জেলা পরিষদ নির্বাচন নিবিড় পর্যবেক্ষণে নির্বাচন কমিশন

Slider জাতীয়


দেশের ৫৭টি জেলায় অনুষ্ঠিত জেলা পরিষদ নির্বাচন কেন্দ্রীয়ভাবে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয় থেকে সিসিটিভির মাধ্যমে মনিটরিং করছেন নির্বাচন কমিশনাররা।

সোমবার সকাল ৯টা থেকে শুরু হওয়া জেলা পরিষদ নির্বাচন রাজধানীর আগারগাঁয়ে নির্বাচন ভবন থেকে পর্যবেক্ষণ করছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল সহ অন্যান্য নির্বাচন কমিশনাররা। এ সময় নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত দেশের কোথাও কোনো অনিয়মের খবর পায়নি নির্বাচন কমিশন।

আইন অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট জেলার অধীনে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্বাচিত প্রতিনিধিরা এ নির্বাচনে ভোট দিবেন।

নির্দলীয় এ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএমে) ভোটগ্রহণ করা হবে। প্রতিটি ভোট কক্ষে রয়েছে সিসি ক্যামেরা। সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকা প্রতিটি কেন্দ্র ইসি কার্যালয়ের মনিটরিং সেল থেকে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

তিনটি পার্বত্য জেলা বাদে দেশের ৬১টি জেলায় নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও দুটি জেলা ভোলা ও ফেনীতে সব পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে যাওয়ায় সেখানে ভোটের প্রয়োজন হচ্ছে না। এছাড়া জেলা নোয়াখালী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের নির্বাচন আদালতের নির্দেশে স্থগিত করা হয়েছে।

নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ২৬ জন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এ ছাড়াও সাধারণ সদস্য পদে ৬৫ জন এবং সংরক্ষিত সদস্য পদে ১৮ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।

ইসির তথ্য অনুযায়ী, জেলা পরিষদে মোট ৯২ জন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। অপরদিকে সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে প্রার্থী ৬০৩ জন আর সাধারণ পদে মোট প্রার্থীর সংখ্যা এক হাজার ৪৮৫ জন।

এদিকে নির্বাচনী পরিবেশ সুষ্ঠু ও প্রভাবমুক্ত রাখতে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় আছে ইসি। বিশেষ করে গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচনের নানা ঘটনার পর এ নির্বাচনকে বেশ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে ইসি। কোনো জেলায় যাতে স্থানীয় এমপি, মন্ত্রী বা প্রভাবশালী কোনো ব্যক্তি ভূমিকা রাখতে না পারে সেজন্য এর মধ্যেই তাদের সতর্ক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মোঃ আলমগীর।

নির্বাচন কমিশন থেকে একাধিক নির্দেশনা দিয়ে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের কথা বলা হয়েছে। ভোটকক্ষের গোপনীয়তা রক্ষা নিশ্চিতকরণ ও ভোটকক্ষে ভোটাররা যাতে মোবাইল নিয়ে প্রবেশ করতে না পারে প্রিজাইডিং অফিসার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের সেই নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে।

নির্বাচনী এলাকায় মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স নিয়োগ

ইসির যুগ্ম সচিব আসাদুজ্জাামান বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচনের জন্য ৯৪ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তারা ভোটগ্রহণের আগে দুই দিন, ভোটগ্রহণের দিন ও ভোটগ্রহণের পরের দিন মোট পাঁচ দিন দায়িত্ব পালন করবেন।

তিনি আরো বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের জন্য পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে একটি মোবাইল/স্ট্রাইকিং ফোর্স এবং র‍্যাবের একটি করে মোবাইল/স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। ১৯টি বৃহত্তর জেলায় দুই প্লাটুন করে বিজিবি রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে মোতায়েন করা হয়েছে এবং অন্যান্য জেলাসমূহে এক প্লাটুন করে বিজিবি রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে মোতায়েন করা হয়েছে।

ভোটার সংখ্যা ও ভোটকক্ষ

জেলা পরিষদ নির্বাচনে মোট ভোটার ছয় হাজার ৮৬৬ জন জনপ্রতিনিধি। অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ৫৭টি জেলার স্থানীয় সরকারের চারটি প্রতিষ্ঠানের (সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদ) নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের তথ্যের ভিত্তিতে এ ভোটার তালিকা তৈরি করা হয়েছে।

নির্বাচনী কেন্দ্র হচ্ছে ৪৬২টি এবং নির্বাচনী কক্ষ হচ্ছে ৯২৫টি। জেলা পরিষদ নির্বাচনের জন্য প্রতিটি কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা বসাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন ব্যাবস্থাপনা শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব মুহাম্মদ এনাম উদ্দীন এ তথ্য জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য, এর আগে সবশেষ ২০১৬ সালের ১৮ ডিসেম্বর এসব জেলা পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় পর্যায়ে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে জনগণের কাছে সহজে পৌঁছে দেয়া এবং জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে আরো স্বচ্ছ এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিতকল্পে ২০০০ সালে যে আইন প্রণীত হয় তা বাস্তবায়িত হয় ২০১৬ সালে। সে বছর বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক জেলা পরিষদ আইনের আওতায় প্রথমবারের মত নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিটি জেলায় একজন করে চেয়ারম্যান, ১৫ জন সদস্য এবং ৫ জন সংরক্ষিত মহিলা সদস্য- এই মোট ২১ জনের সমন্বয়ে জেলা পরিষদ তার কার্যক্রম শুরু করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *