কলকাতা: দুই বাঙালি শিল্পীর প্রয়াণে গোটা পশ্চিমবঙ্গে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। স্থানীয় সময় বিকেল ৪টার কিছু পরে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, উত্তরবঙ্গ সফর বাতিল করে শ্রদ্ধা জানাতে ছুটে আসেন কলকাতা রবীন্দ্রসদনে।
প্রথমে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের নিথর দেহকে তিনি শ্রদ্ধা জানান। এরপরই রবীন্দ্রসদনে একতারা মঞ্চে বাপ্পি লাহিড়ীর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান।
দল-মত নির্বিশেষে সকল রাজনৈতিক দল বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) শ্রদ্ধা জানান দুই কিংবদন্তি সংগীতশিল্পীকে। বামনেতা বিমান বসু বলেন, ‘এক স্বর্ণযুগের পতন ঘটলো। গানের মধ্য দিয়ে তাদের স্মৃতি আমাদের সবার মনে ছিল আছে এবং থাকবে। এই দুই শিল্পীর সৃষ্টি থেকে গেল, চলে গেলেন স্রষ্টারা। ’
শ্রদ্ধা জানান কলকাতা উপ-দূতাবাসের কর্মকর্তারা। উপ-দূতাবাস প্রধান তৌফিক হাসান জানান, ‘কয়েকদিনের ব্যবধানে পরপর তিন গুণী শিল্পীকে আমরা হারালাম। লতা মঙ্গেশকরের পর সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় এবং বাপ্পি লাহিড়ী। গানের জগতে এই তিন জনেরই অসামান্য অবদান ছিল। তবে আমরা বিশেষ করে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের যদি কথা বলি, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে অনেক গান তিনি গেয়েছেন যা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের যোদ্ধাদের প্রেরণা দিয়েছিল। বঙ্গবন্ধু যখন স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করলেন, তখনও বঙ্গবন্ধুকে উদ্ধৃতি করে তিনি এক বিখ্যাত গান গেয়েছিলেন। এই যে তার বাংলাদেশের প্রতি একটা টান, এটা এক কথায় বলে বোঝানো যাবে না। পশ্চিমবাংলার পাশাপাশি আজ বাংলাদেশও শোকাহত। ’
শ্রদ্ধা জানান বাংলার সংগীত শিল্প, সুরকার শিল্পী, বিশিষ্টজনের- সহ সাধারণ নাগরিকরা। এরপর সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের নিথর দেহ, শববাহী গাড়িতে তোলা হয়। রাজপথে পা মেলান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়সহ বিশিষ্টজনেরা। তিন কিলোমিটার পথ পায়ে হেটে যাবেন বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
শিল্পীর শববাহী গাড়ি যখন রাজপথ ধরেই এগোচ্ছে তখন রাজপথে দুই প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা তার গুণমুগ্ধরা মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে শিল্পীকে শেষ শ্রদ্ধা জানান।
এরপর সন্ধ্যা ৬টার কিছু পরে কালীঘাটের কেওড়াতলা মহাশ্মশানে রাজ্য সরকারের তত্ত্বাবধানে পূর্ণ মর্যাদা শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। শিল্পীর দেহ যখন বৈদ্যুতিক চিতায় দগ্ধ হচ্ছেন, তখন মঞ্চ থেকে ভেসে আসছে ‘আমাদের ছুটি ছুটি’ গান, অর্থাৎ এই গানের মধ্য দিয়ে বঙ্গবাসীর থেকে শেষ বিদায় নিলেন কিংবদন্তী সঙ্গীতশিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। মিলিয়ে গেলেন পঞ্চভূতে। ’