‘আগামী ১০-১৫ বছরের মধ্যে কি বাকশাল-২ স্থাপিত হবে!’

Slider বাংলার মুখোমুখি


‘আগামী ১০-১৫ বছরে বিএনপি বলে কোন দল বাংলাদেশে থাকবে না।’ প্রধানমন্ত্রীর আইটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের এমন মন্তব্য প্রসঙ্গ ধরে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, তার মানে এই সময়ে তারা বিএনপিকে ধ্বংস ও নিঃশেষ করে দেবেন! দেশে শুধুমাত্র একটাই রাজনৈতিক দল থাকবে। যেখানে ভিন্ন মতাদর্শের কেউ থাকতে পারবে না, কেউ স্বৈরাচারী সরকারের সমালোচনা করতে পারবে না। বাকশাল-২ স্থাপিত হবে।

রোববার সন্ধ্যায় ভার্চুয়ালি এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা হঠাৎ বিদেশ থেকে এসে গতকাল সাভারে জাতীয় যুব উন্নয়ন ইনস্টিটিউটে এক অনুষ্ঠানে তার দাম্ভিকতাপূর্ণ কণ্ঠ শুনে দেশের মানুষ স্তম্ভিত-হতবাক হয়েছে। একইসাথে জনগণ অট্টহাসিও দিয়েছে। তিনি বলেছেন, আগামী ১০-১৫ বছরে বিএনপি বলে কোন দল বাংলাদেশে আর থাকবে না।’ তার মানে এই সময়ে তারা বিএনপিকে ধ্বংস ও নিঃশেষ করে দেবেন! দেশে শুধুমাত্র একটাই রাজনৈতিক দল থাকবে। যেখানে ভিন্ন মতাদর্শের কেউ থাকতে পারবে না, কেউ স্বৈরাচারী সরকারের সমালোচনা করতে পারবে না। বাকশাল-২ স্থাপিত হবে।

তিনি বলেন, এই উপদেষ্টা সাহেবের মা ও তার অনুগতরা দশকের পর দশক ধরে বিএনপিকে ধ্বংসের জন্য উঠে-পড়ে লেগে আছেন। ওয়ান ইলেভেনের বেআইনি সরকারও সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিল। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। বরং বিএনপি এখন বাংলাদেশের ঘরে ঘরে তৃণমূল শক্তি। যতবার আঘাত এসেছে ততবার আরো শক্তিশালী হয়েছে। বিএনপি প্রতিবারই চক্রান্তের চোরাবালি থেকে জেগে ওঠে চতুর্দিকে আবার বিস্তার লাভ করেছে। বিএনপির রাজনীতি তো হচ্ছে এই দেশে মৃত্তিকা থেকে উৎসারিত ও মানুষের বুকের ভেতরে প্রোথিত।

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘উপদেষ্টা সাহেবদে’র সরকার বিএনপি এবং জিয়া পরিবারকে ধ্বংসের জন্য বহুমুখী চক্রান্ত করে ব্যর্থ। দলের চেয়ারপারসন বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের আশা ভরসার স্থল বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় ফরমায়েশী রায়ে বন্দী রাখা হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমানের বিরুদ্ধে একটির পর একটি মিথ্যা, বানোয়াট ও সাজানো মামলায় সাজা দেয়া হয়েছে। বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের প্রায় ৫০ লাখ নেতা-কর্মীর নামে দেড় লক্ষাধিক মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদের ঘরছাড়া করা হয়েছে। যা বিশ্ব ইতিহাসে এক নজিরবিহীন রেকর্ড। গ্রেফতার, নির্যাতন, গুম, আয়নাঘরে বন্দী ও ক্রসফায়ার করেও বিএনপি নেতাকর্মীদের দমানো যায়নি। বিএনপিকে ভাঙার সরকারের কোনো অপচেষ্টাই সফল হয়নি। তাই শত শত কোটি টাকা খরচ করে বিভিন্ন সংস্থা ও মাধ্যম দিয়ে শেখ হাসিনার সরকার বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কুৎসিত অপপ্রচার করেও লাভ হয়নি।

তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন ও তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রেরণা এবং মুক্তিকামী মানুষের আশা-ভরসার স্থল ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে গোটা বাংলাদেশ আজ ঐক্যবদ্ধ। সুতরাং আগামী ১০-১৫ বছর কেন বিশ্বের মানচিত্রে লাল-সবুজের পতাকাটি যতদিন থাকবে ততদিনে বিএনপি থাকবে এই দেশে ইনশাআল্লাহ! আমি শুধু সজীব ওয়াজেদ জয় সাহেবকে বলবো- ইতিহাস পড়েন। স্বৈরাচাররা যখন ক্ষমতার মসনদে বসে থাকে তখন অন্ধের মতো দাম্ভিকতা দেখায়। ফেরাউন পানিতে ডুবে যাওয়ার আগের দিনও জানতো না আগামীকাল তার শেষ দিন। এ ধরনের কথা আপনি পূর্বে অনেকবার বলেছেন। আপনার কথাগুলো এখন বাসি হয়ে গেছে। জনগণের দাবি মেনে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন দিয়ে দেখুন- আওয়ামী লীগের অবস্থান কী হয়।

রিজভী বলেন, বাংলাদেশের বিপজ্জনক অচলাবস্থার অবসান ঘটাতে আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের একদফা দাবি আদায়ে বাঁধভাঙ্গা আন্দোলনের স্ফুলিঙ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। অনিবার্য গণঅভ্যূত্থানের পদধ্বনি শুনতে পাচ্ছে বাংলাদেশ। স্বৈরাচার নিপীড়কদের পতনের কাউন্টডাউনের মধ্যে আরেকটি একতরফা পাতানো ভুয়া নির্বাচনের অপচেষ্টা চলছে। মেরুদণ্ডহীন নির্বাচন কমিশন আওয়ামী নির্বাচনী তফসিল বাস্তবায়ন করতে মুখ লুকিয়ে জোরেসোরে মাঠে নেমেছে। আর নিশিরাতের সরকারের অবৈধ মন্ত্রী-এমপি, নেতাকর্মী, আওয়ামী লীগ সমর্থক পুলিশ-র‌্যাাব- গোয়েন্দারা গোটা দেশে ভোটাধিকারের দাবিতে আন্দোলনরতদের ওপর ঝাপিয়ে পড়েছে হায়েনার মতো। ছিন্নভিন্ন করে দিচ্ছে গ্রাম গঞ্জ হাট বাজার জনপদ লোকালয় শহর-বন্দরে থাকা গণতন্ত্রকামীদের। আওয়ামী নিপীড়নে বিএনপির নেতাকর্মীরা যেন মৃত্যু থেকে কয়েক মিনিট দূরে অবস্থান করছেন।
বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, যশোরের প্রখ্যাত জননেতা মরহুম তরিকুল ইসলাম সাহেবের বাসভবনে বর্বরোচিত ভয়াবহ বোমা হামলার মতো সারাদেশে নারকীয় তাণ্ডব চালাচ্ছে। দিশাহীন, উন্মাদ হয়ে পাইকারী গ্রেফতার, আর্তচিৎকার-হুংকার, খুনের হুমকি দিয়ে ভীতিকর ভয়ানক পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে, গান পাউডার ছিটিয়ে আগুন দিয়ে বাসযাত্রী পুড়িয়ে মারার বিভৎস কাজ করেছে আগুন সন্ত্রাসের দল আওয়ামী লীগ। আর দেশের বাইরে বিএনপির বিরুদ্ধে নাশকতার অপবাদ দিয়ে প্রচার চালিয়েছে। পুনঃরায় সন্ত্রাসের অপবাদ দিয়ে ২০১৪-১৫-র ন্যায় আর বিদেশে মার্কেটিং করতে পারছে না। কারণ সারা দুনিয়া টের পেয়েছে বিএনপির নামে সন্তাসের অপবাদ মূলত একতরফা নির্বাচনের কৌশল। এবারো অর্ন্তঘাতমূলক নাশকতার গতি বাড়িয়ে দিয়েছে। এই আওয়ামী দুর্বৃত্ত অক্ষ শক্তির পক্ষ নিয়েছে জনগণের কষ্টার্জিত টাকায় বেতনভোগী আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর আওয়ামী দলীয় পোষ্য দলদাস কর্মকর্তারা। তাদের বিরোধীদল দলন-দমন-নিঃশেষ করার ভয়ংকর জুলুম, নিপীড়ন, গ্রেফতার তাণ্ডব সমস্ত সীমা লংঘন করেছে। কিন্তু তাদের জানা উচিত- এই নিশুতি সরকারই শেষ সরকার নয়। কিছুদিন পরেই হবে জনগণের সরকার। তখন এই আজ্ঞাবাহী দলদাস পোশাকী সন্ত্রাসীদের পরিণতি কী হবে জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে।

রিজভী বলেন, অবৈধ আওয়ামী সরকারের পদত্যাগসহ নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে প্রেরণ, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ হাজার-হাজার নেতাকর্মীদের মুক্তিসহ চলমান আন্দোলনের একদফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে এবং নির্বাচন কমিশন কর্তৃক একতরফা নির্বাচনের জন্য ঘোষিত তফসিলের প্রতিবাদে শুরু হওয়া ৪৮ ঘণ্টার শান্তিপূর্ণ হরতালের প্রথমদিন সারাদেশে স্বত:স্ফুর্তভাবে সফল করায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমানের পক্ষ থেকে আমি সারাদেশের নেতাকর্মী ও জনগণকে মোবারকবাদ জানাচ্ছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *