নেতাকর্মীদের চাঙা রাখার কৌশল আ’লীগের

Slider বাংলার মুখোমুখি


মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি বাস্তবায়ন করায় সংশয় ও হতাশা কাজ করছে সরকারি দল আওয়ামী লীগে। বিষয়টি প্রকাশ্যে স্বীকার না করলেও ভেতরে ভেতরে দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব চাপ অনুভব করছে। আগামী কিছু দিনের মধ্যেই এ দেশের ওপর বড় ধরনের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে এমন আলোচনাও এখন লোকমুখে চাওর হয়েছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের প্রতি সহানুভূতিশীল এমন দুয়েকজন বুদ্ধিজীবীর মুখ থেকেও এ ধরনের বক্তব্য আসায় বিষয়টি বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে নির্বাচনের আগে ওই সব স্যাংশন ভিসানীতির নেতিবাচক প্রভাব যাতে না পড়ে সে জন্য নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙা রাখার কৌশল নিয়েছে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব। তারই অংশ হিসেবে রাজপথের কর্মসূচি ছাড়াও বিভিন্ন বক্তব্য-বিবৃতিতে দলের শক্ত অবস্থানের বিষয়টি তুলে ধরা হচ্ছে। সর্বশেষ দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য ‘তলে তলে সবার সঙ্গে আপস হয়ে গেছে’ থেকেও সেটা ফুটে উঠেছে।

বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে গত ২২ সেপ্টেম্বর ভিসানীতির প্রয়োগ শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের পলিসি অনুযায়ী, কার ওপর ভিসানীতি প্রয়োগ হয়েছে বা কারা ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছে সেই তালিকা তারা প্রকাশ করে না। এর আগে ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। এতে বলা হয়, বাংলাদেশে নির্বাচন জালিয়াতি ও নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধাগ্রস্ত করার সঙ্গে যারা জড়িত থাকবেন তাদের যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা দেয়া হবে না। যদিও বছরের শুরু থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিশ্বের প্রভাবশালী কয়েকটি রাষ্ট্র ও সংস্থা সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সরকারকে নানাভাবে চাপ দিয়ে আসছে। দলটির নেতারা মনে করেন, এ বছরের শুরু থেকেই দল ও সরকারের উচ্চপর্যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বকে সুষ্ঠু নির্বাচনের আশ্বাস দিয়ে আসছে। এই আশ্বাসের পরও ভিসানীতি বাস্তবায়ন করায় বিষয়টি নিয়ে নতুন করে চিন্তা করতে হচ্ছে। তবে এই চাপকে সামাল দিয়ে দেশের সাংবিধানিক বিধান অনুযায়ী যথাসময়ে নির্বাচন করার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে সরকার। আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন, এ দেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচন কোন পদ্ধতিতে হবে সেটা একটি মীমাংসিত ইস্যু। ফলে বিএনপি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি মানার কোনো যৌক্তিকতাও নেই, মানার মতো কোনো উপাদানও তৈরি হয়নি। ফলে সংলাপ-সমঝোতার কোনো কারণও নেই। এ দিকে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থাকায় বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক বা না করুক যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিকল্প দেখছে না আওয়ামী লীগ। যদিও বিএনপির দীর্ঘ দিনের নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি না মানলে নির্বাচনে না যাওয়ার ব্যাপারে অনড় অবস্থানে রয়েছে দলটি। এই পরিস্থিতিতে সরকারবিরোধীদের কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলাও করতে হবে।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের অন্যতম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা চাই, বিএনপি নির্বাচনে আসুক। তাদের অংশগ্রহণে এ দেশের মানুষ একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন দেখুক। তার পরও যদি বিএনপি নির্বাচনে না আসে সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, স্যাংশন ভিসানীতি নিয়ে আমরা ভাবছি না। যুক্তরাষ্ট্র এ দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়, আমরাও এ দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। বরং বিএনপি-জামায়াত সুষ্ঠু নির্বাচন চায় না বলে তারা বানচালের হুমকি দিচ্ছে। আগামী নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।

এ দিকে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করছেন, ২০১১ সালের ১০ মে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের রায় দেন। ওই রায়ের আলোকে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে এ সরকার ব্যবস্থাকে বাতিল করা হয়। এর পর থেকেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে বিএনপি ও তার মিত্ররা। সংশোধিত সংবিধানের আলোকে দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই দুটি নির্বাচন নিয়ে দেশ-বিদেশে নানা প্রশ্ন ও বিতর্ক রয়েছে। যার ফলে বিশ্বের প্রভাবশালী যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররাও এ দেশের আগামী নির্বাচন প্রশ্নহীন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের দাবিকে উপেক্ষা করে দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো আরেকটি নির্বাচন করা আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষে অনেক কঠিন হবে। কিন্তু দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন করতে বদ্ধপরিকর সরকারি দল। এ দিকে দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না তা যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বকে বিএনপি ও তার মিত্ররা বোঝাতে সক্ষম হয়েছে। যার ফলে আওয়ামী লীগ ও সরকারের তরফ থেকে বারবার সুষ্ঠু নির্বাচনের আশ্বাস দেয়ার পরও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ দেশে তাদের ভিসানীতির বাস্তবায়ন শুরু করেছে।

অপর দিকে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে সরকার পতনের এক দফার আন্দোলন চলমান রয়েছে বিএনপি ও তার মিত্রদের। চলমান আন্দোলনই চূড়ান্ত ধরে নিয়ে বিএনপি ও তার মিত্ররা রাজপথে সরব রয়েছে। মার্কিন ভিসানীতি প্রয়োগের পর থেকেই সরকারবিরোধীদের আন্দোলনে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির আন্দোলন মোকাবেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি নেতাকর্মীদের বাড়তি সতর্কতা ও প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছে দলটির হাইকমান্ড। বিএনপির কর্মসূচির ধরন দেখে পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে রাজপথ দখলে রাখারও জোরালো প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে ক্ষমতাসীনরা। গতকাল এক বিবৃতিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, কষ্টার্জিত গণতন্ত্র, উন্নয়ন-অগ্রগতির চলমান অভিযাত্রা, জনগণের ভোটাধিকার, আইনের শাসন ও দেশের জনগণের স্বার্থ সুরক্ষায় যে কোনো ধরনের আত্মত্যাগে আওয়ামী লীগ প্রস্তুত রয়েছে বলে জানান। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে বদ্ধপরিকর। বাংলাদেশের নির্বাচন, গণতন্ত্র ও রাজনীতির গতিপথ কোনো বিদেশী শক্তির ইচ্ছায় নির্ধারিত হবে না; একইভাবে দেশবিরোধী কোনো অপশক্তির সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য সৃষ্টির হুমকির মুখে বিচ্যুত হবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *