শীর্ষ ২৫ ঋণখেলাপির পকেটে ১০ হাজার কোটি টাকা

Slider অর্থ ও বাণিজ্য

291407_189

 

 

 

 

ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ করছেন না কিছু ব্যবসায়ী। দীর্ঘদিন ধরে ঋণ পরিশোধ না করায় এ ঋণ এখন আদায় অযোগ্য বা কুঋণে পরিণত হয়েছে। এদের কেউ কেউ অনৈতিক সুবিধা নিয়ে ঋণ নবায়ন করেছিলেন। কিন্তু পরে কিস্তি পরিশোধ না করায় আবার ওই ঋণ খেলাপি হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ না করার তালিকায় থাকা শীর্ষ ২৫ ঋণখেলাপির পকেটে রয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা। এ তালিকায় অবশ্য অনেক রাঘব বোয়াল ঋণগ্রহীতার নাম নেই।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, ৫০০ ও এক হাজার কোটি টাকার ও পরের ঋণখেলাপিদের মাত্র ১ ও ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ঋণ নবায়নের বিশেষ সুবিধা দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এ সুবিধায় ১৪টি প্রতিষ্ঠান এক বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ দীর্ঘ মেয়াদে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ নবায়ন করেছে। পুনর্গঠন করা না হলে খেলাপিদের তালিকায় এসব প্রতিষ্ঠান শীর্ষে থাকত। ঋণখেলাপি নিয়ে সেপ্টেম্বরে করা সর্বশেষ তালিকায় ৫০০ কোটি টাকার ওপরে ঋণখেলাপির সংখ্যা এখন ৫। এ পাঁচটিসহ শীর্ষ ২৫টি ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠান ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছিল ১০ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে আদায় করেছে মাত্র ৯৩৫ কোটি টাকা।

বাকি প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকাই দীর্ঘদিন ধরে ব্যাংকের কুঋণ হিসেবে আটকে রয়েছে। এ ঋণ এখন ব্যাংকের খাতায় গলার কাটা হিসেবে দেখা দিয়েছে। কারণ এসব খেলাপি ঋণের বিপরীতে ব্যাংকের আয় থেকে প্রভিশন রাখতে হচ্ছে। ফলে মূলধন ঘাটতি বেড়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় মামলা করেও দীর্ঘদিন ধরে তা ঝুলে রয়েছে বলে ওই সূত্র জানিয়েছে।

গত সেপ্টেম্বরের তথ্য নিয়ে তৈরি করা বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, শীর্ষ ২৫ ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে মোহাম্মদ ইলিয়াস ব্রাদার্স। চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের দাদা ব্র্যান্ডের সয়াবিন তেল রিফাইনারি প্রতিষ্ঠান মোহাম্মদ ইলিয়াস ব্রাদার্সের কাছে ঋণ রয়েছে ৮৮৯ কোটি টাকা। পুরো ঋণই এখন খেলাপি। প্রতিষ্ঠানটি ১৫টি ব্যাংক থেকে এ ঋণ নিয়েছে। ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে এবি ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, সিটি ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক।

দ্বিতীয় শীর্ষ ঋণখেলাপি হলো কোয়ান্টাম পাওয়ার সিস্টেমস লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির ৭৪৪ কোটি টাকার মধ্যে ৫৫৮ কোটি টাকাই খেলাপি হয়ে পড়েছে। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে জাসমির ভেজিটেবল ওয়েল লিমিটেড। তাদের ৫৪৭ কোটি টাকার বকেয়া ঋণের পুরোটাই খেলাপি হয়ে পড়েছে।

চতুর্থ হচ্ছে সর্বোচ্চ ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠান হলমার্ক গ্রুপের ম্যাক্স স্পিনিং মিলস। সোনালী ব্যাংক থেকে প্রতিষ্ঠানটি ৫২৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে এক টাকাও পরিশোধ করেনি। পঞ্চম সর্বোচ্চ খেলাপি প্রতিষ্ঠান হলো ্েবনেটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ। তাদের বকেয়া ৫৩৩ কোটি টাকার মধ্যে ৫১৬ কোটি টাকাই খেলাপি হয়ে পড়েছে।

ষষ্ঠ সর্বোচ্চ ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠন হলো ঢাকা ট্রেডিং হাউজ। প্রতিষ্ঠানটি ছয়টি ব্যাংক থেকে ৪৮৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল। এর পুরোটাই এখন খেলাপি। পাট রফতানিকারক এ প্রতিষ্ঠানটি কমার্স ব্যাংক, বিডিবিএল, এক্সিম ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, শাহজালাল ব্যাংক এবং সাউথইস্ট ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছিল।

সপ্তম সর্বোচ্চ ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠান হলো আনোয়ারা স্পিনিং মিলস। এরা সোনালী ব্যাংক থেকে ৪৭৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা নিয়ে কানাকড়িও ফেরত দেয়নি।

অষ্টম শীর্ষ ঋণখেলাপি সিদ্দিক ট্রেডার্স ৫৯৯ কোটি টাকার মধ্যে ৪২৮ কোটি টাকাই পরিশোধ করেনি। নবম অবস্থানে ইয়াসির এন্টারপ্রাইজ ৪১৪ কোটি টাকার এক টাকাও ফেরত দেয়নি। খাতে দশম শীর্ষ ঋণখেলাপি হলো আলফা কম্পোজিট টাওয়েলস। প্রতিষ্ঠানটি ব্যাংক থেকে ৪০১ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে এক টাকাও ফেরত দেয়নি। লিজেন্ড হোল্ডিংস নামক আরেকটি প্রতিষ্ঠান ৩৪৭ কোটি টাকা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে কানাকড়িও ফেরত দেয়নি। সোনালী ব্যাংক থেকে ৩৩৯ কোটি ৩৪ লাখ টাকা নিয়ে এক টাকাও পরিশোধ না করা হলমার্ক ফ্যাশন লিমিটেড দ্বাদশ শীর্ষ ঋণখেলাপি। এ ছাড়া ম্যাক ইন্টারন্যাশনাল ৩৩৮ কোটি টাকা, মুন্নু ফেব্রিক্স ৩৩৮ কোটি টাকা, ফেয়ার ট্রেড ফেব্রিক্স ৩২২ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে কানাকড়িও ফেরত দেয়নি।
শীর্ষ ঋণখেলাপির তালিকায় ১৬তম অবস্থানে রয়েছে, শাহারিশ কম্পোজিট টাওয়েল লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি জনতা ব্যাংক থেকে ৩১৩ কোটি টাকা নিয়ে পরিশোধ করেছে মাত্র চার লাখ টাকা।

১৭তম অবস্থানে নূরজাহান সুপার ওয়েল ৩০৪ কোটি টাকা, ১৮তম অবস্থানে কেয়া ইয়ার্ন প্রসেসিং ২৭৩ কোটি টাকা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে এক টাকাও ফেরত দেয়নি।

১৯তম অবস্থানে সালেহ কার্পেট মিলস লিমিটেড অগ্রণী, বিডিবিএল, জনতা ও সোনালী ব্যাংক থেকে ২৮৭ কোটি এক লাখ টাকা ঋণ নিয়ে পুরোটাই খেলাপি হয়েছে।

এ ছাড়া ফেয়ার ইয়ার্ন প্রসেসিং ২৭৩ কোটি টাকা এবং এক কে স্টিল ২৭১ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে এক টাকাও ফেরত না দিয়ে ব্যাংকের ঋণখেলাপির তালিকায় ২০ ও ২১তম অবস্থানে নাম লেখিয়েছে। ২৩তম অবস্থানে থাকা চৌধুরী নিট ওয়ার্স ২৭০ কোটি টাকা, হেল্পলাইন রিসোর্সেস ২৫৮ কোটি টাকা, ২৪তম অবস্থানে সিক্স সিজনস্ অ্যাপার্টমেন্ট ২৫৪ কোটি টাকা এবং ২৫তম অবস্থানে থাকা বিসমিল্লাহ টাওয়ায়েলস ২৪৩ কোটি টাকা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে এক টাকাও পরিশোধ করেননি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *