আবারও অস্থির হয়ে ওঠছে জ্বালানি তেলের বাজার

Slider সারাবিশ্ব


রাশিয়ার তেল রফতানির ওপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নিষেধাজ্ঞার জেরে বিশ্বে বাড়তে শুরু করেছে তেলের দাম। প্রতি ব্যারেল দেড়শ ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে এখন। বিকল্প উৎস নিশ্চিত না করে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলে ইউরোপকে ব্যাপক জ্বালানি সংকটের মুখোমুখি হতে হবে। এতে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা ও মূল্যস্ফীতি সৃষ্টি হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

প্রতিদিনই বাড়ছে তেলের দাম। মঙ্গলবার (৩১ মে) আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত ব্রেন্টক্রুডের দাম ওঠে যায় প্রতি ব্যারেল ১২৩ ডলারে। ব্রেন্ট ক্রুডের পাশাপাশি বেড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) দামও। মঙ্গলবার (৩১ মে) ডব্লিউটিএ প্রতি ব্যারেল বিক্রি হয় ১১৮ ডলারে।

এর আগেও রাশিয়ার ওপর ৫ দফা অবরোধ আরোপ করেছিল ইইউ। তবে সবশেষ দফাকে কঠোরতম হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে। এই নিষেধাজ্ঞায় সমুদ্রপথ ও পাইপলাইনে রাশিয়া থেকে ইইউভুক্ত দেশগুলোতে সব ধরনের তেল আমদানি বন্ধের কথা বলা হয়েছে। এটি কার্যকর হলে ২০২২ সালের মধ্যেই ইউরোপে বন্ধ হয়ে যাবে রাশিয়ার প্রায় সব ধরনের তেল রফতানি।

প্রতিদিন রাশিয়া থেকে ৪৫ লাখ ব্যারেল তেল আমদানি করে ইউরোপ যা তাদের মোট চাহিদার এক তৃতীয়াংশ। ইউরোপের ডিজেল সরবরাহের অর্ধেকই আসে রাশিয়া থেকে। মহাদেশটির অধিকাংশ তেল শোধনাগারই রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলের ওপর নির্ভরশীল। সব মিলিয়ে প্রতিদিন ইউরোপের বাজারে ১ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের তেল রফতানি করে থাকে মস্কো।

এ পরিস্থিতিতে ইউরোপে রাশিয়ার তেলের বিকল্প নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। রাশিয়ার তেলের বিকল্প জোগান দেয়া সম্ভব হবে না বলে ইতোমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে বিশ্বের তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর জোট ওপেক ও ওপেক প্লাস। বিকল্প উৎস নিশ্চিত না করে এভাবে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হলে ইউরোপকে ব্যাপক জ্বালানি সংকটের মুখোমুখি হতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। যার প্রভাবে সেখানে দেখা দিতে পারে ব্যাপক অর্থনৈতিক মন্দা ও মুদ্রাস্ফীতি।

তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১৫০ ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংক অব আমেরিকা গ্লোবাল রিসার্চ। বিশ্বে এ মুহূর্তে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের মজুত সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে উল্লেখ করে প্রতিষ্ঠানটি জানায়, এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলে বিশ্বে ৮০-এর দশকের মতো জ্বালানি সংকট দেখা দিতে পারে। প্রতিদিন বিশ্ববাজারে ৭০ লাখ ব্যারেল তেল রফতানি করে রাশিয়া। এ তেল থেকে বিশ্ববাজারকে বঞ্চিত করার ইউরোপীয়দের এ প্রচেষ্টায় ক্ষতির শিকার হবে বিশ্বের প্রায় সব দেশই।

এদিকে মস্কোর বিরুদ্ধে ইউরোপের এই নিষেধাজ্ঞায় উভয় পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক থিংকট্যাংক কার্নেগি এনডোমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস। তবে রাজনৈতিকভাবে রাশিয়ার চেয়ে ইউরোপের ক্ষতি বেশি হবে বলে জানিয়েছে তারা।

সূত্র: রয়টার্স, বিবিসি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *