বাংলাদেশ সফর শেষ করেছেন মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের রাজনীতি বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড। গত সোমবার দুপুরের ফ্লাইটে ঢাকা ছেড়ে গেছেন তিনি। দক্ষিণ এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ আরও দুটি দেশ ভারত এবং শ্রীলঙ্কা সফর করে ফাইনালি ২৪শে মার্চ ওয়াশিংটনে ফিরবেন তিনি। ঢাকায় প্রায় ৩ দিন কাটিয়ে গেছেন স্টেট ডিপার্টমেন্টের চতুর্থ শীর্ষ (ফোর্থ র্যাঙ্কিং) কর্মকর্তা নুল্যান্ড। বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বহুমুখী সম্পর্কের প্রায় সব বিষয় নিয়ে আনুষ্ঠানিক এবং বিস্তৃত আলোচনা করে গেছেন তিনি। কথা হয়েছে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ইন্দো-প্যাসিফিক, ক্লাইমেট চেঞ্জ এবং রোহিঙ্গা সংকটের মতো স্পর্শকাতর ইস্যু নিয়েও। বৈঠক করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী, সচিব, সিভিল সোসাইটি, কূটনীতিক, ব্যবসায়ী-বিনিয়োগকারী এবং তরুণ উদ্যোক্তাদের সঙ্গে। ঢাকায় নবনিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসসহ দূতাবাস কর্মকর্তাদের সঙ্গে হয়েছে সিরিজ বৈঠক ও মতবিনিময়।
সেখানে আগামী ৫০ বছরে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অংশীদারিত্বমূলক সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা কিছুটা শেয়ার করেছেন তিনি। কথা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের ক্রুশিয়াল ৩ ইস্যু সার্বজনীন গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং শ্রম অধিকার সমুন্নত রাখার উপায় নিয়েও। কূটনৈতিক সূত্র বলছে, মার্কিন দূতাবাসের চাওয়া ছিল স্টেট ডিপার্টমেন্টের পলিটিকাল সেকশনের সর্বোচ্চ ওই কর্মকর্তা যেন বাংলাদেশ সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে সাক্ষাৎ পান। সে মতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অ্যাপয়েন্টমেন্ট চাওয়া এবং প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পারসু করা হয়েছিল। দূতাবাস কর্মকর্তারা অপেক্ষায় ছিলেন পার্টনারশিপ ডায়ালগের আগে-পরে কিংবা ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার মুহূর্তে হলেও সরকার প্রধানের সাক্ষাৎ পাবেন জ্যেষ্ঠ ওই কূটনীতিক। কিন্তু না, শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফে প্রধানমন্ত্রীর ব্যস্ত কর্মসূচি বিশেষত নুল্যান্ডের সফরের সমাপনী দিনে বাংলাদেশের উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প ১৩২০ মেগাওয়াটের পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উদ্বোধনীতে প্রধানমন্ত্রীর সশরীরে অংশগ্রহণের বিষয়টি জানানো হয়েছে। সরকার প্রধানের পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি তথা টাইমিং জটিলতা বিষয়ে দূতাবাস সচেতন দাবি করে সেগুনবাগিচার দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, অনেকে ধারণা করতে পারেন হয়তো মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় ক্ষুব্ধ বলে সফরটিকে ডাউন প্লে করা হয়েছে, কিন্তু বাস্তবে তা নয়। যথাযথ মর্যাদা এবং আন্তরিকতার সঙ্গে মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারিকে বাংলাদেশে অভ্যর্থনা এবং বিদায় জানানো হয়েছে। পররাষ্ট্র সচিব নিজে বিমানবন্দরে উপস্থিত থেকে তাকে রিসিভ করেছেন এবং মন্ত্রণালয়ের একজন সচিব তাকে বিমানবন্দরে গিয়ে সি-অফ করেছেন। তাছাড়া অত্যন্ত আন্তরিক পরিবেশে আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিক আলোচনার মধ্যদিয়ে তার সফরটির সফল পরিসমাপ্তি ঘটেছে। প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ না পেলেও তিনি যে অখুশি নন, তা তার নিজের টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে প্রচারিত ঢাকা সফর বিষয়ক সমাপনী টুইট বার্তায় প্রকাশ করেছেন বলে দাবি করেন ওই কর্মকর্তা। বলেন, তিনি পেশাদার কূটনৈতিক, অখুশি হলেও তা প্রকাশ করবেন না মানি, তবে বাস্তবতাও তো অস্বীকারের উপায় নেই। অতীতে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের ডেপুটি সেক্রেটারি এমনকি এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারিরা সরকার প্রধানের দেখা পেয়েছেন। কিন্তু সময়ের তাড়ায় এবার তা সম্ভব হয়নি, এখানে অন্য কিছু ভাবার কোনো অবকাশ আছে বলে মনে হয় না।