ফেনীতে ১৪৪ ধারা ভেঙে বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশ

Slider রাজনীতি

ফেনী: ফেনী শহরে প্রশাসনের ১৪৪ ধারা ভেঙে দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে বুধবার (২৯ ডিসেম্বর) দুপুরে শহরের ওয়াপদা মাঠে বিএনপির মহাসমাবেশস্থলে মঙ্গলবার (২৮ ডিসেম্বর) রাতে হঠাৎ পাল্টা কর্মীসমাবেশের ডাক দেয় যুবলীগ। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসন ওয়াপদা মাঠসহ সারা শহরে ১৪৪ ধারা জারি করে।

বুধবার সকালে শহরের তাকিয়া রোডে বিএনপি নেতাকর্মীরা জড়ো হয়। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) থোয়াই অং প্রু মারমার নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুর নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতারা সড়কে অবস্থান নিলে নেতাকর্মীরা পুনরায় জড়ো হয়ে মুহুর্মুহু স্লোগান দিতে থাকে। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়। পরে নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

এসময় জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলালের সঞ্চালনায় সংক্ষিপ্ত সভায় মজনু ছাড়াও বক্তব্য রাখেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক জয়নাল আবদীন ভিপি, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হারুনুর রশিদ, সহ-দফতর সম্পাদক বেলাল আহমদ প্রমুখ।

রফিকুল আলম মজনু তার বক্তব্যে বলেন, ‘ফেনী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জেলা। এখানে কোনো ১৪৪ ধারা মানি না, মানা হবে না। তাই ১৪৪ ধারা ভঙ করে বিক্ষোভ মিছিল হচ্ছে। আজ আমাদের বাধা দেয়া হয়েছে। এখন থেকে খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে ফেনীর প্রত্যেক উপজেলা, ইউনিয়নে মিছিল করা হবে।’

সরকার পতন আন্দোলন ত্বরান্বিত হচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমরা রাজনীতি করছি, চুরি করতে আসি নাই। যখন যেটা মন চাইবে তখন সেটা হবে না। ইতোমধ্যে ঢাকা মহানগরীতে সরকার পতন আন্দোলনের জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। ফেনীতেও ঐক্যবদ্ধভাবে ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন ত্বরান্বিত হবে।’

বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক জয়নাল আবদীন ভিপি বলেন, ‘রক্ত দিয়ে যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেছিলাম। আজ আমাদের রাস্তায় দাঁড়াতে দিচ্ছে না। আমরা প্রতিজ্ঞা করছি সেদিন বেশি দূরে নয়, যেদিন জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটানো হবে।’

হারুনুর রশিদ বলেন, ‘মঙ্গলবার আমাদের সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল। আওয়ামী লীগ নেতা জয়নাল হাজারীর হাতে আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মী খুন হওয়া সত্ত্বেও আমরা মানবতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত দেখিয়ে তার জানাজার প্রতি সম্মান দেখিয়েছিলাম। পরিতাপের বিষয় মঙ্গলবার রাতে তারা গায়ে পড়ে ঝগড়া করার মতো করে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ বিনষ্ট করতে পাল্টা সমাবেশ ডেকে ১৪৪ ধারা জারি করেছে।’

বেলাল আহমেদ বলেছেন, ‘সাবেক সংসদ সদস্য জয়নাল হাজারীর প্রতি সম্মানে রাজনৈতিক শিষ্টাচার দেখিয়ে আমরা মহাসমাবেশ স্থগিত করেছিলাম। কিন্তু আমাদের মহাসমাবেশকে বানচাল করতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।’

এর আগে সকাল ১০টার দিকে শহরের ইসলামপুর রোডের অস্থায়ী দলীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হলে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে নেতাকর্মীদের সাথে বাগ্বিতণ্ডা ও হাতাহাতি হয়।

ফেনী মডেল থানার ওসি মো: নিজাম উদ্দিন জানান, ওয়াপদা মাঠসহ আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে এবং মঙ্গলবার রাত থেকে শহরজুড়ে পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে।

এদিকে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল ও মহিলা দল পৃথক বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলে জেলা যুবদল সভাপতি জাকির হোসেন জসিম, সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খন্দকার, সাংগঠনিক সম্পাদক নঈম উল্যাহ চৌধুরী বরাত, মহিলা দল সভাপতি জুলেখা আক্তার ডেইজী, সাংগঠনিক সম্পাদক জাহানারা আক্তার, স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি সাইদুর রহমান জুয়েল, সাধারণ সম্পাদক এস এম কায়সার এলিন, ছাত্রদল সভাপতি সালাহউদ্দিন মামুন ও সাধারণ সম্পাদ মোরশেদ আলম মিলন মিছিলে অংশ নেন।

কর্মীসমাবেশ ডেকে বের হয়নি যুবলীগ
বিএনপির মহাসমাবেশ স্থলে পাল্টা কর্মীসমাবেশ ডেকে বুধবার শহরে বের হয়নি যুবলীগ নেতাকর্মীরা। সকাল থেকে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা ১৪৪ ধারা ভঙ করে দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল করলেও যুবলীগ নেতাকর্মীদের মাঠে দেখা যায়নি। তবে জেলা যুবলীগ সভাপতি দিদারুল কবির রতনের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা পৌরসভায় দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান করে।

দলীয় সূত্র বলছে, প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করায় আইন মেনে যুবলীগ কর্মীরা রাস্তায় বের হয়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *