টঙ্গীতে নির্বাচনী সহিংসতার পৃথক ঘটনায় ৪ কলেজ ছাত্র সহ ১৭ জন আহত, আটক ৬,

Slider বাংলার মুখোমুখি
Exif_JPEG_420

টঙ্গী( গাজীপুর) প্রতিনিধি: টঙ্গীর দুই থানায় পৃথক নির্বাচনী সহিংসতায় ৪ কলেজ ছাত্র সহ ১৭:জন আহত হয়েছে। এই সব ঘটনায় পাল্টাপাল্টি মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছে ৬ জন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

সোমবার রাতে ও মঙ্গলবার দুপুরে এসব ঘটনা ঘটে।

আহতরা হলেন, তেজগাঁও কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র মেহেদী হাসান নাফি(১৮), উত্তরা টাউন কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র মশিউর রহমান সিজান( ১৮), উত্তরা হাই স্কুল এন্ড কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র আফরাজুর রহমান রিদম( ১৮) ও মাদ্রাসা ছাত্র আরাফাত হোসেন(১৮)। তাদের মধ্যে আরাফাত কে আশংকাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আজ মঙ্গলবার বেলা দুইটার দিকে টঙ্গীর দত্তপাড়া এলাকায় ট্রাক সমর্থকরা নৌকা সমর্থকদের উপর আক্রমণ করে চার কলেজ ছাত্রকে আহত করে। আহতদের টঙ্গী শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। একজনকে আশংকাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

টঙ্গী শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মেহেদী হাসান নাফি বলেন, আমি কলেজে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হই। রাস্তায় আমার বন্ধু রিদমকে মারতে দেখে মারার কারণ জিজ্ঞেস করি। এসময় স্থানীয় জয়নাল রাব্বি ও ফাহাদ আমাকেও মারধর শুরু করে। আমাদের সামলাতে এসে আরাফাত ও সিজানও আহত হয়। এরপর সন্ত্রাসীরা আমাদের ৪ জনকে জয়নালের বাসায় নিয়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করে অমানুষিক নির্যাতন করে। আমাদের ডাক চিৎকারে স্থানীয়রা আমাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে আনে। আসামীরা ট্রাক প্রতীকের লোক এবং মারধরের সময় নৌকা প্রতীকের নির্বাচন করার কারণে মেরে ফেলতে চেয়েছিল বলে চিৎকার করে জানান।

সংবাদ পেয়ে টঙ্গী পূর্ব থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে জয়নাল, ফাহাদ ও রাব্বি নামে তিনজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।

টঙ্গী পূর্ব থানার পরিদর্শক( তদন্ত) জাহাঙ্গীর আলম কালের কন্ঠ কে বলেন, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে তিন জনকে আটক করা হয়েছে। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

এদিকে সোমবার ( ০৫ ফেব্রুয়ারী) রাত ১১ টায় টঙ্গী পশ্চিম থানার সাতাইশ রোড এলাকায় ঝুট ব্যবসাকে কেন্দ্র করে নৌকা ও ঈগল প্রতীকের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এই ঘটনায় আজ মঙ্গলবার সকালে ৩ জন গ্রেপ্তার হয়।

স্থানীয়রা জানান, মোবাইল কোম্পানির ( চায়না মোবাইল) সামনে নৌকা ও ঈগল প্রতীকের সমর্থকরা ঝুটের মাল নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায়। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ১৩ জন আহত হয়। আহতদের মধ্যে ঈগল প্রতীকের সমর্থক ৮জন ও নৌকা প্রতীকের সমর্থক ৫জন রয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এ বিষয়ে নৌকা প্রতীকের সমর্থক মো: কুদ্দুস বাদী হয়ে টঙ্গী পশ্চিম থানয় ১২ জনকে শনাক্ত ও ১২ জনকে অজ্ঞাতনামা উল্লেখ করে ২৪ জনের নামে একটি মামলা করেন। পুলিশ আজ সকালে তিন জনকে গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তারকৃত তিনজন হলেন, কাজী কামাল( ৪৭), কাজী হুমায়ুন (৪৪) ও আসাদুজ্জামান জনি(৩৫)। তারা সকলেই টঙ্গীর সাতাইশ এলাকার বাসিন্দা এবং যুবলীগের কর্মী।

এ বিষয়ে নৌকা প্রতীকের প্রতিনিধি ৫৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর বিল্লাল হোসেন মোল্লা বলেন, গেলো ১৭ জানুয়ারী আমার এক ব্যক্তির নামে এই কারখানার ওয়ার্ক অর্ডার হয়েছে। গতরাতে কারখানা থেকে মাল বের করতে গেলে হাজী কামাল গং হামলা করে আমাদের পাঁচ জনকে আহত করে। তাদের মধ্যে কুদ্দুস, আতিক, ইরান ও শাহিন হাসপাতালে ভর্তি।

ঈগল প্রতীকের সমর্থক রবিউল ইসলাম বলেন, কাজী কামাল ওই কারখানার নিকট জমি দেয়। সেই থেকে ব্যবসা করে আসছে। চলতি মাসের ৩ তারিখ কারখানা কর্তৃপক্ষ ওয়ার্ক অর্ডার দিয়েছে। গতরাতে কারখানা থেকে মালামাল বের করতে গেলে কুদ্দুস সমর্থকরা হামলা করে আমাদের ৮জনকে আহত করে। আমরা নৌকার নির্বাচন না করে গাজীপুর মহানগর যুবলীগের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহবায়ক সাইফুল ইসলামের ঈগল প্রতীকের নির্বাচন করেছি। তাই আমাদের থেকে ব্যবসা ছিনিয়ে নিতে হামলা ও গ্রেপ্তার চালানো হচ্ছে। প্রতিপক্ষের হামলায় আহত ৮ জনের মধ্যে রাব্বি, মাহবুব, হৃদয় ও মুস্তাকিন টঙ্গী শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি। আমরাও থানায় এজাহার নিয়ে যাচ্ছি।

এ বিষয়ে টঙ্গী পশ্চিম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাখাওয়াত হোসেন বলেন, দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। থানায় মামলা হওয়ায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত : গাজীপুর -২ ( সদর- টঙ্গী) আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট আটজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তার মধ্যে বিজয়ী হন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জাহিদ আহসান রাসেল। ঈগল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন গাজীপুর মহানগর যুবলীগের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহবায়ক সাইফুল ইসলাম। ট্রাক প্রতীকের প্রার্থী ছিলেন আওয়ামীলীগ নেতা আলিম উদ্দিন বুদ্দিন। নৌকা ও ঈগল প্রতীকের প্রার্থীদের বাড়ি বাড়ি টঙ্গী হওয়ার তাদের সমর্থকদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *