আজ চাঁদ দেখা গেলে কাল ঈদ

Slider ফুলজান বিবির বাংলা

বছর ঘুরে আবার এলো ঈদুল ফিতর। ২০২০ সালে কোভিড মহামারী শুরুর পর এবারই প্রথম ‘বিধিনিষেধহীন’ ঈদ উদযাপন করবে দেশের মানুষ। এবার থাকবে না মাস্ক পরার বাধ্যবাধকতা; এবার ঈদগাহ ময়দানে যাওয়া যাবে জায়নামাজ নিয়ে; নামাজে দাঁড়ানো যাবে ‘সামাজিক দূরত্ব’ বজায় না রেখেই।

আজ শুক্রবার বাংলাদেশের আকাশে চাঁদ দেখা গেলে আগামীকাল শনিবার ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে। আর চাঁদ দেখা না গেলে শনিবার রমজান মাসের ৩০ দিন পূর্ণ হবে। সে ক্ষেত্রে ঈদ হবে রবিবার (২৩ এপ্রিল)।

এবার স্বাস্থ্যবিধি কিংবা কোভিড সংক্রমণ না থাকলেও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি মানুষের ঈদ আনন্দে দাগ ফেলতে পারে। ভোগান্তি হতে পারে তীব্র গরমের কারণেও। পবিত্র ঈদুল ফিতর শনিবার নাকি রবিবার, সে সিদ্ধান্ত নিতে আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে সভা করবে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি। তবে এরই মধ্যে চাঁদ দেখা নিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তর যে ব্যাখা দিয়েছে, তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে।

সাধারণত ঈদের চাঁদ দেখা ও ঘোষণার দায়িত্ব জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির। কিন্তু আবহাওয়া অফিস ২৭ রমজানই ঘোষণা দেয়, শুক্রবার (আজ) ২৯ রমজানে সন্ধ্যা ৬টা ২৫ মিনিট থেকে ৭টা পর্যন্ত শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা যাবে। অর্থাৎ শনিবার হবে ঈদুল ফিতর।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের এই বিজ্ঞপ্তিতে আপত্তি জানিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। তারা জানিয়েছে, চাঁদ দেখা নিয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়ার এখতিয়ার আবহাওয়া অধিদপ্তরের নেই। যদিও বৃহস্পতিবার আগের অবস্থান থেকে সরে এসেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তারা সংশোধনী দিয়ে বলেছে, অবস্থানগত কারণে আকাশ মেঘমুক্ত থাকা সাপেক্ষে বাংলাদেশে চাঁদ দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ব্যাপারে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আফরোজা সুলতানা জানান, চাঁদ দেখা যেহেতু ধর্মীয় বিষয়, তাই ‘দেখা যাবে’-এর স্থলে ‘সম্ভাবনা আছে’ বলে পূর্বাভাসে সংশোধনী আনা হয়েছে। এ অবস্থায় আজ শুক্রবার জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি ঘোষণা করবে কবে ঈদুল ফিতর।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় সভাপতিত্ব করবেন কমিটির সভাপতি ও ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান। বাংলাদেশের আকাশে কোথাও শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেলে তা টেলিফোন (০২-২২৩৩৮১৭২৫, ০২-৪১০৫০৯১২, ০২-৪১০৫০৯১৬ ও ০২-৪১০৫০৯১৭), ফ্যাক্স নম্বর (০২-২২৩৩৮৩৩৯৭, ০২-৯৫৫৫৯৫১) অথবা সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক অথবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানোর অনুরোধ জানিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।

এদিকে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, ‘মাসব্যাপী সিয়াম সাধনা ও সংযম পালনের পর অপার খুশি আর আনন্দের বার্তা নিয়ে পবিত্র ঈদুল ফিতর আমাদের মাঝে সমাগত। আমি দেশবাসীসহ সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানাই।’ তিনি বলেন, ঈদুল ফিতর মুসলমানদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব। ঈদ আমাদের একটি সর্বজনীন উৎসব। ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে সবার মাঝে, গ্রাম-গঞ্জে, সারা বাংলায়, সারা বিশ্বে। সব ভেদাভেদ ভুলে এ দিন সব শ্রেণি-পেশার মানুষ এক কাতারে শামিল হন এবং ঈদের আনন্দকে ভাগাভাগি করে নেন। ঈদ সবার মধ্যে গড়ে তোলে সৌহার্দ, সম্প্রীতি আর ঐক্যের বন্ধন।

রাষ্ট্রপতি বলেন, ঈদুল ফিতরের শিক্ষা সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়–ক, গড়ে উঠুক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ- এ প্রত্যাশা করি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক বাণীতে সব অন্যায়, অনাচার, হানাহানি ও কুসংস্কার পরিহার করে শান্তির ধর্ম ইসলামের চেতনাকে ব্যক্তি, সমাজ ও জাতীয় জীবনের সব স্তরে প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ঈদ শান্তি, সহমর্মিতা ও ভ্রাতৃত্ববোধের অনুপম শিক্ষা দেয়। হিংসা-বিদ্বেষ ও হানাহানি ভুলে মানুষ সাম্য, মৈত্রী ও সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়। ঈদ ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবার জীবনে আনন্দের বার্তা বয়ে নিয়ে আসে। ঈদের আনন্দ আমাদের সবার।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে মুসলমানদের আত্মশুদ্ধি, সংযম, সৌহার্দ ও সম্প্রীতির মেলবন্ধন পরিব্যাপ্তি লাভ করুক- এটাই হোক ঈদ উৎসবের ঐকান্তিক কামনা। হাসি-খুশি ও ঈদের অনাবিল আনন্দে প্রতিটি মানুষের জীবন পূর্ণতায় ভরে উঠুক। বিশ্বের সব মানুষের সুখ-শান্তি, কল্যাণ ও উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি হোক আজকের দিনে আমি মহান আল্লাহর কাছে এ প্রার্থনা করি।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *