বিদ্যুৎ গ্যাস সঙ্কটে নাজেহাল মানুষ

Slider সারাদেশ


দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের দুরবস্থার সীমা নেই। সাথে নতুন করে গ্যাস-বিদ্যুৎ সঙ্কট তাদেরকে অসহায় করে ফেলেছে। এলাকাভেদে দিনরাতে ৭ থেকে ৮ বার বিদ্যুতের লোডশেডিং হচ্ছে। অন্যদিকে গ্যাসের সরবরাহ নেই। আগে প্রতিদিন অফিসে মানুষ দুপুরের খাবার সাথে নিয়ে আসতেন। এখন গ্যাসের চাপ না থাকায় রান্না করা যাচ্ছে না। এ কারণে অফিসে এসে হোটেল থেকে দুপুরের খাবার কিনে খেতে হচ্ছে। এতে ব্যয় আরো বেড়ে যাচ্ছে। এভাবে চলছে মানুষের নাজেহাল জীবন।

কথাগুলো বলছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা। তিনি থাকেন রাজধানীর গেন্ডারিয়ায়। রাজধানীর প্রতিটি এলাকায় গ্যাসের চাপ কমে গেছে। রান্না করা যাচ্ছে না। অনেকেই বিকল্প হিসেবে ইলেকট্রিক ও কেরোসিনের চুলা কিনছেন। এদিকে, গ্যাস সঙ্কটে সিএনজি স্টেশনগুলোতে আরো দুই ঘণ্টা বন্ধ রাখার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে সিএনজি স্টেশন মালিকদের সাথে গতকাল বুধবার বৈঠক করা হয়েছে। বৈঠকে মালিকরা পেট্রোবাংলার প্রস্তাব সরাসরি নাকচ করে দিয়েছেন। একজন মালিক জানান, এমনিতেই ৫ ঘণ্টা সিএনজি স্টেশনগুলোতে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখা হচ্ছে। বিদ্যুৎ না থাকায় আরো ৫-৬ ঘন্টা গ্যাস বিক্রি বন্ধ থাকছে। এর ফলে তারা পথে বসে যাচ্ছেন। কর্মচারীদের বেতনভাতা পরিশোধ করাই এখন কঠিন হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় আরো দুই ঘণ্টা বন্ধ রাখা হলে তাদের ব্যবসা বন্ধ করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।

বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গ্যাসের সঙ্কটে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। একই সাথে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়া এবং ডলার সঙ্কটে কাক্সিক্ষত হারে এলএনজিসহ জ্বালানি তেল আমদানি সম্ভব হচ্ছে না। ফলে জ্বালানি তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে উৎপাদন অর্ধেকের নিচে নেমে গেছে। তাই চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। এতে বিদ্যুতের লোডশেডিং ভয়াবহ আকারে পৌঁছেছে। খোদ রাজধানী ঢাকাতেই দিনে ৭-৮বার বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে। রাজধানীর বাইরে তো আরো ভয়াবহ অবস্থা। সবচেয়ে বেকায়দায় পড়েছেন শিল্প উদ্যোক্তারা। তারা জানিয়েছেন, এমনিতেই জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় পণ্যের উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। এর ওপর ঘনঘন লোডশেডিংয়ে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। জেনারেটর চালিয়ে বেসরকারি ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য উৎপাদন করতে ব্যয় আরো বেড়ে যাচ্ছে। সব মিলে বড় অঙ্কের লোকসানে পড়ছেন উদ্যোক্তারা।

এদিকে লোডশেডিংয়ের পাশাপাশি গ্যাস সঙ্কটও তীব্র আকার ধারণ করেছে। গ্যাসের চাপ থাকছে না বললেই চলে। অনেকেই রাত জেগে রান্না করতে হচ্ছে। গ্যাসের চাপ না থাকায় বেশির ভাগ বাসাবাড়িতেই রান্নার চুলা জ্বলছে না। মাকিননগর থেকে আয়শা আক্তার নামের এক গৃহিণী জানান, সব পণ্যের দাম বেড়ে গেছে, আয়ের সাথে ব্যয় মেলাতে পারছেন না। প্রয়োজনীয় অনেক পণ্য কিনতে পারছেন না। এর ওপর নতুন করে যুক্ত হয়েছে গ্যাস সঙ্কট। মাস শেষে ঠিকই তিতাসের বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে। কিন্তু গ্যাসের চাপ থাকছে না। এতে রান্না প্রায় বন্ধ। এখন বাধ্য হয়ে হোটেল থেকে কিনে খেতে হচ্ছে।

দক্ষিণ বনশ্রীর বাসিন্দা আজাদ হোসেন জানান, করোনার সময় চাকরি চলে গেছে। এরপর থেকে বেঁচে থাকার সংগ্রামে আছেন। সামান্য একটি চাকরি জুটিয়েছেন। কিন্তু পণ্যের দাম যে হারে বেড়েছে তাতে আয় দিয়ে দিন চলছে না। বাধ্য হয়ে প্রয়োজনীয় অনেক জিনিসই কিনতে পারছেন না। এর ওপর নতুন করে যুক্ত হয়েছে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সঙ্কট। ঘরে দুই দিন যাবত মেহমান এসেছেন। সকালে গ্যাসের চাপ না থাকায় রান্না করতে পারছেন না। বাধ্য হয়ে হোটেল থেকে কিনে খেতে হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে কবে মুক্তি মিলবে তা বলতে পারছেন না।

এদিকে গ্যাসের অভাবে সরকার ঘোষণা দিয়ে সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত সিএনজি স্টেশনগুলোতে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। এর সাথে নতুন করে আরো দুই ঘণ্টা নিয়ে মোট ৭ ঘণ্টা সিএনজি স্টেশনগুলোতে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ জন্য গতকাল সিএনজি স্টেশন মালিকদের সাথে বৈঠক করেছে পেট্রোবাংলা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিএনজি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি ফারহান নূর গতকাল নয়া দিগন্তকে জানান, গতকাল আমাদের ডেকে গ্যাস সঙ্কটের কথা জানিয়ে সহযোগিতা চায় পেট্রোবাংলা। কী সহযোগিতা করতে হবে জানতে চাইলে তারা জানান, তারা আরো দুই ঘণ্টা সিএনজি স্টেশন বন্ধ রাখতে চান। কিন্তু আমাদের যে পরিস্থিতি তাতে আমরা অসম্মতি জানাই। তিনি বলেন, বর্তমানে সিএনজি স্টেশনগুলো সরবরাহ করা গ্যাসের মাত্র ৩ শতাংশ ব্যবহার করে সর্বোচ্চ দাম দেয়। এই অল্প গ্যাসে রেশনিং বাড়িয়ে খুব বেশি লাভ হবে না। বরং গাড়িতে তেল ব্যবহারের পরিমাণ বাড়বে, যা দেশের পরিবেশ ও অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর। গত ১ মার্চ থেকে সিএনজি স্টেশনগুলো সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত ৫ ঘণ্টা বন্ধ থাকছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *