বাংলাদেশের অবস্থাও শ্রীলঙ্কার মতো হতে পারে

Slider রাজনীতি


চরম অর্থনৈতিক সংকটে থাকা শ্রীলঙ্কার মতো অবস্থায় বাংলাদেশও পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদের বিরোধী দলীয় উপনেতা জি এম কাদের।

বুধবার একাদশ জাতীয় সংসদের সপ্তদশ অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে দ্রব্যমূল্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশের পাশাপাশি তিনি এ আশঙ্কা প্রকাশ করেন। এ সময় জি এম কাদের বলেন, আমরা গর্ব করি মাথাপিছু আয় বেড়েছে, জিডিপির প্রবৃদ্ধি ভালো, ইত্যাদি ইত্যাদি। শ্রীলঙ্কার ঘটনাগুলো আমাদের উদ্বিগ্ন করছে। কারণ এদেরও একই ঘটনা। দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে অগ্রসরমান দেশ ছিল শ্রীলঙ্কা। হঠাৎ অর্থনীতিতে ধ্বস নেমে গেল। এদের প্রধান দুটি খাত ছিল- পর্যটন আর কৃষি।

করোনার কারণে পর্যটন গেল আর কৃষিতে ভুল সিদ্ধান্ত নিলো। বড় ধরনের প্রডাকশন লস হলো। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়েছিল উন্নয়নের নামে। ঋণের ভারে বসে পড়েছে। শোধ করতে পারছে না। জাপা চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের প্রধান তিনটি খাত- রেমিট্যান্স, পোশাক আর কৃষি। এখানে রিস্ক ফ্যাক্টর আছে। আবহাওয়া ভালো না থাকলে কৃষিতে সমস্যা হয়। মধ্য আয়ের দেশ হওয়ার কারণে অনেকে এখন শুল্ক সুবিধা নাও দিতে পারে। প্রবাসী আয় যেকোনো সময় যদি কমে যায়, তখন অর্থনীতি ধাক্কা খেতে পারে। যে ঋণ নিচ্ছি, সেটার ভার বইতে পারব কি না তা নিয়ে সন্দেহ আছে। বিরোধী দলীয় উপনেতা বলেন, তিন লাখ কোটি টাকার ঋণ আমাদের ঘাড়ে আছে। এগুলো শোধ করতে হবে। ওই তিনটি খাত শক্ত পায়ে দাঁড়িয়ে আছে, সেটা থাকবে কি না? রিজার্ভের ওপর চাপ পড়ছে। আমাদের অবস্থা শ্রীলঙ্কার মতো হবে না সেটা জোর দিয়ে বলা যায় না। ক্রমাগত উন্নতিতে এক যুগ আগে যে শ্রীলঙ্কা উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে ওঠার পথে ছিল, সেই শ্রীলঙ্কা এখন দেনার দায়ে জর্জরিত হয়ে দেউলিয়া হওয়ার পথে। জ্বালানি তেল কিনতে না পারায় দেশটিতে এখন বিদ্যুৎ মিলছে না, গাড়ি চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে, কাগজের অভাবে পরীক্ষা নেয়া যাচ্ছে না শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, দ্রব্যমূল্য আকাশচুম্বী। এই পরিস্থিতিতে জনবিক্ষোভে সরকারও পতনের দ্বারপ্রান্তে। সংকটে পড়া দক্ষিণ এশিয়ার দেশটি বাংলাদেশ থেকেও ঋণ চেয়েছে। কিন্তু সার্বিক পরিস্থিতি দেখে তাদের ঋণ না দেয়ার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধগতির সমালোচনা করে জি এম কাদের বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধগতি সারা দেশে একটা বড় ধরনের আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে এটা নিয়ে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা দেখা যাচ্ছে। যখন এটা নিয়ে সংসদে আলাপ হয়, দেখা যায় সরকারের মন্ত্রী স্বীকার করতে চান না। পরবর্তীতে স্বীকার করার সময় বললেন, ‘কোনো অসুবিধা নেই। সকলের আয় বেড়েছে। মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে না। বাণিজ্যমন্ত্রী বললেন, বিদেশে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে এখানেও বাড়বে। এটাতে করার কিছু নেই। জাপা চেয়ারম্যান বলেন,গড় আয় বাড়লেও আয়ের বৈষম্য বাড়ছে। বেকারত্বের সংখ্যা বাড়ছে। মধ্যবিত্ত, নি¤œবিত্ত ও হতদরিদ্র মানুষ ভালো নেই। বিবিএসের তথ্য মতে, গত এক দশকে মজুরি বেড়েছে ৮১ শতাংশ। জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে ৮৪ টাকা। সরকারি হিসেবে মজুরি বৃদ্ধির চেয়ে দাম বাড়ার হার বেশি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *