‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে ইসলামী চেতনার সংঘাত নেই’

রাজনীতি

বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ও ঢাকা মহানগরীর আমীর মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী বলেছেন, স্বাধীনতা মহান আল্লাহ তাআলার অনেক বড় নিয়ামত। এটা একক কারোর অর্জন নয়। আমাদেরকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরতে কবে।

বৃহস্পতিবার বিকেলে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ঢাকা মহানগরীর কদমতলী থানা শাখা আয়োজিত মহান স্বাধীনতার তাৎপর্য শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। দলের থানা শাখা আমীর মাওলানা হাফেজ সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন দলের কেন্দ্রীয় সহকারী মহাসচিব মাওলানা ফিরোজ আশরাফী, মহানগরীর নায়েবে আমির মাওলানা মাহবুবুর রহমান । বক্তব্য রাখেন মাওলানা এহতেশামুল হক, মুফতী আবু বকর, প্রিন্সিপাল শফিকুল ইসলাম, মুহাম্মাদ আবদুর রব, হাফেজ রেজাউল করিম, আমিনুল ইসলাম,মুফতী আদনান, মুফতী মাসুদুর রহমান ইব্রাহিমী প্রমুখ।

মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী আরো বলেন, ব্রিটিশদের দখলদারিত্ব থেকে মুক্ত হয়ে ১৯৪৭ সালে পূর্ব বাংলার জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা করেছিল ইসলাম ও মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষার জন্য। কিন্তু পাকিস্তানী শাসককরা তাদের অঙ্গীকার রক্ষা ও নীতি-আদর্শে অটল থাকেনি। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার চর্চা সেখানে হয়নি। নেয়া হয়নি ইসলামী আদর্শনির্ভর ‘কল্যাণরাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগও।
আঞ্চলিকতা-স্বজনপ্রীতি, জুলুম-অত্যাচার ও স্বৈরাচারী নীতির কারনে পাকিস্তানে চরম সংকট সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশের মুসলমানরা ১৯৪৭ থেকে ১৯৭০ পর্যন্ত বঞ্চিত হতে থাকে নিজেদের জীবনযাপনের সর্বপ্রকার মৌলিক অধিকার থেকে। সত্তরের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন নিরঙ্কুশ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হলেন। কিন্তু পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠি তার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেনি। পাকসেনাচক্র হামলে পড়ল বাংলাদেশের জনগণের ওপর। ২৫ মার্চের ভয়ঙ্কর কাল রাতের সৃষ্টি করল। তখন বাংলাদেশের জনগণের স্বাধীনতা অর্জনের বিকল্প ছিলনা। বাঙালি জাতি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে কাঙ্খিত স্বাধীনতার সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েন।

৯ মাসের দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের পর স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। বাঙালি মুসলমানরা মুক্তি পায় পাকিস্তানি দুঃশাসন থেকে।

তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় হাফেজ্জী হুজুরকে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে, এক দিকে ইসলামের স্বার্থ রক্ষায় প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তান, আরেক দিকে বাঙালিদের মুক্তিযুদ্ধ; আমরা কোন দিকে যাবো? তখন হাফেজ্জী হুজুর রহ: বলেন, পাকিস্তানিরা বাঙালিদের ওপর জুলুম-অত্যাচার করেছে। তারা জালিম। জুলুম আর ইসলাম কখনো এক হতে পারে না। এটা ইসলামের সাথে কুফরের যুদ্ধ নয়; বরং মুক্তিযুদ্ধ হলো জালিমের বিরুদ্ধে মজলুমের লড়াই। ৭১এর মুক্তিযুদ্ধ ইসলামের বিরুদ্ধে ছিল না।মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে ইসলামী চেতনার কোনো সঙ্ঘাত নেই। যারা এ নিয়ে সঙ্ঘাত সৃষ্টি করতে চায়, তারা দেশ ও জাতির দুশমন।

তিনি আরো বলেন, মহান স্বাধীনতার সুফল সুরক্ষায় সরকারকে স্বার্থন্বেষী মহলের লুটপাট, দুর্নীতি ও বিদেশে সম্পদ পাচারের গলিপথ বন্ধ করতে হবে। যারা দেশের সম্পদ লোপাট করে সম্পদের পাহাড় গড়ে, তারা দেশপ্রেমিক হতে পারে না।

মাওলানা ফিরোজ আশরাফী বলেন, ৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হয় ‘ইনশাআল্লাহ’র মাধ্যমে। মুক্তিযোদ্ধারা বিসমিল্লাহ এবং লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু বলে অস্ত্র তুলে ধরেন। আর আল্লাহর প্রতি শোকরিয়া আদায় এবং একটি সুখী সমৃদ্ধ রাষ্ট্র গঠনে আল্লাহর সাহায্য কামনার মাধ্যমে শেষ করা হয়। বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধ ও ধর্মকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র চলছে। অর্জিত স্বাধীনতা রক্ষায় সব ষড়যন্ত্র রুখে দাঁড়াতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *