হোটেলে বৈঠকে বসতে অসম্মতি, নারীকে গালিগালাজ করা সেই এসআই ক্লোজড

Slider নারী ও শিশু


নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে হোটেলে বৈঠকে বসতে অসম্মতি জানালে সেবাপ্রত্যাশী এক নারীকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেছেন পুলিশের উপ-পরিদর্শক। এ ঘটনার একটি ভিডিও ও কল রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এর জেরে গতকাল রোববার দিবাগত রাতে কোম্পানীগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. রতন মিয়াকে পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়েছে।

এর আগে শনিবার সন্ধায় কোম্পানীগঞ্জ থানার প্রধান ফটকে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর দিন সকালে ভুক্তভোগী ওই নারীকে বাড়ি গিয়েও হুমকি-ধমকি দিয়ে ঘটনা নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে এসআই রতন নিষেধ করেন বলেও অভিযোগ।

ভুক্তভোগী সেতারা বেগম কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরকাঁকড়া ইউনিয়নের আকবর হাজী বাড়ির মৃত আবু বক্কর ছিদ্দিকের স্ত্রী।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‌‘৭ মাস আগে তার ছেলে নুরনবীকে (২৭) প্রতারণা করে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সৌদি নিয়ে ৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় উপজেলার সিরাজপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মেহের আলী কামলা বাড়ির সৌদি প্রবাসী সাইফুল ইসলাম। কথা ছিল, সাইফুল সৌদি নিয়ে আমার ছেলেকে আবাসিক হোটেলে চাকরি দেবে। বেতন হবে ১ হাজার ৮০০ রিয়াল। ’

‘‌কিন্তু তিন মাস একটা রুমে রাখে চাকরি না দিয়ে। গত ৭ মাসেও সে আমার ছেলেকে কোনো চাকরি দিতে পারেনি। এক পর্যায়ে আকামা করার জন্য পুনরায় ১ হাজার রিয়াল নেয়। এখানেও সাইফুল প্রতারণা করে আমার ছেলেকে খুরুজ লাগানো আকামা দেয়। এ কারণে কেউ তাকে আকামা দেখে কাজ দেয় না’, বলেন ভুক্তভোগী ওই নারী।

তিনি আরও বলেন, ‘এসব প্রতারণার অভিযোগ তুলে গত ১৫-২০ দিন আগে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করতে যাই। থানার গেটে অন্য একজনের মাধ্যমে এসআই রতনের সঙ্গে দেখা হলে তিনি সমস্যা সমাধান করে দেওয়ার আশ্বাস দেন এবং থানায় না যেতে বলেন। আমরা সরল মনে তাকে বিশ্বাস করে থানার ভেতরে লিখিত অভিযোগ নিয়ে যাইনি। রতন মিয়ার কাছেই আমাদের লিখিত অভিযোগের দুই কপি জমা দেই।’

সেতারা বেগম বলেন, ‘ওই অভিযোগে বিবাদী করা হয় সৌদি প্রবাসী সাইফুল ইসলামের মা-বাবা ও স্ত্রীকে। সমস্যা সমাধানের কখা বলে রতন আমাদের কাছ থেকে কিছু টাকা পয়সা ও নেয়।’

তিনি বলেন, গত শুক্রবার প্রথম বৈঠকে থানায় বিবাদী পক্ষের কেউ আসেনি। দ্বিতীয় বৈঠকে বসার জন্য এসআই রতন বিবাদীদের বাড়িতে গিয়ে বৈঠকে বসার বিষয়ে বলে আসেন। তারপর গত শনিবার সন্ধ্যার দিকে এসআই ফোন দিয়ে জানায়, থানায় কোনো বৈঠক হবে না। বৈঠক হবে বসুরহাট বাজারের হক হোটেলে। এ নিয়ে আমি হোটেলে গিয়ে বৈঠকে বসতে অস্বীকৃতি জানালে এসআই মুঠোফোনে অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করেন। তখন মুঠোফোনে আমি বলি, থানায় অভিযোগ করেছি বৈঠকও থানায় হবে। এরপর এসআই আমাকে থানার গেটে আসতে বলেন।’

‘থানার গেটের ভেতরে প্রবেশ করলে পুনরায় সে বিশ্রী ভাষায় সাধারণ মানুষের সামনে গালমন্দ করে। যা মুখে বলা যায় না। পরে আমি কাঁদতে কাঁদতে থানা থেকে চলে যাই’, বলেন ভুক্তভোগী ওই নারী।

জানতে চাইলে কোম্পানীগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. রতন মিয়া বলেন, ‘ওই নারী থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ করেনি। তার মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে বিষয়টি সমাধান করতে চেয়েছিলাম। তবে হোটেলে বৈঠকে না যাওয়ায় রাগের মাথায় একটু উত্তজিত হয়ে ওই নারীর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছি। তবে ওই নারীর বাড়িতে গিয়ে তাকে শাসানো হয়নি এবং কোনো ধরনের টাকা পয়সার লেনদেন হয়নি।’

এ ব্যাপারে কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাদেকুর রহমান বলেন, ‘ভুক্তভোগী নারী কোনো লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তারপরও সম্পর্কের কারণে বিষয়টি সমাধানে এসআই রতন তৎপর ছিল বলে শুনেছি। কিন্তু গালিগালাজের যে ঘটনা সেটা খুবই দুঃখজনক। গতকাল রাতেই তাকে ক্লোজড করা হয়েছে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *