‘জঙ্গিখুনি’ ধরার দ্বিতীয় তালিকা আসছে

Slider জাতীয়
1_213608
লেখক, প্রকাশক ও ব্লগার হত্যার ঘটনায় জড়িত জঙ্গিখুনিদের ‘এদের ধরিয়ে দিন’ (মোস্ট ওয়ান্টেড) তালিকায় যুক্ত হচ্ছেন পলাতক মেজর (চাকরিচ্যুত) জিয়াউল হক জিয়াসহ আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) অপারেশনাল কোরের কয়েক সদস্য। শিগগির দ্বিতীয় তালিকা প্রকাশ করবে পুলিশ। তালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের ছবিসহ বিস্তারিত তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশ করে তাদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করা হবে। এ ব্যাপারে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কাজ চলছে। এদিকে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত নিষিদ্ধ ঘোষিত উগ্রপন্থি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের মোস্ট ওয়ান্টেড ছয় সদস্যের ব্যাপারে কোনো নাগরিকের কাছ থেকে তথ্য পায়নি পুলিশ। আট লেখক-প্রকাশক ও ব্লগার হত্যায় জড়িত অভিযোগে এদের ধরিয়ে দিতে গত বৃহস্পতিবার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ঢাকা মহানগর পুলিশ। এদের মধ্যে দু’জনকে ধরিয়ে দিলে জনপ্রতি পাঁচ লাখ টাকা ও অন্য চারজনের জন্য জনপ্রতি দুই লাখ টাকা হিসাবে মোট ১৮ লাখ টাকার পুরস্কার ঘোষণা করা হয়।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘এবিটির ছয় জঙ্গি যেন দেশত্যাগ করতে না পারে, সে জন্য বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরে সতর্কতা জারি করা হয়েছে।’

মহানগর পুলিশের ডিসি (মিডিয়া) মারুফ হোসেন সরদার বলেন, ‘ছয় উগ্রপন্থির স্পষ্ট ছবি ও তথ্য প্রকাশ করে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য পুরস্কার ঘোষণা হয়েছে। নাগরিক দায়িত্ববোধ থেকে অনেকে গোপনেও তথ্য দিতে পারেন। তথ্যদাতার নাম-পরিচয় প্রকাশ করা হবে না। তবে এখনও তাদের ব্যাপারে কেউ কোনো তথ্য জানাননি।’

এবিটির অপারেশনাল কোর কমিটি : এবিটির তিন সদস্যের একটি অপারেশনাল ‘কোর কমিটি’ রয়েছে। এটির প্রধান হলেন ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের ঘটনায় চাকরিচ্যুত পলাতক মেজর জিয়া। সেকেন্ড ইন কমান্ড হলেন শরিফুল ওরফে সাকিব ওরফে সালেহ ওরফে আরিফ ওরফে হাদী-১। শরিফুল একাই আটজন লেখক-প্রকাশক ও ব্লগার হত্যাকাণ্ডের সরাসরি পরিকল্পনা করেছেন, অপারেশনেও ছিলেন। এ ছাড়া লালমাটিয়ায় শুদ্ধস্বরের কর্ণধার আহমেদুর রশীদ টুটুলসহ তিনজনকে হত্যাচেষ্টায় তিনি জড়িত। স্নাতক শ্রেণীতে পড়ার সময় তিনি এবিটির সঙ্গে যুক্ত হন। ২০১৪ সাল থেকে তিনি এবিটির গুরুত্বপূর্ণ নেতা হয়ে ওঠেন। এবিটির মাঠ পর্যায়ের তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ নেতা হলেন সেলিম ওরফে ইকবাল ওরফে মামুন ওরফে হাদী-২। প্রকাশক দীপন, ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান, নীলাদ্রি, জবি ছাত্র নাজিমুদ্দিন, কলাবাগানে জোড়া খুন ও মিরপুরে স্কুলশিক্ষক হত্যাচেষ্টায় সেলিম জড়িত ছিলেন। শরীফুল ও সেলিম এবিটিতে ‘হাদী’ অর্থাৎ ‘পথপ্রদর্শক’ হিসেবে পরিচিত।

যেভাবে গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের ছবি পাওয়া গেল :বিভিন্ন সময় রাজধানীর সাঁতারকুল, মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন স্থানে এবিটির কয়েকটি আস্তানায় অভিযান চালায় গোয়েন্দা পুলিশ। অপারেশন চালানোর আগে গঠিত ‘স্লিপার সেল’ হিসেবে এগুলো ব্যবহৃত হতো। একেকটি সেলে ৪-৬ জন জঙ্গি অবস্থান করত। এসব আস্তানা থেকে এবিটির সদস্যদের গ্রেফতারের পাশাপাশি কম্পিউটার, ল্যাপটপসহ অন্যান্য আলামত জব্দ করা হয়। একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, জব্দ নথিপত্র থেকে সন্দেহভাজন অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবিটির নেতার ছবি পাওয়া যায়। এদের অনেকে ভুল তথ্য দিয়ে পরিচয়পত্র তৈরি করে চলাফেরা করছে। এভাবে গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছয়জনের পাশাপাশি আরও কয়েক জঙ্গির ব্যাপারেও বিস্তারিত ও আংশিক তথ্য পেয়েছে পুলিশ। এদের মধ্য থেকে এখন পলাতক মেজর (চাকরিচ্যুত) জিয়াসহ আরও কয়েকজনের নাম ‘এদের ধরিয়ে দিন’ হিসেবে প্রকাশ করতে চলেছে পুলিশ। পুলিশ অনেক আগে থেকেই ধারণা করছিল, পলাতক জিয়া এবিটির সদস্যদের প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করছেন। তাদের অর্থদাতাদের ব্যাপারেও তথ্য পাওয়ার দাবি করছে পুলিশ।

এদিকে যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ও উগ্রপন্থিরা যাতে দেশের বাইরে চলে যেতে না পারে, সেজন্য সব বিমানবন্দর ও সীমান্ত এলাকায় সতর্কতা জারির পাশাপাশি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন পুলিশ চেকপোস্টেও বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *