রাস্তায় লাশের সারি, সমাধিক্ষেত্রে স্থান নেই

Slider সারাবিশ্ব

মারিউপোলের রাস্তায় লাশের সারি। সমাধিক্ষেত্রে স্থান সংকুলান হচ্ছে না। তাই গণকবর দেয়া হচ্ছে নিহতদের লাশ। এক একটি গণকবরে ৩৩টি পর্যন্ত লাশ। এমনটা জানিয়ে ইউক্রেনের একজন এমপি দমিত্র গুরিন বিশ্ববাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন- এরই মধ্যে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। এই কথাটি স্বীকার করুন। ওদিকে যুদ্ধ শুরুর পর প্রথমবার মুখ খুলেছেন ইউক্রেনের ফার্স্টলেডি ওলেনা জেলেনস্কি (৪৪)। ইউক্রেনে রাশিয়া গণহত্যা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।

নো-ফ্লাই জোন ঘোষণার জন্য পশ্চিমাদের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি ও তার স্বামী, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি। রাশিয়ার তেলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের প্রধান জোসেফ বোরেল বলেছেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও নিষেধাজ্ঞা দিতে যাচ্ছেন তারা। চেরনোবিল পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি বেড়েছে। এর মধ্যেই হামলা তীব্র থেকে তীব্র করেছে রাশিয়া। অন্যদিকে ৬টি মানবিক করিডোরের মাধ্যমে গতকালও উদ্ধার তৎপরতা চলছিল। এর আগে তিন দফা শান্তি সংলাপ হয়েছে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে। এতে কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে বলে দাবি করেছে মস্কো। যুদ্ধে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ২০ লাখ মানুষ ইউক্রেন থেকে পালিয়ে গেছেন।

নো ফ্লাই জোন ঘোষণার দাবি: মানবিক বিপর্যয় এড়াতে নো ফ্লাই জোন ঘোষণা করা জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি বলেছেন, তার দেশকে রক্ষা করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি নো-ফ্লাই জোন ঘোষণা করতে একমত না হয়, তাহলে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের জন্য দায়ী থাকবে তারা। টেলিভিশনে প্রচারিত নিয়মিত ভাষণে তিনি বলেন, প্রায় দুই সপ্তাহ হলো রাশিয়া আগ্রাসন চালিয়েছে। এ সময়ে তার দেশ সর্বোচ্চ ঝুঁকি মোকাবিলা করছে। তাই বলে ইউক্রেনের মানুষ কখনো যুদ্ধ ত্যাগ করবে না। জেলেনস্কি বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে, বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে, আমাদের শহরের বিরুদ্ধে, আমাদের অবকাঠামোর বিরুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্র, যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার ব্যবহার করে হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া। এর জবাব দেয়া বিশ্বের জন্য এক মানবিক দায়িত্ব। জেলেনস্কি নো ফ্লাই জোন ঘোষণার আহ্বান জানালেও যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন ও তাদের পশ্চিমা মিত্ররা এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে।

আইসিজের শুনানি বর্জন: রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেছেন, এ সপ্তাহে জাতিসংঘের ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) ইউক্রেন যে মামলা করেছে তার শুনানি বর্জন করেছে মস্কো। কারণ, এটা এক অযৌক্তিক মামলা। সোমবার এই শুনানি হয়। এতে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ এই আদালতের প্রতি অনুরোধ জানায় ইউক্রেন। বলে, তারা যেন ইউক্রেনে আগ্রাসন বন্ধ করতে রাশিয়াকে নির্দেশ দেয়। ইউক্রেনের আরও দাবি, মিথ্যা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে মিথ্যাভাবে আগ্রাসনের ন্যায্যতা দেয়ার চেষ্টা করছে। নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত আইসিজে বলেছে, তারা এই মামলায় যত দ্রুত সম্ভব রায় দেবে। তবে আদালত যে রায়ই দিক না কেন, তা রাশিয়া মেনে চলবে বলে মনে হয় না।

চেরনোবিলে তেজস্ক্রিয়তার ঝুঁকি: চেরনোবিল পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করার পর সেখান থেকে তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি বেড়েছে। ইউক্রেনের রাষ্ট্র পরিচালিত এই পারমাণবিক কোম্পানি সতর্ক করেছে যে, দেশটির বর্তমান অকার্যকর চেরনোবিল পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে তেজস্ক্রিয় পদার্থ অবমুক্ত করা হতে পারে। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার পর এই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রকে ঠাণ্ডা রাখা যাবে না। ওই এলাকায় এখনো যুদ্ধ চলছে। এ কারণে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিদ্যুৎ সংযোগ মেরামত করে আবার সংযোগ দেয়ার কাজ চালানো সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছে এনার্গোঅ্যাটম। ইউক্রেনের জ্বালানি বিষয়ক মন্ত্রী হারম্যান হালুশ্চেঙ্কো দেশের কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেছেন, চেরনোবিল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বর্তমানে তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা কতো তা কর্তৃপক্ষ জানে না। রাশিয়ার সেনারা ওই বিদ্যুৎকেন্দ্র দখলে নেয়ার পর এ বিষয়ে কোনো তথ্য পাচ্ছে না তারা। জাপোরিজিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে যা ঘটছে তাতে ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণ নেই। গত সপ্তাহে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র দখল করে নেয় রাশিয়া।

আরও নিষেধাজ্ঞা: ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেল বলেছেন, নতুন করে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সরকারগুলো। পাশাপাশি রাশিয়ার প্রায় ১০০ ব্যক্তির সম্পদ জব্দ করা হবে। স্ট্র্যাসবার্গে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টে তিনি বলেন, নতুন নিষেধাজ্ঞার প্যাকেজ নিয়ে কাজ করছে সদস্য দেশগুলো। তবে গতকাল দিনের শেষ নাগাদ একটি চুক্তি হওয়ার বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন বোরেল।

ওডেসার জন্য যুদ্ধ: দুই সপ্তাহ পার হয়েছে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা। বর্তমানে কিয়েভের বাহিনী ওডেসায় বড় রকমের হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। এটা এক ঐতিহাসিক বন্দর নগরী। কৃষ্ণ সাগরের তীরে অবস্থিত। যুদ্ধের আগেই এই শহরকে নিয়ন্ত্রণে রাখার লড়াই শুরু হয়েছে।

ইউক্রেনকে নিরস্ত্র করতে চায় রাশিয়া: ইউক্রেনকে নিরস্ত্রীকরণ নিশ্চিত করে লক্ষ্য অর্জন করবে মস্কো। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারভ বলেছেন, যুদ্ধের চেয়ে সংলাপকেই অগ্রাধিকার দেবে রাশিয়া। মিডিয়া ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ইউক্রেনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে তৃতীয় দফার সংলাপে কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে। কিয়েভে ক্ষমতাসীন সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার ইচ্ছা নেই ক্রেমলিনের। পরিকল্পিতভাবেই চলছে রাশিয়ার সামরিক অপারেশন।

পরস্পরবিরোধী তথ্য: ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চল লাভিভ শহর থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক নাতাশা বাটলার বলছেন, ইউক্রেনে মানবিক করিডোর ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু এই করিডোর বাস্তবায়ন সম্পর্কে প্রচুর পরস্পরবিরোধী তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। আমরা যা জানতে পেরেছি তা হলো, ইউক্রেন কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে নিশ্চিত করেছেন- সামি শহরে একটি মানবিক করিডোর সৃষ্টি করা হয়েছে। মোট ৬টি এমন করিডোর সৃষ্টি করা হলেও দেশের বাকি স্থানগুলোর পরিস্থিতি কী সে সম্পর্কে কোনো পরিষ্কার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। আসলেই বেসামরিক লোকজনকে উদ্ধার করা হচ্ছে নাকি পরিস্থিতি অন্যকিছু তা পরিষ্কার নয়।

গণহত্যার দাবি পুতিনের: আগ্রাসনকে বৈধতা দেয়ার ক্ষেত্রে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের বিরুদ্ধে ‘গণহত্যার গন্ধ’ পাওয়ার কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, ইউক্রেন সরকারকে নিরস্ত্রীকরণ এবং নাৎসীকরণ বন্ধ করতে আগ্রাসন চালিয়েছেন তিনি। পুতিন বলেছেন, রুশভাষী দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে কিয়েভ। এই দুটি অঞ্চল একসঙ্গে ডোনবাস নামে পরিচিত।

যুদ্ধবিমান নিয়ে প্রস্তুত পোল্যান্ড: পোল্যান্ড বলেছে তারা প্রস্তুত। ইউক্রেনকে মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান সরবরাহ দিতে প্রস্তুত তারা। তবে তা করা হবে শুধু ন্যাটোর মাধ্যমে। পোলিশ সরকারের একজন উপদেষ্টা জাকুব কুমোচ সরকারি প্রচারমাধ্যম টিভিপি ইনফো’কে এসব কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ঘাঁটি থেকে এসব বিমান ইউক্রেনে যাক, এটা চায় না যুক্তরাষ্ট্র। পোল্যান্ড ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত। তবে তা হবে জোটের, ন্যাটো কাঠামোর অধীনে। এর আগে পোল্যান্ডের যুদ্ধবিমান পাঠানোর প্রস্তাব ওয়াশিংটন প্রত্যাখ্যান করে। তারপরই ওই কর্মকর্তা এসব মন্তব্য করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *