নিউজিল্যান্ডকে বিদায় করে ফাইনালে ভারত

Slider খেলা

মুম্বাইয়ে কিউই বোলারদের কচুকাটা করে রান-উৎসব করেছেন কোহলি-আইয়াররা! তাদের ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে রান পাহাড় গড়েছিল ভারত। জিততে হলে এই পাহাড় টপকে নতুন করে ইতিহাস লিখতে হতো কিউইদের। কিন্তু মোহাম্মদ শামি সেখানে দেওয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছেন! এই ডানহাতি পেসারের আগুনে পুড়েছে কেন উইলিয়ামসনের দল। তার ৭ উইকেট শিকারের সুবাদে ৭০ রানের জয়ে ফাইনালের টিকিট পেয়েছে স্বাগতিকরা।

বুধবার (১৫ নভেম্বর) মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ৩৯৭ রান করে ভারত। সর্বোচ্চ ১১৭ রান এসেছে বিরাট কোহলির ব্যাট থেকে। তাছাড়া সেঞ্চুরি পেয়েছেন শ্রেয়াস আইয়ারও।

জবাবে খেলতে নেমে ৪৮ ওভার ৫ বলে সবকটি উইকেট হারিয়ে ৩২৭ রানে থেমেছে নিউজিল্যান্ড। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ১৩৪ রান করেছেন ড্যারিল মিচেল। তাছাড়া ৭৩ বলে ৬৯ রান করেছেন উইলিয়ামসন। ভারতের হয়ে সবচেয়ে সফল ছিলেন মোহাম্মদ শামি। ৭ উইকেট নিয়ে একাই ঘুরিয়েছেন ম্যাচটাকে।

বড় লক্ষ্য তাড়ায় শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি নিউজিল্যান্ডের। ষষ্ঠ ওভারে প্রথমবার বল হাতে আক্রমণে আসেন শামি। তার করা প্রথম বলটা চতুর্থ/পঞ্চম স্টাম্পে ছিল, গুড লেন্থের এই বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে উইকেটকিপারের হাতে ধরা পড়েন কনওয়ে। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ১৫ বলে ১৩ রান।

কনওয়ে ফেরার পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি রাচিন রবীন্দ্র। এই ওপেনারও শামির শিকার হয়েছেন। অস্টম ওভারের পঞ্চম বলে লোকেশ রাহুলের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি। আসর জুড়ে দারুণ পারফর্ম করা রবীন্দ্র সেমি ফাইনালে করতে পেরেছেন মোটে ১৩ রান।

৩৯ রানে দুই উইকেট হারানোর পর কিউই সমর্থকরা হয়তো আশা ছেড়ে দিয়েছিল। তবে হাল ছাড়েননি উইলিয়ামসন-মিচেল। এই দুই টপ অর্ডার ব্যাটার মিলে তৃতীয় উইকেটে ১৮১ রানের জুটি গড়েন। তাতে ম্যাচেও ফেরে তারা। কিন্তু ৭৩ রান করে উইলিয়ামসন ফেরার পর ফের পথ হারায় দল।

মিচেল এক প্রান্তে দুর্দান্ত খেললেও তাকে যোগ্য সঙ্গ দিতে পারেননি কেউই। শেষ পর্যন্ত ৯ চার আর ৭ ছক্কায় ১১৯ বলে ১৩৪ রান করে থেমেছেন মিচেল। এই মিডল অর্ডার ব্যাটার ফেরার পর নূন্যতম প্রতিরোধটুকুও গড়তে পারেনি দল। এক শামির আগুনেই পুড়ে ছাই কিউইরা! এই পেসার একাই শিকার করেছেন ৭ উইকেট।

এর আগে ভারতের দুই ওপেনার রোহিত শর্মা-শুবমান গিল নতুন বলে আক্রমণাত্মক শুরু করেন। ট্রেন্ট বোল্টের মতো বিশেষজ্ঞ সুইং বোলারও সুবিধা করতে পারেননি। শুরুর ৫০ রান তুলতে মাত্র ৩২ বল খরচ করেছেন ভারতীয় ওপেনাররা। যেখানে সিংহভাগ রানই আসে রোহিতের ব্যাট থেকে।

উড়ন্ত শুরু করলেও রোহিত সাজঘরে ফিরেছেন হাফ সেঞ্চুরি না পাওয়ার আক্ষেপ নিয়ে। নবম ওভারে টিম সাউদিকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে কেন উইলিয়ামসনের হাতে ধরা পড়েছেন ভারত অধীনায়ক। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ২৯ বলে ৪৭ রান।

রোহিত ফেরার পর রানের গতি কিছুটা কমেছিল। তবে সেটা ভালোভাবেই সামাল দিয়েছেন গিল। তাতে ১৩তম ওভারেই তিন অঙ্ক ছুঁয়েছে স্বাগতিকরা।

প্রথমবার কোনো আইসিসি ইভেন্টের সেমিতে খেলতে নেমে দারুণ শুরু করেছিলেন গিল। ৪১ বলে ছুঁয়েছিলেন ব্যক্তিগত ফিফটি। দারুণ সব শটে এগোচ্ছিলেন শতকের দিকেই। তবে তার আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে বাধা হয়ে দাঁড়ায় চোট। পায়ের পেশিতে টান লাগায় ২৩তম ওভারের খেলা চলাকালে মাঠ ছাড়েন তিনি। তবে সেই চোট গুরুত্বর ছিল না। ৪ উইকেট যাওয়ার পর আবারও ব্যাটিংয়ে নেমেছেন তিনি। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন ৮০ রানে।

তিনে নেমে ধীর গতির শুরু করেছিলেন কোহলি। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে খোলস ছেড়ে বের হয়ে এসেছেন এই টপ অর্ডার ব্যাটার। স্বভাবজাত ব্যাটিংয়ে আরও একবার বড় মঞ্চে নিজের জাত চেনালেন তিনি। ৫৯ বলে ফিফটি করেছিলেন। পরের ৫০ রান করতে খেলেছেন ৪৭ বল। সবমিলিয়ে ১০৬ বলে তিন অঙ্কে পৌঁছেছেন তিনি। এটি ওয়ানডেতে তার ৫০তম সেঞ্চুরি। তাতে শচীনকে ছাড়িয়ে এই ফরম্যাটে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরির মালিক হলেন এই টপ অর্ডার ব্যাটার। শেষ পর্যন্ত ১১৭ রান করে থেমেছেন কোহলি।

এরপর আক্রমনের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন আইয়ার। কোহলি রানে-বলে সেঞ্চুরি করলেও আইয়ার এই মাইলফলক ছুঁয়েছেন টি-টোয়েন্টি মেজাজে। ৩ চার আর ৮ ছক্কায় শতকে পৌঁছেছেন মাত্র ৬৭ বলে। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ৭০ বলে ১০৫ রান।

শেষদিকে লোকেশ রাহুলও দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছেন। তার ২০ বলে ৩৯ রানের ক্যামিওতে শেষ পর্যন্ত ৫০ ওভারে ৩৯৭ রান তুলেছে ভারত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *