অর্ধেকে নেমেছে অর্ডার, খাত নিয়ে বাড়ছে শঙ্কা

Slider

গত বছরের তুলনায় চলতি বছর দেশের তৈরি পোশাক কারখানাগুলোতে ক্রয়াদেশ বা অর্ডার কমেছে ৪০-৪৫ শতাংশ। কোনো কোনো কারখানায় ৫০ শতাংশ পর্যন্ত অর্ডার কমেছে। এ নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, বৈশ্বিক সংকটের ধাক্কায় ক্রয়াদেশ কমে যাওয়ার পর মাঝখানে কিছুটা ইতিবাচক ধারা দেখা গেলেও এই খাতে আবারও সংকট শুরু হয়েছে।

উদ্যোক্তারা বলছেন, দ্রুতগতিতে অর্ডার কমে যাওয়া নতুন দুশ্চিন্তা তৈরি করেছে। বহু কারখানায় অর্ডার কমেছে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত। এ ছাড়া দফায় দফায় গ্যাস-বিদ্যুতের বাড়তি দামে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা কঠিন করে তুলেছে। টিকে থাকতে না পেরে লোকসানি ও রুগ্ন প্রতিষ্ঠানে পরিণত হওয়ার পথে বহু কারখানা।

আর্থিক সংকটে গত এক বছরে চট্টগ্রামের ১২টি গার্মেন্ট কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। আরও বেশ কয়েকটি বন্ধের পথে। আবার কোনো কোনো কারখানা কর্মঘণ্টা কমিয়ে আনছে। সাময়িক লে-অফও করতে বাধ্য হচ্ছে কোনো কোনোটি। একই চিত্র গাজীপুর, আশুলিয়াসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের।

জানা গেছে, দেশের প্রায় ৮৫ শতাংশ পোশাক রপ্তানি হয় ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্রে। মুদ্রাস্ফীতির প্রভাবে আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের কাছ থেকে ওয়ার্ক অর্ডার কমে যাওয়ায় আগামী ৬ মাস দেশের পোশাকশিল্পের জন্য চ্যালেঞ্জিং হবে বলে মনে করছেন রপ্তানিকারকরা। তবে ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে ব্যাংকের সুদহারের প্রভাব কমে যাওয়ায় এবং পশ্চিমা দেশগুলোতে দ্রব্যমূল্য কমতে শুরু করলে পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটবে বলে মনে করছেন তারা।

তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম আমাদের সময়কে বলেন, ‘করোনার ধাক্কা কটিয়ে উঠতে পারলেও দেশের তৈরি পোশাকশিল্প রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পারছে না। এ যুদ্ধ শিল্প উদ্যোক্তাদের নতুন করে দুশ্চিন্তায় ফেলেছে। নতুন সংকট সৃষ্টি করেছে। প্রায় কারখানায় অর্ধেক অর্ডার কমেছে। এর পর গ্যাস-বিদ্যুতের বাড়তি দাম।’

মোহাম্মদী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিজিএমইএর পরিচালক নাভিদুল হক আমাদের সময়কে জানান, তার প্রতিষ্ঠানে অর্ডার কমেছে প্রায় ৫০ শতাংশ। গত বছর ১৪ লাখ পিস পোশাক রপ্তানি করলেও এই বছর সেই পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭ লাখে। রপ্তানি অর্ধেক হলেও ঋণ করে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দিয়ে ধরে রাখতে হচ্ছে। গ্যাস-বিদ্যুতের পুরো বিল দিতে হচ্ছে।

এদিকে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বলছে, দেশের তৈরি পোশাকের রপ্তানি বাড়ছে। গেল অর্থবছরের শুধু জুন মাসে ওভেন ও নিট পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৪ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলারের। এ সময়ে দুই খাত মিলে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৬ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার। এ সময়ে অর্জন হয়েছে ৪৬ দশমিক ৯৯ বি?লিয়ন ডলার। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় মাত্র শূন্য দশমিক ৪১ শতাংশ এগিয়ে রয়েছে।

তবে এমন চিত্র মানতে নারাজ তৈরি পোশাক খাতসংশ্লিষ্টরা। বিজিএমইএর পরিচালক নাভিদুল হক বলেন, ‘অর্ডার কমেছে, উৎপাদন কমেছে। তা হলেও রপ্তানি কূভাবে বাড়ে তা আমার জানা নেই।’ একই মন্তব্য নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মাদ হাতেমের। তিনি বলেন, ইপিবির তথ্য বলছে- রপ্তানি বেড়েছে। কিন্তু বাস্তবে আমরা দেখছি অর্ডার কমেছে। তার কারখানায় প্রায় ৪৫ শতাংশ অর্ডার কমেছে। এর মধ্যে গ্যাস-বিদ্যুতের বাড়তি দাম নতুন খড়গ সৃষ্টি করেছে।

আরেক উদ্যোক্তা বিজিএমইএর পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল আমাদের সময়কে বলেন, মূল্যস্ফীতির কারণে সব পণ্যের দাম বেড়েছে। বিশেষ করে আমদানি পণ্যে যেমন দাম বেড়েছে, রপ্তানি পণ্যেও দাম বেড়েছে। এ কারণেই মূলত রপ্তানি বাড়তি দেখায়। বাস্তবে অর্ডার কম, পণ্য রপ্তানিও কম। টাকার অংকে বাড়লেও পণ্য সংখ্যায় রপ্তানি কম। বর্তমানে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট চলছে। এমন পরিস্থিতিতে টিকে থাকাই বড় চ্যালেঞ্জ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *