস-এর উত্থানের প্রধান কারণ, সাক্ষাৎকারে তা-ও বলেছেন টনি। তবে আইএসের উত্থানে ২০১১ সালের আরব-বসন্তের অবদান এবং সিরিয়ার রাজনৈতিক পরিস্থিতির কথা মনে করিয়ে দিলেও নিজের ‘ভুল’ স্বীকারে পিছপা হননি টনি। তাঁর কথায়,‘‘আমরা যারা ২০০৩ সালে সাদ্দামকে হটিয়েছি, তারা কিছুতেই ইরাকের বর্তমান পরিস্থিতি থেকে হাত ধুয়ে ফেলতে পারি না!’’ ইরাকের যুদ্ধে আমেরিকার সঙ্গে করমর্দনের সিদ্ধান্ত তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সব চেয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত বলে ব্যাখ্যা করে টনি জানিয়েছেন সেই সময়ে যুদ্ধে সামিল হওয়ার সিদ্ধান্তই সঠিক মনে হয়েছিল।

আর যুদ্ধাপরাধ?

টনির জবাব, ‘‘ইতিহাসের বিচার আমি মেনে নেব।’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *