রক্ত কথা বলে

Slider জাতীয়

pralament_sm_507199599

জাতীয় সংসদ ভবন থেকে: বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তিন নারী টিউলিপ সিদ্দিক, রুশনারা আলী ও রুপা হক ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় সংসদে তাদের ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জাতির পিতা যে আদর্শ আমাদের শিখিয়ে গেছেন সেই আদর্শে আমরা সন্তানদের বড় করেছি। আমাদের সন্তানরা যেন মানুষের জন্য কাজ করতে পারে সেই দোয়া আমি দেশবাসীর কাছে চাই।

বঙ্গবন্ধুর নাতনি ও নিজের ভাগনি টিউলি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রথম যেদিন ব্রিটিশ পার্ল‍ামেন্টে টিউলিপ বক্তব্য দেয় সেদিন আমি উপস্থিত ছিলাম। আমি তার বক্তব্য শুনেছি। অল্প সময় বক্তব্য দিয়েছে। ‘রক্ত কথা বলে’ এটা টিউলিপের বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে প্রকাশ পেয়েছে।

মঙ্গলবার (০৭ জুলাই) দুপুরে জাতীয় সংসদে কার্যপ্রণালী বিধির ১৪৭ ধারায় প্রস্তাব সাধারণ উত্থাপন করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ডা. দীপু মনি। প্রস্তাব উত্থাপন করে আলোচনার সূত্রপাত করেন তিনি। এ সময় অধিবেশনের সভাপতিত্ব করছিলেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।

ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২২ জন অংশ নেন। পরে ধন্যবাদ প্রস্তাবটি কণ্ঠভোটে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।

বৃটিশ পার্লামেন্টে নির্বাচিত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তিন বাঙালি নারীকে অভিনন্দন জানিয়ে তিনি আরও বলেন, রক্ত কথা বলে তা বঙ্গবন্ধুর নাতনি ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকীর বক্তব্য ও বিজয়ে প্রমাণ হয়েছে। অথচ নির্বাচনে টিউলিপকে হারাতে লন্ডনে রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকা বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার পুত্র (তারেক রহমান) সব ধরণের চেষ্টা করেছে, এমনকি ভোটারের ওপর হামলা পর্যন্ত করেছে। আসলে এরা দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না বলেই বাংলাদেশের মেয়ের বিজয়ের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। কিন্তু শত বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে টিউলিপ ১১শ’র বেশি ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়ে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করেছে।

তিনি বলেন, সত্যিই এ বিজয় আমাদের গৌরবের। যে ব্রিটিশরা আমাদের ২শ’ বছর শাসন করেছে, সেই ব্রিটিশ পার্লামেন্টে এখন আমাদের তিন কন্যা এমপি নির্বাচিত হয়েছে। এটা পুরো দেশের গৌরব, গোটা জাতির গৌরব। তারা আমাদের দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছে, দেশের মানুষকে সম্মানিত করেছে।

সংসদ নেতা আরও বলেন, ১৯৭৫ সালের ৩০ জুন শেখ রেহানাকে নিয়ে আমি স্বামীর কর্মস্থল জার্মানিতে গিয়েছিলাম। অল্প দিনেই দেশে ফিরতে চেয়েছিলাম। কিন্তু মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে সব শেষ হয়ে গেল। বাবা-মাসহ সবাইকে হত্যা করলো ঘাতকরা। দেশে ফিরতে চাইলে আমাদের ফিরতে দেওয়া হয়নি।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ক্ষমতা দখলকারী জিয়াউর রহমান নির্দেশ দিয়েছিল আমরা যেন দেশে ফিরে আসতে না পারি। ’৮১ সালে আমাকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী নির্বাচিত করার পরই আমাকে দেশে ফিরতে দিলেও জেনারেল জিয়া আমাকে আমাদের ৩২ নম্বর বাড়িতে প্রবেশ করতে দেননি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি দেশে ফিরলেও ’৭৬ সালের ডিসেম্বরে লন্ডনে যায় শেখ রেহানা। আমার বাবা বঙ্গবন্ধু সততা ও আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করে গেছেন, আমাদের জন্য কিছু সম্পদও রেখে যাননি। যার ফলে শেখ রেহানাকে লন্ডনে পড়াশোনার খরচ বহন করাও অসম্ভব ছিল। লন্ডনে গিয়ে শেখ রেহানা একটা চাকরি নেয়, তার বিয়ে হয়। চাকরি করেই তার তিন ছেলে-মেয়ে ও আমার ছেলে-মেয়েকে পড়াশোনা করে মানুষের মতো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে।

তিনি বলেন, আমার বাবা প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, আমিও দু’বার প্রধানমন্ত্রী ছিলাম। কিন্তু শেখ রেহানা এখনো বাসে চড়ে গিয়ে চাকরি করে। আজ টিউলিপ এমপি নির্বাচিত হয়েছে, ভাবতেও গৌরবে বুক ফুলে ওঠে।

শেখ হাসিনা বলেন, এত ছোট্ট মেয়ে যে কী কষ্ট করতে পারে তা নির্বাচনের সময় প্রমাণ করেছে। প্রতিটি ঘরে ঘরে গিয়ে সে ভোট চেয়েছে। শত প্রতিকূলতা এবং অপপ্রচার মোকাবেলা করে টিউলিপকে বিজয়ী হতে হয়েছে। টিউলিপের আন্তরিকতা, নিষ্ঠা ও কর্মদক্ষতা সত্যিই অবাক করার মতো।

তিন বাঙালি কন্যাকে বিজয়ী করার জন্য প্রবাসী বাঙালিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সবাইকে হারিয়ে শুধুমাত্র দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য রাজনীতি করছি। দেশের মানুষের কল্যাণ ও উন্নত জীবন দেওয়াই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুই আমাদের শিখিয়েছেন ত্যাগ ছাড়া কোন মহৎ অর্জন সম্ভব নয়। বাঙালি জাতি বিজয়ীর জাতি। তাই বাঙালির মাথায় যেন সব সময় বিজয়ের মুকুট থাকে।

নির্বাচিত রুশনারা হক, রুপা হক ও টিউলিপ সিদ্দিক’র রাজনৈতিক জীবন যাতে আরও সুন্দর ও সার্থক হয়- এজন্য প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর দোয়া কামনা করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *