ইরানে হিজাববিরোধী বিক্ষোভে নিহত বেড়ে ৩১

Slider সারাবিশ্ব

ISTANBUL, TURKEY – SEPTEMBER 21: People hold signs and chant slogans during a protest over the death of Iranian Mahsa Amini outside the Iranian Consulate on September 21, 2022 in Istanbul,Turkey. Mahsa Amini fell into a coma and died after being arrested in Tehran by the morality police, for allegedly violating the countries hijab rules. Amini’s death has sparked days of violent protests across Iran, which has so far seen more the five people killed. (Photo by Chris McGrath/Getty Images)

পুলিশ হেফাজতে তরুণী মৃত্যুর প্রতিবাদে ইরানে চলমান সহিংস বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। মানবাধিকার সংস্থার দাবি এ পর্যন্ত ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে, তবে দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানিয়েছে ১৭ জন নিহত হয়েছে। বিক্ষোভ দমনে

সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা যায়, ইরানে নৈতিকতা পুলিশের হেফাজতে মাহসা আমিনির মৃত্যুর প্রতিবাদে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভে সপ্তম দিনেও উত্তাল ছিল ইরান। অনেক সরকারি ভবন এবং পুলিশ স্টেশনে আগুন লাগানোর খবর জানিয়েছে দেশটির সরকার। ৮০টিরও বেশি শহরে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে জোর চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ। ইতোমধ্যে অনেককেই আটক করা হয়েছে। একই সঙ্গে বিক্ষোভ দমনে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি অধিকারকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে বলেও জানা গেছে।

বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে এরই মধ্যে ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপ বন্ধ করে দিয়েছে দেশটির সরকার। একই সঙ্গে ইন্টারনেট ব্যবহারেও কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। দেশজুড়ে চলমান বিক্ষোভের কারণে এমন পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার।

শুরুর ‍দিকে এই বিক্ষোভ ইরানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ কুর্দিস্তানে সীমাবদ্ধ থাকলেও বর্তমানে তা দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে এই বিক্ষোভ।

গত ১৫ সেপ্টেম্বর ২২ বছর বয়সী মাহসা আমিনিকে আটক করে দেশটির নৈতিকতা পুলিশ। ঠিকমতো হিজাব না পরায় মাহসাকে গ্রেফতারে পর পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুর পর থেকে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভে অনেকেই হিজাব না পড়ে অংশ নেন।

গত সপ্তাহে ইরানের নৈতিকতা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর তেহরানে মারা যান ২২ বছর বয়সী তরুণী মাহসা আমিনি। কর্তৃপক্ষের দাবি, গত সপ্তাহে গ্রেফতার হওয়ার পর মাশা আমিনি ‘হৃদরোগে’ আক্রান্ত হয়ে কোমায় চলে যান এবং পরে গত শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্বর) মারা যান। তবে মাহসা আমিনির পরিবার বলেছে, তাঁর আগে থেকে হৃদরোগ ছিলো না। মাহসার মরদেহ পরীক্ষা করার সুযোগ দেয়া হয়নি বলেও অভিযোগ পরিবারের।

প্রতিবাদ বিক্ষোভে ইরানের নিরাপত্তা বাহিনীর সহিংস প্রতিক্রিয়ার কড়া সমালোচনা করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন। মাহসা আমিনির মৃত্যুর ঘটনায় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানিয়ে সংস্থাটি বলছে, তার মর্মান্তিক মৃত্যু, নির্যাতনের অভিযোগ এবং পরবর্তী সময়ে কী ধরনের চিকিৎসা দেয়া হয়েছে তার সঠিক ও নিরপেক্ষ তদন্ত হতে হবে। মাহসার পরিবার যে অভিযোগ এনেছে সেটাও গুরুত্বসহকারে দেখতে হবে।

এর আগে ২০১৭ সালে কয়েক ডজন নারী জনসম্মুখে হিজাব খুলে প্রতিবাদ জানান। তখন কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এবারের আন্দোলনে অনলাইন ও সরাসরি দুই ধরণের অংশগ্রহণই চোখে পড়ার মতো। তাই রাস্তায় বিক্ষোভ মোকাবেলায় পুলিশ মোতায়েনের পাশাপাশি অনলাইনেও ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপ বন্ধ করা হয়েছে।

১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামিক বিপ্লব হওয়ার পর থেকে নারীদের জন্য হিজাব পরিধান বাধ্যতামূলক। দেশটির নৈতিকতা পুলিশ এই ড্রেস কোড কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করে। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে ড্রেস কোডের নিয়ম বাস্তবায়নে বিভিন্ন মানুষ বিশেষত তরুণীদের সঙ্গে নৈতিকতা পুলিশের বিভিন্ন কর্মকর্তাকে ঘিরে কড়া প্রতিক্রিয়া তৈরি হচ্ছে। সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশ সদস্যরা অনেক সময় জোর করে নারীদেরকে পুলিশের গাড়িতে তোলে।

এদিকে মাহসা আমিনির মৃত্যুর প্রতিবাদে বিক্ষোভ হয়েছে কানাডা, জার্মানি ও তুরস্কসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। ইরান সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছেন বিক্ষোভকারীরা। এ সময় অনেকে মাথার চুল কেটে প্রতিবাদ জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *