অধ্যাপক তাহের হত্যা: মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীরের ফাঁসি যেকোনো দিন

Slider ফুলজান বিবির বাংলা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের আহমেদ হত্যা মামলায় বাসার কেয়ারটেকার মো. জাহাঙ্গীর আলমের করা সবশেষ আবেদন খারিজ করেছেন আপিল বিভাগ। ফলে যেকোনো সময় দুই আসামির ফাঁসি কার্যকরে আর বাধা নেই।

আজ মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সমরেন্দ্র নাথ গোস্বামী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ।

রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, তাহেরের হত্যা ১৯৭১ সালের বর্বরতাকে স্মরণ করিয়ে দেয়।

জাহাঙ্গীরের ভাই সোহরাবের করা রিটের শুনানি শেষে ১৭ জুলাই বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তী ও বিচারপতি মো. আলী রেজার হাইকোর্ট বেঞ্চ রিট খারিজ করে আদেশ দেন। পরে আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করে ফাঁসি কার্যকরের প্রক্রিয়া স্থগিত চাওয়া হয়।

এর আগে গত শুক্রবার (২১ জুলাই) সকাল ৭টার দিকে বুকে ব্যথা উঠলে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি অধ্যাপক মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিনকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এর আগে, গত ১৯ জুলাই রাজশাহী জেলা কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, অধ্যাপক ড. এস তাহের আহমেদ হত্যা মামলায় একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও কেয়ারটেকার মো: জাহাঙ্গীর আলমের ফাঁসি ২৫ জুলাই রাতে কার্যকর করা হবে। এর আগে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন জানান আসামিরা। তবে তা নাকচ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো: সাহাবুদ্দিন।

গত ২ মার্চ এ দু’জনের ফাঁসি এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত এক আসামির রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ করেন সর্বোচ্চ আদালত।

নিম্ন আদালতে দু’জনের মৃত্যুদণ্ডের যে রায় এসেছিল তাই বহাল থাকে আপিলে, খারিজ হয় রিভিউ আবেদনও। তাই রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা ছাড়া আর কোনো পথই খোলা ছিল না তাদের। তবে এরপরও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এস তাহের আহমেদ হত্যা মামলায় দণ্ডিত এ আসামির ফাঁসি কার্যকর স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে গত ৭ মে ফের রিট আবেদন করেন তাদের স্বজনরা।

যদিও উত্থাপিত হয়নি মর্মে পরবর্তীতে সেই আবেদন খারিজ করেন বিচারপতি মো: জাফর আহমেদ ও মো: বশির উল্ল্যার হাইকোর্ট বেঞ্চ।

২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাবির কোয়ার্টারের ম্যানহোল থেকে উদ্ধার করা হয় অধ্যাপক তাহেরের লাশ। পদোন্নতি সংক্রান্ত বিষয়ের জের ধরে নৃশংস হত্যার শিকার হন তিনি। নিহত অধ্যাপক তাহেরের ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ রাজশাহী মহানগরীর মতিহার থানায় অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে ৩ ফেব্রুয়ারি একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

এ মামলায় ২০০৭ সালের ১৭ মার্চ ছয়জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দেয় পুলিশ। বিচার শেষে ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুত বিচার আদালত চারজনকে ফাঁসির আদেশ ও দু’জনকে খালাস দেন।

ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, নিহত অধ্যাপক ড. তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার মো: জাহাঙ্গীর আলম ও তার ভাই নাজমুল আলম ও নাজমুল আলমের স্ত্রীর ভাই আবদুস সালাম।

খালাস পাওয়া চার্জশিটভুক্ত দুই আসামি হলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী ও আজিমুদ্দিন মুন্সী।

২০০৮ সালে বিচারিক আদালতের রায়ের পর নিয়ম অনুযায়ী ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিতকরণ) হাইকোর্টে আসে। পাশাপাশি আসামিরা আপিল করেন। শুনানি শেষে ২০১৩ সালের ২১ এপ্রিল অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় দুই আসামির ফাঁসির দণ্ডাদেশ বহাল এবং অন্য দুই আসামির দণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন হাইকোর্ট।

ফাঁসির দণ্ডাদেশ বহাল রাখা দুই আসামি হলেন অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও কেয়ারটেকার মো: জাহাঙ্গীর আলম। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া দুই আসামি হলেন নাজমুল আলম ও আবদুস সালাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *