ডা. সংযুক্তার ওপর ফের দায় চাপাল সেন্ট্রাল হাসপাতাল

Slider বাংলার মুখোমুখি


ঢাকার সেন্ট্রাল হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের পর প্রথমে নবজাতক এবং পরে মা মাহবুবা রহমান আঁখির মৃত্যুর ঘটনায় ডা. সংযুক্তা সাহার ওপর আবার দায় চাপিয়েছে হাসপাতালটি।

রোববার সেন্ট্রাল হাসপাতালের পরিচালক ডা. এম এ বি সিদ্দিক ও ডা. এমএম কাশেমের স্বাক্ষরে সংবাদমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি করা হয়েছে।

এতে একই সঙ্গে অভিযোগ প্রমাণ হওয়ার আগেই গ্রেপ্তারের পর কারাগারে আটক হাসপাতালের দুই চিকিৎসক ডা. শাহজাদী মুস্তার্শিদা সুলতানা ও ডা. মুনা সাহার মুক্তিও চেয়েছে হাসপাতালটি।

গত ১৮ জুন ল্যাব এইড হাসপাতালে মারা যান আঁখি। গ্রিনরোডে অবস্থিত সেন্ট্রাল হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের পর আখির শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে ল্যাব এইড হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এর আগে স্বাভাবিক প্রসবের আকাঙ্খায় কুমিল্লা থেকে ঢাকায় চিকিৎসা নিতে আসা এ প্রসূতির নবজাতক সেন্ট্রাল হাসপাতাল মারা যায়।

চিকিৎসায় গাফিলতিতে নবজাতক ও মায়ের মৃত্যুর অভিযোগে আলোচনা তৈরি করা এ ঘটনার পর দুইবার সংবাদ সম্মেলন করে এজন্য সেন্ট্রাল হাসপাতালকে দায়ি করেন সংযুক্তা সাহা। পরে বক্তব্য প্রত্যাহার করতে সংযুক্তাকে আইনি নোটিস পাঠায় সেন্ট্রাল হাসপাতাল।

আঁখির অস্ত্রোপচারের ১০ দিন পর প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ সংযুক্তা সাহা দাবি করেন, আঁখিকে যখন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, তখন তিনি দেশেই ছিলেন না। তাকে ‘না জানিয়ে’ওই রোগীকে ভর্তি করা হয়েছে। সুতরাং শিশু ও মায়ের মৃত্যুতে তার কোনো দায় ‘ছিল না’।

আলোচিত এ মৃত্যু নিয়ে একে অপরের ওপর দোষ চাপানোর মধ্যে রোববার সংবাদমাধ্যমে পাঠানো ৯ পৃষ্ঠার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটিত হবে এবং দোষীরা শাস্তির আওতায় আসবে-এজন্য সেন্ট্রাল হাসপাতাল এ বিষয়ে এতদিন কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেয়নি। কিন্তু সেন্ট্রাল হাসপাতাল নীরব থাকায় অসত্য ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তথ্য দেওয়া হচ্ছে এবং প্রমাণিত হওয়ার আগেই সেন্ট্রাল হাসপাতালকে দায়ি করা হয়েছে। এজন্য এই সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে।’

দীর্ঘ এ বিজ্ঞপ্তিতে মাহবুবা রহমান আঁখিকে হাসপাতালে ভর্তির আগে-পরের বিভিন্ন ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে।

সেন্ট্রাল হাসপাতাল দাবি করেছে, আঁখি প্রসবজনিত অসম্পূর্ণ চিকিৎসা ও প্রসব ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে এসেছিল। সেখানে আসার আগে তারা ডা. সংযুক্তা সাহার ব্যক্তিগত সহকারী মো. জহির এবং ব্যক্তিগত সহকারী চিকিৎসক ডা. জেনির সঙ্গে যোগাযোগ করে চিকিৎসা নিতে আসেন।

এতে বলা হয়, সংযুক্তা সাহা সিজারিয়ান অপারেশনের পাশাপাশি স্বাভাবিক ডেলিভারি করান। এজন্য তার ব্যক্তিগত কিছু কর্মচারীও আছে। রোগী দেখার জন্য তিনি প্রতিদিন বিভিন্ন চিকিৎসককে ‘অন কল’ হিসেবে রাখেন। সেদিন ডা. শাহজাদী এবং ডা. জেনি অন কল চিকিৎসক ছিলেন। ডা. শাহজাদী সেন্ট্রাল হাসপাতালের গাইনি বিভাগের ডেপুটি ইনচার্জ। তবে সেদিন হাসপাতালে তার ডিউটি ছিল না। সেদিন ডা. সংযুক্তার রোগীর তত্ত্বাবধানের জন্য তিনি রাত ১১টা পর্যন্ত হাসপাতালে ছিলেন।

আঁখি হাসপাতালে আসলে ডা. মুনা সাহা তাকে রিসিভ করেন এবং বিষয়টি ডা. শাহজাদীকে জানান। মুনার বক্তব্যের বরাতে সেন্ট্রাল হাসপাতাল জানায়, ওই রোগী যে আসবেন তা ডা. শাহজাদী তাকে জানিয়েছিলেন। অপরদিকে ডা. শাহজাদীর বক্তব্যের বরাত দিয়ে সেন্ট্রাল হাসপাতাল জানায়, রাতে সংযুক্তা সাহা রাউন্ড দেওয়ার সময় ডা. শাহজাদীকে কুমিল্লা থেকে একজন রোগী আসার কথা জানান এবং তাকে দেখার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়, ডা. সংযুক্তা দুটি সংবাদ সম্মেলনেই অসত্য, বিভ্রান্তিকর এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তথ্য দেওয়ায় হাসপাতালের সুনাম ক্ষুন্ন হয়েছে। তিনি নিজের দায় সেন্ট্রাল হাসপাতালের ওপর চাপানোর চেষ্টা করা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সংযুক্তা সাহার নির্দেশ ছিল তার অনুপস্থিতিতে তার নামে রোগীর ভর্তি দিতে হবে। এর আগেও তার অবর্তমানে তার নামে রোগী ভর্তি হয়েছে এবং তার মনোনীত কনসালটেন্টরা চিকিৎসা দিয়েছেন। নরমাল ডেলিভারি এবং তার রোগীদের জন্য একটি দল ছিল। তার অন কল চিকিৎসক আছেন যারা রোগী দেখাশুনা করেন। সেন্ট্রাল হাসপাতালের চিকিৎসকরা ডা. সংযুক্তা সাহা এবং তার টিমের নিদের্শনা অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করেন। আঁখিকে ওই চিকিৎসকের অধীনে ভর্তির বিষয়টি হাসপাতাল প্রশাসন জানত না বলে বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়।

এতে বলা হয়, ডা. সংযুক্তা ৯ জুলাই রাত ১টা ৪০ মিনিটে দুবাই যাওয়ার আগে কুমিল্লা থেকে আসা সন্তানসম্ভবা আঁখির হাসপাতালে আসার বিষয়টি জানতে পারেন। ওই রোগীর চিকিৎসা কীভাবে হবে সে বিষয়ে তার ‘অন কল’ চিকিৎসকদের নির্দেশনা দেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে না জানিয়েই তিনি দুবাই যান বলে দাবি করা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।

প্রথমে নবজাতক ও পরে মায়ের মৃত্যুর পর এ ঘটনায় চিকিৎসায় গাফিলতিতে মৃত্যুর অভিযোগে আঁখির স্বামী ইয়াকুব আলী মামলা দায়ের করেছেন। এ মামলায় সেন্ট্রাল হাসপাতালের দুই চিকিৎসক গ্রেপ্তারের পর এখন কারাগারে আছেন।

এছাড়া সেন্ট্রাল হাসপাতাল এবং ডা. সংযুক্তা সাহার নিবন্ধন বাতিলের পাশাপাশি দুই কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করে ইয়াকুব বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিলে (বিএমডিসি) লিখিত অভিযোগ করেছেন।

কাউন্সিলের রেজিস্ট্রারের দপ্তরে জমা দেওয়া ওই অভিযোগে বলা হয়েছে, সেন্ট্রাল হাসপাতাল তথ্য গোপন করে এবং ভুল চিকিৎসার মাধ্যমে আঁখি ও তার নবজাতক সন্তানকে ‘হত্যা করেছে’।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *